× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘সাহসের সঙ্গে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করবে নারী’

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩ ১২:১৭ পিএম


বাংলাদেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম।

বাংলাদেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম।

বাংলাদেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেন। পাঁচ বছর দায়িত্বপালন শেষে অবসরে যান।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে কাজের নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হুমায়ূন কবীর।

প্রবা : কেমন আছেন?

বেগম কবিতা খানম : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

প্রবা : যখন আপনি জানতে পারলেন আপনি দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার হচ্ছেন তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?

বেগম কবিতা খানম : নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া বেশ কয়েকদিন ধরে চলছিল। পত্রিকায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামের প্রস্তাব প্রকাশিত হচ্ছিল। তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় আমার নামের প্রস্তাব আমি দেখিনি। চূড়ান্ত ঘোষণার সময় যখন আমার নাম উচ্চারিত হলো, তখন অবশ্যই আমি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছিলাম এবং খুশি হয়েছিলাম। এ মুহূর্তে যা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। ঘোষণার সময় আমার মেয়ে টিভির সামনে ছিল। আমি অন্য ঘরে ছিলাম। নাম ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মেয়ে আমাকে ডেকে নেয়। এক অন্যরকম অনুভূতি ছিল ওই মুহূর্তে। মোবাইল ফোনে অনবরত অভিনন্দন আসছিল।

প্রবা : নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর কেমন কেটেছে?

বেগম কবিতা খানম : সফলতা-বিফলতা, আলোচনা-সমালোচনা মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতির মধ্য দিয়ে কেটেছে।

প্রবা : প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?

বেগম কবিতা খানম : নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। একজন কমিশনারের কোনো কাজে সহযোগিতা বা অসহযোগিতার বিষয়টি আসে না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের সব কাজই নির্বাচন-সম্পর্কিত, পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো কাজই সম্ভব নয়। আমি অনেক সময় একক সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায় থেকে কাউকে বদলি করা বা কোন পদ্ধতিতে (ব্যালট/ইভিএম) ভোট গৃহীত হবে, কেন্দ্রে ব্যালট পেপার কখন যাবে ইত্যাদি বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছি। সেক্ষেত্রে এ ধরনের মতামতের পক্ষে সহযোগিতা পেয়েছি, আবার অনেক সময় তারা ভিন্নমতও পোষণ করেছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে যেকোনো বিষয়ে আমরা সব কমিশনার সহযোগিতা করেছি। কিছু বিষয়ে মতান্তর ঘটেছে। ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন কমিশনারদের গুরুত্ব ক্রমেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে। এমন কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা কমিশনারদের জানানো হয়নি। যা কমিশনাররা পরে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে অনেক আন-অফিসিয়াল নোটও দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনের ভুল ব্যাখ্যা করার প্রবণতা বেশি ছিল। পাঁচজন নিয়ে একটা কমিশন। সিদ্ধান্ত যেটা হবে কমিশনের হবে। কিন্তু এর ব্যত্যয় মাঝেমধ্যেই হয়েছে।

প্রবা : স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন? চ্যালেঞ্জ কী রকম ছিল?

বেগম কবিতা খানম : সব কমিশনারের স্বাধীনভাবে মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ ছিল। কোনো বিষয়ে আমার মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত না-ও হতে পারে। মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সময় পরাধীনতা ছিল না। মাঠপর্যায়ে যখন কোনো ঝামেলা হতো তখন অনেক সময় টেলিফোনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিকনির্দেশনা দিতে হয়েছে; কমিশনে বসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে, যা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল।

প্রবা : কমিশনে দায়িত্ব পালনকালে উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা আছে যা মনে পড়লে আপনাকে আনন্দ দেয় বা কষ্ট দেয়?

বেগম কবিতা খানম : যখন কমিশনের কোনো কাজ সফল হয়েছে তখন অবশ্যই আনন্দ পেয়েছি। যেমন, কোনো একটা নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে আমি দেখভাল করেছি এবং হেরে যাওয়া প্রার্থী ফোন করে নির্বাচন ভালো হওয়ার কথা বলেছেন, তখন অবশ্যই ভালো লেগেছে। তবে করোনার সময় যখন আমার বাড়ির সব সদস্যই আক্রান্ত হয়েছিল, আমি এবং আমার এক নাতনি ছাড়া, সে সময়ে কমিশনের অসহযোগিতায় অসম্মানিত হয়েছি; কষ্ট পেয়েছি।

প্রবা : নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছাড়ার পর কি কখনও মনে হয়েছে যে, এই কাজটি বা কাজগুলো সম্পন্ন করে আসতে পারলে ভালো হতো?

বেগম কবিতা খানম : একটা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আমরা ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচন দিয়েছিলাম। আমাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট হয়েছিল। কিন্তু রিট নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।

প্রবা : আপনার ছেলেবেলা ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।

বেগম কবিতা খানম : ছেলেবেলায় একটু দুরন্ত ছিলাম। ছেলেমেয়ে উভয়ের খেলাই খেলেছি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাতে অমনোযোগী ছিলাম। এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় ফল ভালো ছিল। স্কলারশিপও পেয়েছিলাম। আমাদের কোনো প্রাইভেট টিউটর ছিল না। নিজেরাই লেখাপড়া করেছি। বাবা আমাদের চার বোনকে উচ্চশিক্ষিত করেছিলেন। পড়াশোনার সময় মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। বাবা শিক্ষানুরাগী ছিলেন। আমরা চার বোনই সার্ভিস হোল্ডার ছিলাম। বিয়ের পর চাকরিজীবনে আমি আমার স্বামী বা আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হইনি। আমার যেকোনো কাজেই সব সময়ই আমি পরিবার থেকে উৎসাহ পেয়েছি।

প্রবা : দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবু সার্বিকভাবে নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন। এর কারণ ও এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

বেগম কবিতা খানম : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এককভাবেই নারীদের বিভিন্ন উচ্চ পদে পদায়ন করেছেন। তবু দেশের অধিকাংশ নারী এখনও প্রকৃত শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারছেন না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে, তাদের কন্যাসন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য। অনেক পরিবারে বাবা তার কন্যাসন্তানটিকে ১৮ বছর দেখিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক শিশু ক্লাস ফাইভ থেকেই ঝরে পড়ে। আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

১৮৫৭ সন থেকে যে লড়াই শুরু হয়েছে, সেই লড়াইয়ে নারীরা এখন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণ করার পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকছি। আশার কথা যে, আমাদের মেয়েরা খেলাধুলায় অনেক এগিয়ে গেছে। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক এগিয়ে আছে। বিসিএসের মতো একটা কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও মেয়েরা ভালো করছে। মাঠ প্রশাসনে মেয়েরা তাদের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে।

বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানেই মেয়েরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে। তবে তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতৃত্ব তুলে আনতে হলে আমাদের আরও অনেক শ্রম দিতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে, পারিবারিকভাবে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নারীদের সামাজিক নিরাপত্তাসহ কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই হয়তো একদিন আমরা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব।

প্রবা : নারী দিবসে আপনার চাওয়া কী?

বেগম কবিতা খানম : নারী দীপ্ত পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সমাজের প্রতিবন্ধকতাগুলো সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করবে। নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেবে।

প্রবা : প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার পাঠক-দর্শকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলেন।

বেগম কবিতা খানম : প্রতিদিন বাংলাদেশ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে পাঠকদের মন জয় করুক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হোক। সমাজ গঠনে সমাজের দর্পণ হিসেবে ভূমিকা রাখুক এই আশা করছি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা