× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আফগান দুই বোনের পেশাদার সাইক্লিস্ট হওয়ার গল্প

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৩ ১৫:৪৯ পিএম

আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩ ১৬:১০ পিএম

ইয়ুলদুজ হাশিমি (বামে) ও ফারিবা হাশিমি (মাঝে)। ছবি : সংগৃহীত

ইয়ুলদুজ হাশিমি (বামে) ও ফারিবা হাশিমি (মাঝে)। ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই বোন ইয়ুলদুজ হাশিমি ও ফারিবা হাশিমি। রক্ষণশীল দেশে বেড়ে উঠেও দেখেছেন পেশাদার সাইক্লিস্ট হওয়ার স্বপ্ন। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেছেন তারা। তবে যাত্রাটা দুই বোনের জন্য মোটেও সহজ ছিল না।

তাদের সাইক্লিংয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। সে বছর দেশটির ফারইয়াব প্রদেশে স্থানীয়ভাবে সাইকেল রেসের আয়োজন করা হয়েছিল। ইয়ুলদুজ ও ফারিবার সে সময় বয়স ছিল ১৪ ও ১৭ বছর। দুই বোন সিদ্ধান্ত নেয় এই সাইকেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে তারা।

কিন্তু প্রধান সমস্যা হলো দুই বোনের কেউই তো সাইকেলই চালাতে পারে না। পরে তারা প্রতিবেশীর থেকে একটি সাইকেল ভাড়া করে এক বিকালের জন্য। কয়েক ঘণ্টার অনুশীলনেই তারা সাইকেল চালানো শিখে যায়।

রক্ষণশীল সমাজের বাসিন্দা হওয়ায় সবাইকে জানিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এমনকি তারা তাদের পরিবারকেও জানায়নি। তাদের নামও পরিবর্তন করে এবং লম্বা পোশাক ও সানগ্লাস চোখে দেয়। কেউ যাতে তাদের চিনতে না পারে। দুই বোন রেসটি শেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়ে।

ফারিবা যার বয়স এখন ১৯ বছর, সেদিনের কথা স্বরণ করে বিবিসি স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘এর অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন পাখির মতো উড়ছি।’   

এরপরেও তারা একের পর এক রেস জিততে থাকে। ফলে পরিবারে বিষয়টি আর গোপন রাখা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় গণমাধ্যমে আসা ছবি থেকে তাদের বাবা-মা বিষয়টি জেনে ফেলে।

ফারিবা বলেন, ‘শুরুতে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সাইকেল চালানো থামাতে বলে। আমরা হাল ছেড়ে দিইনি। গোপনে সাইকেল চালাতে থাকি।’

দুই বোন জানান, তাদের অভিভাবকরা বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতেন একই সঙ্গে তারা সাইকেল চালানোকে সমর্থনও করতেন। তবে রক্ষণশীল সমাজ তাদেরকে শুরুতে গ্রহণ করেনি। মানুষ তাদেরকে প্রতিদিনই বিরক্ত করত। বর্তমানে ২২ বছর বয়সি ইয়ুলদুজ বলেন, ‘আমরা শুধু চাইতাম রেসে জিততে।’

ফারিবা ইয়ুলদুজের কথার সঙ্গে যুক্ত করেন, ‘সেখানে বেশকিছু হুমকি ছিল। মানুষজন গাড়ি ও রিকশা দিয়ে তাদের আঘাত করতে চাইত।’

এমনকি তাদের মেয়ে সহপাঠীরাও সাইকেল চালানো নিয়ে তাদের বিরক্ত করত। কিন্তু যখন তারা আফগানিস্তানের জাতীয় দলে ডাক পায়, তখন পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ইয়ুলদুজ বলেন, ‘আমি সেদিনের কথা ভুলব না। আমার মনে হচ্ছিল আমি বিশ্বজয় করেছি।’

অতঃপর তালেবান

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। সাইকেল চালানো নিয়ে ঠাট্টা ও উপহাসের শিকার হলেও সব বাধা অতিক্রম করে ঠিকই সাইকেলকে আকড়ে ধরেছিলেন ইয়ুলদুজ ও ফারিবা। কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পরে এটুকুও আর সম্ভব হয়নি।

তালেবান প্রশাসন শুরুতেই ক্রীড়াক্ষেত্র ও গণমাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনার দরজাও বন্ধ হয়ে যায় নারীদের জন্য। এমনকি একসময় নারীদের মাহরাম ছাড়া দূর ভ্রমণ, পার্কে প্রবেশও নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক পোশাকবিধিও চালু করে তালেবান সরকার। এমনকি মানবিক সহায়তা সংস্থাতেও নারীদের চাকরি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সেই হিসেবে দুই বোনের সাইক্লিং ক্যারিয়ারও হুমকিতে পড়তে পারে, তা খুবই স্বাভাবিক। আর হয়েছিলও তাই। কিন্তু সেই দুই বোন হাল ছেড়ে দেয়নি। তারা জানত ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে হলে তাদের আফগানিস্তান ছাড়তে হবে।

বিশ্বজয়ী আলেক্সান্দ্রা কাপ্পেলোত্তোর সঙ্গে যোগাযোগ

ইতালীয় নারী সাইক্লিক আলেক্সান্দ্রা কাপ্পেলোত্তো ১৯৯৭ সালে সাইক্লিং জগতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন। পরে তিনি সাইক্লিংকে চ্যারিটির কাজে ব্যবহার করেন। ২০২১ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনি কাবুল গিয়েছিলেন। সেখানেই দুই বোনের সঙ্গে আলেক্সান্দ্রার সাক্ষাৎ হয়।

১৯৯৭ সালে সেরার প্রতিযোগিতায় আলেক্সান্দ্রা কাপ্পেলোত্তো (ডানে) 

সেই পরিচয়ের সুবাদে দুই বোন আবারও আলেক্সান্দ্রার সঙ্গে মেইলে যোগাযোগ করেন ও সাহায্য চান। কাপ্পেলোত্তো তাদের শঙ্কার বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘ ও ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা সাহায্য চেয়েছিল। তাদের জীবন বিপদাপন্ন। এটিই স্বাভাবিক যে তাদের সাহায্য করা।’   

পরে আলেক্সান্দ্রা কাপ্পেলোত্তোর চেষ্টায় ইতালীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে নুরিয়া মোহাম্মদি, জাহরা রেজাই ও আরেজো সারওয়ারি এই তিন নারী সাইক্লিস্টসহ দুই বোন ইয়ুলদুজ হাশিমি ও ফারিহা হাশিমি কাবুল ছাড়ার ফ্লাইটে ওঠেন।

এই নারী সাইক্লিস্টদের জন্য এয়ারপোর্টের অভিজ্ঞতা ছিল বিভ্রান্তির। কারণ তারা জানেন না, আদৌ কবে আবার তাদের পরিবারের সঙ্গে তারা দেখা করতে পারবেন। ফারিবা বলেন, ‘আমি কখনই ভাবিনি যে আমি একজন শরণার্থী হব। আমি কখনই ভাবিনি যে আমাকে দেশ ছাড়তে হবে।‘

ইতালির জীবন

কাপ্পেলোত্তো তাদেরকে ইতালির উত্তরে ভেনেতোর এক পাহাড়ি অঞ্চলে নিয়ে আসেন, তার বাসার কাছেই আফগান এই সাইক্লিস্টদের থাকার জায়গা হয়। তাদের জন্য সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো অঞ্চলটিই সাইক্লিস্টদের জন্য খুবই জনপ্রিয়।  

আলেক্সান্দ্রা তাদের জন্য নতুন সাইকেল ও পেশাদার কোচেরও ব্যবস্থা করেছেন। তার সম্পর্কে ফারিবা বলেন, ‘সে একজন ইতালিয়ান হিরো। সে আমাদের মায়ের মতো।’

নতুন জীবনে এরই মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে গেছে দুই বোন। প্রফেশনাল কোচের অধীনে তাদের দক্ষতাও আরও বেড়েছে। হয়তো তাদের ক্যারিয়ারও অনেক দূর যাবে। কিন্তু কবে তারা ঘরে ফিরতে পারবে, সে জন্যই হয়তো তাদের অপেক্ষা।

 

 

সূত্র : বিবিসি 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা