× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রওশনের জাপায়ও ভাঙনের আলামত!

সাজ্জাদুল ইসলাম

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১১:০৭ এএম

রওশন এরশাদ। ফাইল ফটো

রওশন এরশাদ। ফাইল ফটো

রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সম্মেলনের সপ্তাহ পেরোতে-না পেরোতেই শুরু হয়েছে ‘গৃহবিবাদ’। এই বিবাদের জেরে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন নবগঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সেন্টু। একই কারণে আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করতে পারেন বলেও জানা গেছে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে। 

দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদের আচরণকে কেন্দ্র করেই মূলত নতুন জাতীয় পার্টির অন্তর্ন্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। সম্মেলনের পরদিনই সেন্টুর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান সাদ। সেই ক্ষোভ থেকে পদত্যাগ করেন সেন্টু। তবে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন জাপার অন্য নেতারা। এ ছাড়া ওই বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদও বেশ ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে গতকাল শুক্রবার শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এ নিয়ে আমি আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, সাদ এরশাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে পার্টির নেতৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেওয়া। সে কারণে পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ নিয়ে আপত্তি ছিল অনেকের। নির্বাহী চেয়ারম্যান হতে না পারায় সাদ এরশাদও ক্ষুব্ধ ছিলেন। এসব বিষয় নিয়েই গত রবিবার রওশন এরশাদের বাসায় শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও সাদ এরশাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শুধু সেন্টু নয় কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গেও তর্ক-বিতর্ক হয় সাদ এরশাদের। এর পরদিনই অর্থাৎ সোমবার রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করে তার হাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন সেন্টু। 

দলটির একাধিক নেতাকর্মী জানান, অনেক কেন্দ্রীয় নেতাই সাদ এরশাদের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তার আচরণে মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া কাজী মামুনুর রশিদও বিরক্ত। আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। রওশন এরশাদ এবং সাদ এরশাদকে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এসএমএস পাঠালেও তার জবাব দেননি কেউই।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, সাদ এরশাদের দুর্ব্যবহারের বিষয়টি পার্টির মধ্যে প্রকাশ্য হয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সিনিয়র নেতারা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদকে যেকোনো উপায়ে হোক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বলেছেন রওশন এরশাদ।

দলীয় নেতাদের মতে, জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে জাপার যে কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে হুঙ্কার দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম শফিকুল ইসলাম সেন্টু। ঢাকায় জাপার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনবল জোগান দেওয়ার ভূমিকায় যে কয়েকজন নেতা সক্রিয় আছেন তাদের অন্যতম তিনি। সেন্টু যদি আসলেই দল ছেড়ে চলে যান তাহলে বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে নবগঠিত জাতীয় পার্টিকে। 

গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অংশের ডাকা জাতীয় সম্মেলন শেষে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের কণ্ঠভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় রওশন এরশাদকে। এ ছাড়াও দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশিদ। আর সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কো-চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়কে নির্বাচিত করা হয়।

সেন্টু এর আগে জিএম কাদেরপন্থি জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। গত ১৪ জানুয়ারি তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি রওশনের অনুসারী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। নতুন কমিটি কাজ শুরু করতে না করতেই তার পদত্যাগের ঘটনায় বাকিদের জন্যও অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাপার নেতারা এমনিতেই হতাশ ছিলেন। জিএম কাদের তাদের অব্যাহতি দেওয়ায় তারা রওশন এরশাদের পক্ষে যোগ দেন। রওশনও তাদের কাছে টেনে নিয়ে কমিটি করেছেন। তবে এত তাড়াতাড়ি তাতে ভাঙন ধরবে এমনটি কেউ ধারণা করতে পারেনি। 

এ প্রসঙ্গে নবগঠিত জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তা ছাড়া বিষয়টি আমার জানাও নেই। 

কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, এখনই আমরা তার (সেন্টু) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছি না। এ বিষয়ে দলের নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে। তাকে স্বপদে বহাল থেকে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের পর পার্টিতে অস্থিরতা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন ছাড় না পাওয়া এবং ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া জাপা নেতারা জিএম কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন। এ পরিস্থিতির একপর্যায়ে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহহিয়া চৌধুরীসহ আরও অনেককে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। অনেক নেতা স্বেচ্ছায় পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা