× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাবেকদের ফেরাতে চান রওশন এরশাদ

জয়ন্ত সাহা

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৫৫ এএম

আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২২ ১২:২০ পিএম

প্রবা অলংকরণ

প্রবা অলংকরণ

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আন্দালিব রহমান পার্থসহ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের জাতীয় পার্টির মূলধারায় ফেরাতে চান দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের আগে তিনি এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।

গত আগস্টে দলের দশম কাউন্সিল অধিবেশন আহ্বান করে রওশন এরশাদ যে চিঠি পাঠিয়েছেন সেখানে তিনি প্রত্যাশা করেন, জাতীয় পার্টি গঠনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যারা দল থেকে চলে গেছেন, জাতীয় পার্টি নামে ভিন্ন দল গঠন করেছেন তারা আবার মূলধারার জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসবেন।

রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রওশন এরশাদের পক্ষে তিনি ইতোমধ্যে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আন্দালিব রহমান পার্থ, গোলাম সারওয়ার মিলনসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন রফিকুল হক হাফিজ ও আবুল কাশেম চৌধুরীর সঙ্গেও। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন রাজুও অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক নেতাই ইতিবাচক সায় দিয়েছেন।’

জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টি দলীয় রাজনীতির চেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে দলের ভাঙনের জন্য। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) নামে নতুন দল গঠন করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। অনেকেই তার সঙ্গে যোগ দেন। জেপির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন রাজুর দাবি, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকা জেপি বাংলাদেশ জাসদের মতো অবস্থায়ই রয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে তাদের রাজনৈতিক কোনো ফায়দা হচ্ছে না বলে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনাও করেছে। রওশন ম্যাডামের সঙ্গে জাতীয় পার্টির মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসা তাদের জন্য লাভজনক হবে বলেই মনে করছেন তারা।’

জেপি মহাসচিব পদে রয়েছেন শেখ শহীদুল ইসলাম। তিনি এ বিষয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণসভায় গেলে সেখানে রওশনপন্থি নেতারা ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আভাস দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে আমরা রয়েছি। হ্যাঁ, সেখানে অনেক সমীকরণ রয়েছে। তার মানে এই নয় যে আমরা জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছি বা যুগপৎ আন্দোলন করছি।’

২০০১ সালে নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে সাবেক মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জু গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। নাজিউরের মৃত্যুর পর বিজেপির চেয়ারম্যান হন তার ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থ। জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে পার্থকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এ কারণে তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেন এরশাদের শাসনামলের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ। কাজী জাফরকে বহিষ্কার করা হলে তিনি ২০১৩ সালে জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে আরেকটি দল গঠন করেন। এর মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন আহসান হাবিব লিংকন। বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে থাকা এ দলটিকে জাতীয় পার্টিতে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রওশনপন্থি নেতারা। তবে রওশনের ঘনিষ্ঠ নেতাদের কেউ আবার বিরোধিতাও করেছেন। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে গালমন্দ করে যারা বের হয়ে গিয়েছিলেন দল থেকে, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে চরম ভুল।

গোলাম সারওয়ার মিলন ছিলেন এরশাদ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী। অনেক দিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পর তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারায় যুক্ত হন প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে। চলতি বছর তিনি বিকল্পধারা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। মানিকগঞ্জের নেতা মিলন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সম্প্রতি রাজধানীতে তার বাসভবনে এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের একটি বৈঠক হয়েছে। তাতে রওশন এরশাদের কাউন্সিল অধিবেশনের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতারা যোগ দেন। ওই বৈঠকে জাতীয় পার্টিতে তাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রসঙ্গ। মিলন বলেন, ‘আমরা সাবেক নেতারা সবাই চেয়েছি রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমরা বলেছি তারা দুই নেতা যদি একমঞ্চে বসেন, তাহলে তাদের ডাকে পুরোনো অনেক নেতাই আবার দলে ফিরে যাবেন, যারা বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টি ছেড়েছেন। আমরা দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এখন আবার জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ফিরতে যাচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ-বিএনপির পর রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে সবসময়ই দৃশ্যপটে ছিল। এখন রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়েছে। তবে সবকিছুর আগে আমরা সবাই মিলে চাইছি রওশন ম্যাডাম এবং জিএম কাদেরের একতা।’

এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী এমএ মতিনও মূল জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে যান। তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি। ২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান হন ছেলে ডা. এমএ মুকিত। এমএ মুকিতও আবার মূল দলে ফিরে আসার আভাস দিয়েছেন, যদিও তার সঙ্গে এখনও কথা হয়নি কাজী মামুনুর রশীদ বা ইকবাল হোসেন রাজুদের। মুকিত বলেন, ‘রওশন এরশাদ ম্যাডামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে সেটা খুব ইতিবাচক হবে। জাতীয় পার্টির রাজনীতির মূল সংকট হলো ভাঙন। এ ভাঙন মোকাবিলা করতে হলে দলের সাবেক নেতাদের বিভেদ ভুলে আবার এককাতারে দাঁড়াতে হবে। আমরা মূলত বের হয়ে গিয়েছিলাম আমরা জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাস করি বলে। রওশন ম্যাডাম তার পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আমাদের ওই আদর্শের কথা বলেছেন। আমার সঙ্গে বা আমার দলের সঙ্গে কোনো আলোচনায় এলে আমরাও কথা বলব।’

রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা ছিলেন রফিকুল হক হাফিজ। তিনি বলেন, ‘আমরা দেরিতে হলেও আবার মূলধারার রাজনীতিতে ফিরছি। আশা করব অন্যরাও ফিরবেন দ্রুত। যত দ্রুত তারা ফিরবেন কাউন্সিল অধিবেশনটি তত বেশি সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’

জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল অধিবেশন হওয়ার কথা থাকলেও এখন সুর বদলেছেন রওশনপন্থিদের কেউ কেউ। রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ ছাড়াও অন্য অনেক নেতাই এখন জিএম কাদের প্রসঙ্গে নমনীয়। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘আমরা তো বলছি না যে আমরা জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল অধিবেশন করব। আমরা এখনও বলছি জিএম কাদের আমাদের চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি দলে যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে দল ভেঙেছেন, ওই অবস্থান থেকে তার সরে আসতে হবে। আমরা চাই আমাদের কাউন্সিলে রওশন ম্যাডাম ও জিএম কাদের দুজনই পাশাপাশি থাকুন। তারা দলকে একত্র করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই প্রত্যাশা করি।’ তবে পুরোনো নেতাদের ফেরানোর বিষয়ে নাখোশ হয়েছেন রওশন শিবিরের সবচেয়ে বড় মুখ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘এসব পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। কাদের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে আমি তার কিছু জানি না। আমাকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না।’

২৬ নভেম্বর ঢাকার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে রওশন এরশাদের ডাকে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা স্থগিত রাখা হয় কিছুদিনের জন্য। ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি ডিসেম্বরের শেষ ভাগে ম্যাডাম থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন। তিনি এলে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জানুয়ারিতে ঢাকায় কাউন্সিল অধিবেশন হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি যারাই জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে গেছেন বিভিন্ন সময়ে, তারা বিস্মৃত হয়েছেন। রাজনীতিতেও তাদের কোনো অবস্থান বা গুরুত্ব নেই। তৃণমূলের নেতাদের কাছেই বা তাদের কী গ্রহণযোগ্যতা? কাউন্সিল অধিবেশনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ওই কাউন্সিল অধিবেশনই তো অবৈধ। জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ আছে, থাকবে। তার নেতৃত্বেই মূলধারা পরিচালিত হচ্ছে এবং হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা