× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেয়েদের জীবনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১১:১০ এএম

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১১:১৩ এএম

এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার।

এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার।

পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় কোনো এক বাংলাদেশি নারী দেশের পতাকা উড়িয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এই বীরকন্যাকে কুর্নিশ করেছে পুরো বাঙালি জাতি। তার নাম নিশাত মজুমদার। 

২০১২ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী, যিনি এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন, তুলে ধরেন বাংলাদেশের পতাকা। 

১৯৮১ সালে লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ করেন নিশাত মজুমদার। বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার বীর মুক্তিযোদ্ধা। মা আশুরা মজুমদার গৃহিণী। এ দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে নিশাত দ্বিতীয়। পর্বতারোহণ তার নেশা হলেও বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার প্রধান হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত। তার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদক ফারহানা বহ্নি।

প্রশ্ন : প্রতিদিনের শুরুটা যেভাবে হয়

উত্তর : একজন স্পোর্টসের মানুষ হিসেবে যা করা প্রয়োজন, সেগুলো করি। প্রতিদিন সকালে উঠে ব্যায়াম করি। এভাবে আমার দিন শুরু হয়। পর্বতারোহণ করি বলে ফিটনেসের প্রতি আমার একটা প্যাশন আছে।

প্রশ্ন : মেয়েদের কিছু বিশেষ সময় থাকে। সেক্ষেত্রে পর্বতারোহণে তাদের চ্যালেঞ্জটা কি ছেলেদের তুলনায় বেশি?

উত্তর : চ্যালেঞ্জ আছে বলেই জীবনটা সুন্দর। যদি জীবনটা পুষ্পে ঢাকা থাকত, তাহলে ভালো লাগত না। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে জীবনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং। মেয়েদের সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ সময় বা মা হওয়ার সময়টায় শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিবর্তন আসে। তারা তাদের স্বপ্ন ও ভালো লাগাকে বিসর্জন দেন অনেক ক্ষেত্রে। আবার অনেকে এর মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে মেয়েদের বারবার বলা হয় ‘পারবে না’, যা শুনতে শুনতে তাদের মাথায় গেঁথে যায় এবং সে-ও ভাবতে শুরু করে- পারবে না। আসলে মেয়েদের জীবনটা চ্যালেঞ্জিংই শুধু না, বৈচিত্র্যময়ও।

প্রশ্ন : চাকরি করছেন, সংসার আছে। প্যাশনের জায়গাকে কীভাবে সামলাচ্ছেন?

উত্তর : পরিবারে যারা থাকে, তারা যদি একই চিন্তার হয়, তাহলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। আমার স্বামী আমাকে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করে। আমি থেমে গেলেও সে থামতে দেয় না। আমি খুবই ভাগ্যবান এ জায়গাটায়। আবার বাবা-মা, ভাইবোনদের সহযোগিতাও পেয়েছি বা পাচ্ছি।

প্রশ্ন : পর্বতারোহণে শারীরিক সামর্থ্যের সঙ্গে অনেক বেশি মানসিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আসে কোত্থেকে?

উত্তর : প্রথম বুঝিনি। এখন পেছন ফিরে তাকালে বুঝি প্রতিটা জিনিসের সঙ্গে প্রতিটা জিনিসের সম্পর্ক আছে। শক্তিটা মায়ের কাছ থেকে এসেছিল। তিনি ভীষণ রকম সংগ্রামী মানুষ। তার যে শক্তি, সংগ্রাম, কষ্ট- সেটাই মনে হয় আমার ভেতরে এসেছে। আমরা গ্রামে ছিলাম। একসময় ঢাকায় চলে আসি। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও পরে তিনি নিঃস্ব হয়ে যান। প্যারালাইজড হয়ে যান। আমাদের চার ভাইবোনের মুখে খাবার তুলে দিতে শুরু হলো মায়ের সংগ্রাম। মায়ের সেই সংগ্রামটাই আমার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।

প্রশ্ন : এমন সংকটের মধ্যেও পড়াশোনাটা চালিয়ে গেলেন কীভাবে?

উত্তর : মা এসএসসির পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি। বাবার এমন অবস্থায় মা সেলাইয়ের কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। মামা-খালারা অনেক সহযোগিতা করেছেন। সে সময় মা আক্ষেপ করে বলতেন, আরও একটু শিক্ষিত হলে চাকরি করে, ব্যবসা করে সংসার চালাতে পারতাম। তখন মা ভেবেছেন যেভাবেই হোক ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। মা সব সময় চাইতেন আমরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াই। 

প্রশ্ন : আমাদের দেশে পর্বতারোহণে নারীর অবস্থান কেমন?

