× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তরুণ প্রবাসীদের হৃদরোগ বাড়ছে সঙ্গে আত্মহত্যা

কামরুল হাসান জনি, ইউএই

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩ ১৬:৩৯ পিএম

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩ ১৮:০৭ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

যশোরের মোহাম্মদ খোকন। প্রায় ১৩ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে থাকেন। সেখানকার একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে তিনি ১ হাজার ২০০ দিরহাম বেতনে কাজ করেন। দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকলেও বেতন বাড়েনি খোকনের। এমনকি কখনও কখনও তিন থেকে ছয় মাসের বেতন বকেয়া পড়ে যায়। এসব নিয়ে প্রায়ই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাকে। 

খোকনের মতো আরও অনেকে বুকভরা আশা নিয়ে প্রবাসে গিয়ে কর্মস্থলে নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদের অনেকেরই অর্থকষ্ট, কর্মস্থলের ছুটি না পাওয়া এবং পারিবারিক নানা চাপে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে মারা গেছেন ৭০৫ বাংলাদেশি। এর মধ্যে হৃদরোগেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৬৪ জনের। এ ছাড়া দুবাইয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৮ জন। তবে আবুধাবিতে আত্মহত্যা করা প্রবাসীর সংখ্যা নিশ্চিত করেননি সংশ্লিষ্টরা।

প্রবাসীরা জানিয়েছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এতে যেমন বাড়ছে হৃদরোগ, তেমনি আত্মহত্যার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

খোকন বলেন, দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। কিন্তু বেতন বাড়ে না। একই বেতনে নিজের খাবার ও খরচ বহন করতে হয়। আবার এক দিন কাজে অনুপস্থিত হলে দুই দিনের বেতন কাটা যায়। দেশে পরিবারকে এসব বলতে পারি না। তারা ভাবে প্রবাসে দুই হাতে টাকা আসছে।

২০১১ সালে ভাগ্য বদলের আশায় আবুধাবি যান আরেক বাংলাদেশি মোহাম্মদ মোতালেব। তার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায়। বেতনের সম্পূর্ণ টাকা পরিবারের কাছে পাঠান তিনি। বছর শেষে সঞ্চয়ের মতো কিছুই থাকে না তার। এর মধ্যে কয়েকবার দেশে এলেও বিবাহ করতে পারেননি মোতালেব। তিনি বলেন, ১ হাজার ১০০ দিরহাম বেতন পাই। নিজের খরচ রেখে পুরো টাকা বাড়িতে পাঠাই। নিজের জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ হচ্ছে না। অর্থকষ্ট সারাক্ষণ মানসিক চাপে রাখে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা বাংলাদেশের দুটো মিশনের তথ্যমতে, আবুধাবি অঞ্চলে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হৃদরোগ মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। এ ছাড়া কর্মস্থলে ৩, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ এবং হত্যা ও আত্মহত্যাজনিত কারণে মারা গেছে ৫৪ জন। একই সময়ে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে মারা গেছেন ৪৭৭ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে শুধু হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩২৯ জন। এ ছাড়া স্বাভাবিক মৃত্যু ৬৮, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৫১, করোনায় ৭, আত্মহত্যায় ১৮ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ৪ জন।

দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তথ্যমতে, দুবাই ও উত্তর আমিরাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অধিকাংশ প্রবাসীর বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। আবার আত্মহত্যায় মৃত প্রবাসীদের বয়সও প্রায় একই। এমন মৃত্যুতে শঙ্কিত দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভাষা জটিলতা ও প্রবাসের চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিতে অনীহার কারণেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিপরীতে এসব সমস্যার উত্তরণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

কর্মস্থলে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর চেয়েও হৃদরোগ ও আত্মহত্যাজনিত ঘটনাগুলোকে মাত্রাতিরিক্তভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করছেন দেশটির আজমান প্রদেশের আল জার্ফ মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. তানিয়া নাজনীন।

তিনি বলেন, মানসিক দুশ্চিন্তা, খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রবাসীদের অস্বাভাবিক এমন মৃত্যুর অন্যতম কারণ। অধিকাংশ প্রবাসী পরিবার ছাড়া থাকতে গিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এতে করে তাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। বেতনের তুলনায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় কেউ কেউ চিকিৎসাকে অতিরিক্ত খরচ মনে করেন। অধিকাংশ প্রবাসী যে কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে অনীহা দেখান। স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়ায় কারও কারও মৃত্যু ঘটে।

মিশনে কর্মরত কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন বলছেন, এই বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাউন্সিলিংয়ের কথাও বলছেন এই কর্মকর্তা। তিনি জানান, পৃথিবীর কোথাও প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে এই বিষয়ে দুবাই থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটাতে বিশেষ একটি পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে দুবাইয়ে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি নওশের আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রেমিট্যান্সের ওপর চলমান ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার চেয়েও প্রবাসীদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা অন্তত জরুরি। কেননা, প্রণোদনার অর্থ সরাসরি প্রবাসীরা পাচ্ছেন না। অপরদিকে বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় বহু প্রবাসী দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত থাকলেও চিকিৎসা নেন না। দেশে ফিরে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেই সর্বস্ব হারান অনেকে। এই বিষয়টি সরকারের নজরে আসা জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা