প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০২ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২২ পিএম
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী। প্রবা ফটো
বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রাজধানীতে তৎপর রাখলেও, সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশ আজ এক গভীর সংকটে নিপতিত। দেশ যেন আজ উন্মুক্ত কারাগার। বিপন্নতার মুখে দেশের স্বাধীনতা। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা দূরে থাক বর্তমানে সার্বভৌমত্বই হুমকির সম্মুখীন। স্বাধীনতা বিপন্নপ্রায়। একজন মাত্র ব্যক্তির অবৈধ ক্ষমতার লিপ্সা মেটাতে বছরের পর বছর ধরে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োজিত করে রাখা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যাতে রাজধানীতে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাখো সদস্যকে রাজধানীতে তৎপর রাখলেও, এদিকে সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত। অরক্ষিত সীমান্ত স্থাপনা, থানা, পুলিশ, ব্যাংক, বীমা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, কেন দেশের সীমান্ত এত অরক্ষিত, অবহেলিত এ ব্যাপারে ডামি সরকার জনগণকে কিছুই জানতে দিচ্ছে না। দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ গভীর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মিয়ানমারের ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাস।
২০১৭ সাল থেকে আজ এত বছরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজনকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেননি।
রিজভী বলেন, মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেখা যায় প্রায়ই মিয়ানমারের শত শত জান্তা সেনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। আবার কয়েক দিন পরই দেখা যায়, বাংলাদেশ সরকার তাদের যথারীতি মিয়ানমার ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। পাঁচ-ছয় বছরেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধিকেও ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। অথচ শত শত জান্তা সেনা বাংলাদেশে ঢোকার পর পুনরায় তাদের মিয়ানমার পাঠানোর ক্ষেত্রে ডামি সরকার কী পলিসি গ্রহণ করছে, সে সম্পর্কেও জনগণ অন্ধকারে। দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণ জানতে চায়, তবে কি বাংলাদেশ যুদ্ধ করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে?
তিনি আরও বলেন, শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তই অরক্ষিত নয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও চলছে রক্তের হোলিখেলা। বেড়েই চলেছে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকের লাশের সারি। অথচ নির্বিকার প্রধানমন্ত্রীর তাঁবেদার সরকার। কথায় কথায় বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক গুলি করে হত্যা করছে। গত তিন মাসে সীমান্তে কমপক্ষে ১৫ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালেও নওগাঁ ও লালমনিরহাট সীমান্তে লিটন এবং আলামিন নামে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, ক্ষমতাসীন অপশক্তি ২৬ মার্চ সারা দিন স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুখে খই ফোটালেও সীমান্তে লিটন ও আলামিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা একটিবারের জন্যও উচ্চারণ করেনি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বান্দরবানে শুরু হয়েছে ব্যাংকলুট, পুলিশের অস্ত্রলুট, অপহরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কোনো এক অজ্ঞাত-অজানা কারণে কুকি-চিনকে তোয়াজ করা হয়েছে। কেন কুকি-চিনকে এত তোয়াজ করা হয়েছে এর পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য। দেশবাসী জানে, এ সশস্ত্র গোষ্ঠী পাহাড়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বেড়ে উঠলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কুকি-চিনের পরিবর্তে পাহাড়ে তথাকথিত জঙ্গি ধরার নাটক করেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, এ কুকি-চিনকে ব্যবহার করে নিজেদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে অবৈধ ক্ষমতালিপ্সু শেখ হাসিনার সরকার বর্তমানে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপদে ফেলে দিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্নপ্রায় বলেও মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।