উত্তর : নারীর অবস্থান খুবই ভালো। অদ্ভুত রকমের ভালো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নিজস্ব পাহাড় আছে। আমাদের তেমনটা নেই। যে দেশে পাহাড় নেই, মাটির দেশ ও পানির দেশের মানুষ। সে দেশের মেয়েরা আকাশ ছোঁবে, সেটা তো একটু সময় লাগবেই। বাংলাদেশে পর্বতারোহণের কথা ধরলে মাত্র দুই দশক হবে। দুই দশকে কতটা সম্ভব, আর আমরা কতটা এগিয়েছি দেখলেই বোঝা যাবে মেয়েরা পিছিয়ে নেই।

২০১০ সালে এভারেস্টে প্রথম প্রচেষ্টা, ২০১১ সালে মুহিত ভাই জয় করেন। সেবার আমারও যাওয়ার কথা ছিল। স্পন্সরের অভাবে যাওয়া হয়নি। ২০১২ সালে আমরা গেলাম। এরপরের সালগুলোতে যদি আপনি দেখেন মেয়েরা খুব চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি সমতার জায়গাটা আছে। অনেক মেয়ে এখন একাই পাহাড়ে যাচ্ছে এবং সে সংখ্যাটাও অনেক। তবে আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয়- এ জগতের বাইরেও একটি জগৎ আছে। এদেশের মেয়েরা এখনও বাল্যবিবাহের শিকার, নানা বঞ্চনার শিকার। আমরা সুবিধাপ্রাপ্তরা হয়তো ভালো আছি। তবে যারা সুবিধা পায়নি, তাদের হাত ধরে তুলে আনতে হবে আমাদের। 

প্রশ্ন : আপনি অনেক নারীর অনুপ্রেরণা, সে জায়গা থেকে কী দায়বদ্ধতা অনুভব করেন?

উত্তর : জীবনটাকে আমি একটু ভিন্নভাবে দেখি। আমি পাহাড়ে যাই বলে সবাইকে পাহাড়ে যেতে হবে তা নয়। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে পাহাড় আছে। সেটা অতিক্রম করতে হয়। দায়বদ্ধতার কথা যদি বলি, তবে এভারেস্ট আরোহণে কিছু মনে হয়নি আমার। একটা মেয়ে পাহাড়ে উঠেছে, নেমেছে সেটা আর কি! কিন্তু যখন বাংলাদেশে ফিরে এলাম, কিছু মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে ‘মেয়েরা পারে না’ ধারণাটি কিছুটা ভেঙেছে। সেই চোখগুলো আমি ভুলতে পারি না। ‘আমিও পারি’- এ ধারণা তৈরি হয়েছে মেয়েদের মধ্যে। আমি তো ক্ষুদ্র মানুষ। তবে চেষ্টা করি পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারি- তোমার খারাপ লাগছে? তুমি হাল ছেড়ে দিও না। এভাবে মনের শক্তি জোগাতে পারি। আর আমি ছেলেমেয়েতে আলাদা করার পক্ষপাতী নই। ছেলেমেয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের একটা ক্লাব আছে। সেটার পাশাপাশি আরও কিছু করার আছে। 

প্রশ্ন : প্রথম পাহাড়ে যাওয়ার গল্পটা যদি বলেন।

উত্তর : কেওক্রাডংয়ে গিয়েছিলাম প্রথম। সেই যে গেলাম, সেটাই ছিল প্রথমবারের মতো ঘর থেকে বের হওয়া। একা, বাবা-মাকে ছাড়া। সবুজকে জড়িয়ে ধরলাম, আলিঙ্গন করলাম প্রকৃতিকে। তারপর শুরু হলো প্রকৃতির কাছে যাওয়া। তখন গুগল ছিল না। আমাদের পৃথিবী, জানালা ছিল পত্রিকা, বই। পত্রিকায় পাহাড়ের লেখা পড়তাম। দেখতাম বড় বড় কাজ করে কারা! একজন নারী প্লেন চালাচ্ছে, এটা আমাকে খুব উৎসাহ দিয়েছে। ভাবলাম আমিও উড়োজাহাজ চালাব। একজন নারী হিমালয়ে যাচ্ছে, মনে হলো আমি যদি পারতাম। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা