গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:১০ পিএম
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪২ পিএম
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা। প্রবা ফটো
‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠী দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক একটি সম্প্রদায়। তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদেরকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে যেতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ‘ট্রান্সজেন্ডার ভিজিবিলিটি, রিপ্রেজেন্টেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে।
‘আশার আলো সোসাইটি’ এবং ‘দুর্জয় নারী সংঘ’ নামে দুটি সংগঠন এই বৈঠকের আয়োজন করে।
পিপল লিভিং উইথ এইচআইভি (পিএলএইচআইভি) নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন মুন্নার সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, পিডিসির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এসএম সিরাজুল ইসলাম, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যম ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা পিছিয়ে আছেন এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। আমরা তাদেরকে পিছিয়ে দিয়েছি। এজন্য আমাদেরকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে আমরা কোটা রাখার জন্য চিঠি দিয়েছি। ইতিবাচক কন্টেন্ট দিয়ে অনেক কিছু জানা যায়। হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে নেতিবাচক কিছু করা হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনে সেটি থাকলে ভালো হয়।’
ইউএনএইডসর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সায়মা খান বলেন, ট্রান্সজেন্ডারদের কোনো কারণে গ্রেপ্তার করা হলে তাদেরকে পুরুষদের সেলে রাখা হয়। এটি ভয়াবহ। এজন্য আমাদেরকে জেন্ডার আইডেন্টিটি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
সোয়সার কান্ট্রি কোর্ডিনেটর জান্নাত হুসনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে বোঝা যায় হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা কত সমস্যার মধ্যে আছেন। সেজন্য পলিসি, আইন পরিবর্তনের সাথে ধারণাগত বিষয়ে কাজ করতে হবে।
ইউএনএফপিএর ডা. রোকসানা বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের কী চিকিৎসা দিতে হবে তা অনেক চিকিৎসক জানেন না। ওই চিকিৎসকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এ ছাড়া জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে হবে।
দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তাদের কর্মসংস্থানসহ মূলধারায় আনতে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। গণমাধ্যমে তাদেরকে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া শব্দের ব্যবহার নিয়ে যে বিতর্ক আছে তার অবসান হওয়া দরকার। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের অন্যান্য ভাই-বোনদের মতো বাবা-মায়ের সম্পদ প্রাপ্তি নিশ্চিতে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।
কি-নোট প্রেজেন্টেশনে ট্রান্সজেন্ডার উপস্থাপিকা অনিন্দিতা বলেন, সরকার আইনি স্বীকৃতিসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কাজ শুরু করেছে। তবে সেটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। এজন্য সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে আশার আলো সোসাইটির উপ নির্বাহী প্রধান কে এস এম তারিক বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সরকার অনেক কিছু করেছে। কিন্তু কমিউনিটির অনেকেই তা জানে না, সেজন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। সেই জানা না জানার দোলাচলে যেন ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্যই এ আয়োজন।
এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে হিজড়াদের এনআইডি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, চাকরিপ্রাপ্তি, ঋণ সহায়তা, যাবতীয় কুসংস্কার দূরীকরণ, লিঙ্গবৈষম্য, শারীরিক গঠন, আবেগ/মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্নতা ঠেকানো, সহিংসতা ও অবিচার রোধসহ তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বক্তারা তাগিদ দেন।
সমাপনী বক্তব্যে আশার আলো সোসাইটির নির্বাহী প্রধান মো. আব্দুর রহমান উপস্থিত সবাইকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে গ্রহণ করা অ্যাকশন পয়েন্টগুলো বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা আশা করেন।