× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রথমার গল্প

‘শুরুর দিকে সহকর্মীদেরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল’

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩ ১৫:১৬ পিএম

বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগেরও প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। ১৯৭৫ সালে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি নারী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। টানা সাড়ে ৪২ বছর সাফল্যের সঙ্গে করেছেন বিচারকাজ। অবসরের পর তাকে ২০১৯ সালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এই ইনস্টিটিউটেরও প্রথম নারী মহাপরিচালক তিনি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন বিচারক পেশায় আগ্রহের কারণ, বিচারক হিসেবে কী কী সমস্যার সস্মুখীন হয়েছেন সেসব নানা কথা। 

প্রবা : আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই

নাজমুন আর সুলতানা : আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, তখন আমার আব্বা মারা যান। আমার নানার বাড়ি ময়মনসিংহ। সেখানে আমরা বড় হয়েছি। বাবা মারা গেলে যেটা হয়Ñ একটু সমস্যার মধ্যেই বড় হয়েছি আমরা। আব্বা মারা যাওয়ার পর আম্মা স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন। তিনিই আমাদের বড় করেছেন। তবে নানা-নানির সাপোর্ট থাকায় আমাদের খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। 

প্রবা : আইন পেশায় আগ্রহের কারণ কী?

নাজমুন আরা সুলতানা : আমার আব্বার খুব শখ ছিল তার ছেলে-মেয়েদের কেউ একজন ব্যারিস্টার হোক। কিন্তু ব্যারিস্টারি পড়তে হলে বিদেশে যেতে হতো। আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ানোর সক্ষমতা আমার আম্মার ছিল না। বিএসসি পাস করার পর আমার মনে হলো আমি যদি ল পড়ি, তাহলে আমার আব্বার স্বপ্ন পূরণ হবে। তাই আমি ময়মনসিংহ ল কলেজে ভর্তি হই। 

প্রবা : বিচারক পেশায় আগ্রহের কারণ কী?

নাজমুন আরা সুলতানা : আমার কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী জগিন্দ্রনাথ দাশ। তিনি তখন ময়মনসিংহের শ্রেষ্ঠ সিভিল লইয়ার ছিলেন। আমি ল পাস করার পরে তাকে বললাম কোর্টে জয়েন করব। তিনি আমাকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে ডিস্ট্রিক্ট জজের অনুমতি নিয়ে আদালত কক্ষে বসালেন। ওইদিন দেখলাম ঠিক সময়মতো ডিস্ট্রিক্ট জজ এসে এজলাসে বসলেন, লইয়াররা যার যার বক্তব্য বলে যাচ্ছেন, জজসাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে রায় সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন। তখন আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বিচারকাজ দেখেছি। খুব ভালো লাগছিল আমার। তখনই আমার মনে হয়েছে আমি কি বিচারক হতে পারব না? সেই থেকে আমার বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। 

প্রবা : বিচারক পেশার শুরুর দিনগুলোর কথা জানতে চাই

নাজমুন আরা সুলতানা : আমি যখন বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি, তখন দেশে কোনো নারী বিচারক ছিলেন না। কারণ নারী বিচারক হওয়ার সুযোগ ছিল না। ১৯৭৫ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ হলো বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে। বিজ্ঞাপনের নিচে লেখা ছিল নারীরাও আবেদন করতে পারবেন। সেই বিজ্ঞাপন দেখে আমি বিচারক পদের জন্য আবেদন করি। তারপর ১ হাজার ২০০ মার্কের পরীক্ষা দিলাম। তার অনেকদিন পর রেজাল্ট বের হলো। আমি পাস করলাম। ভাইভাতেও পাস করলাম। সব প্রক্রিয়া শেষে ওই বছরের শেষের দিকে দেশের প্রথম নারী বিচারক হয়ে খুলনার জজকোর্টে মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জেলাজজ) হিসেবে যোগদান করি। সেই থেকেই শুরু। 

প্রবা : প্রথম নারী বিচারক হিসেবে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল?

নাজমুন আরা সুলতানা : শুরুটা এত সহজ ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা এসেছে। নারীরা বিচারক হবে এটা এসপেক্ট করত না। মানুষ নানা সমালোচনা ও অবজ্ঞা করত। সহকর্মীদের কাছ থেকেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। তারা মনে করত নারীরা কী বিচার করবে। তবে বিষয়গুলো আমি স্বাভাবিক হিসেবেই গ্রহণ করেছি। আমার কাজে কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের আস্থা ফিরে এসেছে। 

প্রবা : আপিল বিভাগেও আপনি প্রথম নারী বিচারপতি। কেমন ছিল কর্মঅভিজ্ঞতা? 

নাজমুন আরা সুলতানা : আমি যখন আপিল বিভাগে যাই, তখন মানুষ খুব ভালোভাবে বিষয়টি গ্রহণ করেছে। তখন সারা দেশে নারী বিচারকের সংখ্যা ৪০০ জনের ওপরে। মানুষ বুঝতে শিখেছে মহিলারা খুব ভালোভাবে বিচারক হতে পারে। তখন মহিলা বিচারক বলে কোনো কথা ছিল না। 

প্রবা : বিচার বিভাগে এখনও নারীদের অংশগ্রহণ কম কেন? 

নাজমুন আরা সুলতানা : এখন নারী বিচারকের সংখ্যা খুব কম নয়। সাড়ে ৫০০ নারী বিচারক আছেন। শিগগির নারী এবং পুরুষ বিচারকের সংখ্যা সমান সমান হয়ে যাবে। 

প্রবা : বিচারক হিসেবে নারীদের কর্মপরিবেশ কেমন?

নাজমুন আরা সুলতানা : বিচারক হিসেবে নারীদের কর্মপরিবেশ এখন অনেক ভালো। তবে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী যখন চাকরি করেন, তাদের দুই জায়গায় পদায়ন করা হয়। এটা একটা কষ্টকর। এটা সব সার্ভিসেই আছে। 

প্রবা : নতুন নারী বিচারকদের উদ্দেশে আপনার নির্দেশনা কী?

নাজমুন আরা সুলতানা : শুধু নারী বিচারক নয়, সব বিচারকের উদ্দেশে বলব ন্যায়বিচার করো, মনোযোগ দিয়ে বিচার করো।

প্রবা : বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতি সম্পর্কে বলুন

নাজমুন আরা সুলতানা : বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন যথেষ্ট হয়েছে। দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারপ্রধান নারী। বিরোধীদলীয় নেত্রী এমনকি স্পিকারও নারী। প্রশাসনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে বোঝা যায় নারীদের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে। 

প্রবা : বর্তমান সময়ের নারীদের উদ্দেশে আপনার কী বার্তা থাকবে?

নাজমুন আরা সুলতানা : নিজের পছন্দ অনুযায়ী নিজের পথ বেচে নেবেন। প্রতিবন্ধকতা, বাধাবিপত্তি আসবে, তবে থমকে গেলে চলবে না। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাবেন। যে লক্ষ্য থাকবে সেটার প্রতি দৃঢ় থাকবেন। আর বিশেষ করে নারী বিচারকদের বলব, আপনার সাহসের সঙ্গে বীরদর্পে বিচারকাজ চালিয়ে যাবেন। কোনো ভয় পেলে চলবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা