প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বরে বাংলাদেশিদের মিলনমেলা

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বাংলাদেশি প্রবাসী ও উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে তৃতীয়বারের মতো ‘বাণিজ্য মেলা ও ঈদবাজার’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৩১ মার্চ) সলিডারিতে আঁজি ফ্রান্সের (সাফ) উদ্যোগে প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বরে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা উদ্বোধন করেন সাফ প্রেসিডেন্ট প্রফেসর নয়ন এনকে। মেলায় শিশুদের খেলাধুলা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির লাঠিখেলা আয়োজন করা হয়।

আয়োজকরা জানান, মেলায় বাংলাদেশি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পণ্যের ৬০টি স্টল নিয়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এদের বেশিরভাগই নারী উদ্যোক্তা। মেলায় শিশু-কিশোর, নারী, পুরুষের পোশাকের পাশাপাশি ছিল গয়না, প্রসাধনী, খাবার ও রকমারি পণ্য। এছাড়া বিদেশি একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তারা।

মেলায় নাহার কালেকশনের স্বত্বাধিকারী কামরুন নাহার বলেন, ‘যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি। প্রবাসীরা মেলায় এসে দেশীয় পণ্য খুঁজে নিয়েছেন। পোশাকের মিশ্রণ নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছি। তবে লক্ষ্য করেছি, মেয়েদের শাড়ি, থ্রিপিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এমন একটি মেলার প্রয়োজন ছিল। এই মেলার আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের মতো নারী উদ্যোক্তারা আরও উৎসাহিত হবেন।’

মেলায় আগত বাংলাদেশি দর্শনার্থীরা জানান, ‘পরবাসে কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনে কখন ঈদ আসে, কখন ঈদ চলে যায় উপলব্ধি করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। এ মেলার ফলে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে একটা ভিন্নমাত্রার ঈদের আমেজ অনুভব করছি।’

মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও অংশগ্রহণ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অধ্যাপক অপু আলম বলেন, ‘দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন নারী উদ্যোক্তারা। তাদের এই মেধা, মনোবল এবং পরিশ্রম সত্যিই প্রসংশনীয়। উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করতে এ ধরণের আয়োজন অব্যাহত থাকা একান্ত জরুরি।’

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘পরবাসের যান্ত্রিক জীবনে আমরা আমাদের শেকড়কে অনেক সময় ভুলে যেতে থাকি। মেলার সুবাদে পরিচিতজনদের সঙ্গে বহু বছর দেখা করতে পেরেছি। মনে হচ্ছে- এ যেন বিদেশের মাটিতে একখণ্ড বাংলাদেশ।’

মেলার আয়োজক সাফের প্রেসিডেন্ট নয়ন এনকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে স্বদেশীদের হাতে দেশীয় পণ্য তুলে দেওয়া এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও প্রসারের লক্ষেই মূলত এ মেলার আয়োজন। বাংলাদেশিদের পাশাপাশি ফ্রান্সে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও মেলবন্ধনকে আরও সূদৃঢ় করার প্রয়াস নিয়েই আমাদের এই উদ্যোগ।’

এদিকে বিকালে মেলা পরিদর্শন করেন ফ্রান্স পার্লামেন্টের এমপি ড্যানিয়েল ওবোনো, প্যারিস-১৮-এর কাউন্সিলর আনজুমাব সিসিকো ও ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা পরিচালক আন্তনি এমারাল।

এমপি ড্যানিয়ে ওবনো মেলাকে স্বাগত জানিয়ে বাঙালি শাড়ি পরে পুরো মেলা ঘুরে দেখেন এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এ সময় ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।