× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১৪ দলের ভবিষ্যৎ কী

দীপক দেব

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৯ এএম

১৪ দলের ভবিষ্যৎ কী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে। নির্বাচনে আসন ছাড় ও পরবর্তী সময়ে শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের পাশে না থাকায় আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শরিক দলগুলো। বিষয়গুলো নিয়ে শরিক দলের নেতারা প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু না করলেও নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন। এক্ষেত্রে শরিকদের এমন পরিণতির জন্য শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, ১৪ দলের কিছু কিছু দলের দিকেও অভিযোগের তীর জোটের কোনো কোনো নেতার। তাদের দাবি, শরিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় থাকলে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারত না। কেন্দ্র থেকে আসন ছাড় দেওয়া হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীদের পাশে ছিল না। কেন্দ্র থেকে সেটা নিবৃত্ত না করার কারণে তারা আরও উৎসাহিত হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের বাইরে সাংগঠনিক সামর্থ্যের দিক থেকে এগিয়ে থাকা দলগুলো সবসময় নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন অন্যদের পাশাপাশি সেই দলগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন তারা সংরক্ষিত নারী আসন ও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার প্রত্যাশায় প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। তাদের প্রত্যাশা পূরণ না হলেই আওয়ামী লীগের সমালোচনা শুরু করবে। এই অবস্থায় শরিক দলগুলো বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের মধ্যে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। জোটের ঐক্য অটুট রাখা নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত না থাকলেও দলীয় ও জোটগতভাবে বসে মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চায় তারা। 

এসব বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করবে কি না বা বৈঠকে বসার চিন্তা করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক বা এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন আমাদের জোটের সমন্বয়ক মুখপাত্র আমির হোসেন আমু ভাই। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।

দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রত্যাশা বেশি থাকলেও তাতে সাড়া না দিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এমনকি অতীতে জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হওয়া কাউকে কাউকেও এবার আসন ছাড় দেওয়া হয়নি। শরিক ১৪ দলের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে তিনটি এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে একটি আসনে ছাড় দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা থাকলেও তাদেরকে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। এই ছয়জন নৌকা মার্কা নিয়ে ভোট করলেও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন ছাড়া বাকি চারজন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। পরাজিতদের মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন রয়েছেন। এছাড়া বিগত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হওয়া জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে এবার আসনে ছাড় দেওয়া হয়নি।

২০০৫ সালে ২৩ দফার ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলোকে নিয়ে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় জোটের কার্যক্রম। ২০০৮ সালের পর থেকে গত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে শরিকরা জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে ১৪ দলীয় জোটের অংশীদারত্ব ছিল। সেই সময় জোটের অন্তত একজন টেকনোক্র্যাটসহ চারজন নেতা মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোট শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। নির্বাচনে শরিকদের জন্য আসন বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্ব হারায় আওয়ামী লীগের কাছে। সেই ধারাবাহিকতা এবারও অব্যাহত রাখে আওয়ামী লীগ। কেউ কেউ এমনও বলছেনÑ যে আদর্শ নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল, সেই আদর্শের আর প্রয়োজন বোধ করছে না আওয়ামী লীগ। যার কারণে রাজনৈতিকভাবে তাদের গুরুত্ব হারিয়েছে জোটের শরিক দলগুলো। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এমন মনোভাবের কারণে এবার আসন ছাড় নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের অন্তত ছয় মাস আগে থেকেই ১৪ দলীয় জোটের একটি দলের প্রধান নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসতে বাকি দলগুলোকে বারবার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে আলোচনায় বসার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেননি জোটের শীর্ষ নেতারা। বিশেষ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা নিজেদের প্রত্যাশীত আসন ছাড়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকার কারণে সেটা হয়নি। এমনকি ওই নেতার এমন মনোভাবের কথা আওয়ামী লীগের কাছে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছিল। অন্য অনেক কারণের পাশাপাশি সেই নেতাকে জোটের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে এটি কাজ করেছে বলেও অনেকেই মনে করেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের জোটের কিছু কিছু দলের শীর্ষ নেতারা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়ে বেশি সোচ্চার। নিজেরা সুবিধা পেয়ে যাওয়ার পরেই তারা আবার নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা জোট নিয়ে সেভাবে ভাবেন না। সেভাবে ভাবলে আজকে জোটের এই অবস্থা হতো না। আওয়ামী লীগও আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে বাধ্য হতো। নিজদের মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয়ের ঘাটতির সুযোগ নিয়েছে প্রধান দল আওয়ামী লীগ। 

তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কিছু কিছু দলের মধ্যে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে বের হওয়া কঠিন। বিশেষ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)Ñ এই দল দুটির অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে বেগ পেতে হবে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের। 

নির্বাচনে জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন কেউ কেউ। গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে শপথগ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাশেদ খান মেনন অভিযোগ করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের অসহযোগিতা ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে জোটের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। এই সময় তিনি নিজ দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনের উদাহরণ টেনে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করেছে।

জোট-সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি, পরে নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নিজেরা আগে আলাদা বৈঠক করবেন। সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়টি নিজেরা মূল্যায়ন করবেন আগে। এরপর ১৪ দলগতভাবেও বৈঠকে বসবেন তারা। সেখানে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। জোটের প্রার্থীদের পাশে সকল শরিক দলের উপস্থিতি কেমন ছিল, এর মধ্যে কারা কারা সহযোগিতা করেছেন আর কারা অসহযোগিতা করেছেন তার একটা মূল্যায়ন করা হবে। সামনের দিনে রাজনীতিতে জোটের গুরুত্ব এবং শরিক দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার বিষয়টিও জানতে চাওয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। 

১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আমির হোসেন আমু বলেন, নির্বাচন শেষ হয়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে মাত্র। এখনও সংসদ অধিবেশনও শুরু হয়নি। আমরা একটু সময় নিয়েই বসব। সেই বৈঠকে সব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হবে।

এসব বিষয় নিয়ে নিজ দলের অবস্থান জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমরা শিগগির দলীয়ভাবে বসে এগুলোর মূল্যায়ন করব। এরপর জোটের বৈঠকেও এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা হবে। 

অন্যদিকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যে আদর্শ নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন হয়েছিল, সেই আদর্শের প্রয়োজনীয়তা মনে হয় নেই। আর প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই জোটের প্রার্থীদের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়া খুবই দুঃখজনক। খুব শিগগির বসে এগুলো মূল্যায়ন করা হবে। 

এবারের নির্বাচনে নৌকা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এসব বিষয়ে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন শেষ করে সবে সরকার গঠন হলো। শিগগির আমরা নিজেদের দলের বৈঠক আহ্বান করে আগে দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করব, এরপরে জোটের সঙ্গে বসে পরবর্তী মূল্যায়ন হবে। 

অতীতে নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবার জোটের মনোনয়ন পাননি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে এবার জোটের আসন পাওয়া এবং পেলেও জয়ী হতে না পারার মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে যে আদর্শ নিয়ে এই জোট গঠন হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়েছে বলে আমি মনে করি। জোট নিয়ে কী হবে তা পুরোপুরি নির্ভর করছে আমাদের জোট নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা