প্রাচীন স্থাপত্য
বঙ্গ রাখাল
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০১:২৩ এএম
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের মধ্যযুগীয় পুরাকীর্তির মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা শাহি মসজিদ উল্লেখযোগ্য। কুমার নদের তীরে তৈরি এ মসজিদটি সুলতানি আমলের স্থাপত্যকীর্তির অনন্য নিদর্শন। প্রায় ৫০০ বছরের পুরাতন প্রাচীন ঐতিহ্য ও মধ্যযুগীয় মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির নির্মাণকাল নিয়ে অনেক দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত হলো, শৈলকুপার শাহি মসজিদ সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহর পুত্র নাসির শাহ ওরফে নসরত শাহর রাজত্বকালে তাঁরই নির্দেশ মোতাবেক উজির শাহ আলীর পরিচালনায় নির্মিত। ভারতে মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে এ মসজিদ নির্মিত বলে অনুমিত হয়।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, ১৫২৩-১৫২৪ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের পূর্ব দিকে অনুচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত (৪৫/৩০ ফুট) একঢি মাজার আছে। স্থানীয় লোকদের মতে, এটি শাহ মোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী ওরফে আরব শাহ মাজার। সুলতান নসরত শাহর রাজত্বকালে পীর আরব শাহ রব্বানী ইন্তেকাল করেন এবং তাকে এ মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে সমাহিত করা হয়। উজির শাহ আলী পীরের মাজার পাকা করেন। উজির শাহ আলীও নাসির শাহর রাজত্বকালের শেষভাগে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকেও পীরের মাজারের পশ্চিম পার্শ্বে সমাহিত করা হয়। এ মাজারের কাছে রয়েছে আরও ছয়জন আউলিয়ার মাজার। তবে মসজিদ বা মাজারে কোনো শিলালিপি নেই।
কালের সাক্ষী এ মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ৩১.৫/২১ ফুট। প্রায় ৫.৫ ফুট প্রশস্ত এর দেয়ালগুলো। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে প্রবেশ পথ আছে। এ মসজিদের চার কোণে রয়েছে গোলাকার এবং বলয়াকারে স্ফীত রেখা দ্বারা অলংকৃত চারটি মিনার, যা উঠে গেছে মসজিদের অনেক ওপরে। এ ছাড়া পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উভয় পাশে রয়েছে একটি করে সরু মিনার। মসজিদের কার্নিশ ঈষৎ বাঁধানো; ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি আকারে বড়। এ মসজিদে এত সংস্কার ও সংযোজন হয়েছে যে, এর আদি কাঠামো কী ছিল তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা কঠিন। মসজিদের মূল দেয়াল ছিল লাল রঙের ছোট ছোট পাতলা ইটের। পরবর্তী সময়ে সংস্কারের সময় প্লাস্টারবিহীন ইটের গাঁথুনিগুলো প্লাস্টারে ঢাকা পড়ে যায়। স্থাপত্যকালে মসজিদে কোনো মিনার ছিল না। ১৯৪২ সালে সর্বপ্রথম মসজিদ সংস্কারকালে মিনার নির্মাণ করা হয়। মসজিদের ছাদ কিছুটা বাঁকা করে নির্মিত। কার্নিশটি বক্র ছাদের মধ্যস্থল থেকে ক্রমে দুদিকে ঢালু হয়ে কোনায় টাওয়ারগুলোতে মিশেছে। মসজিদের মেঝসংলগ্ন উত্তর প্রাচীরে দুটি ও দক্ষিণ প্রাচীরে দুটি, মোট চারটি জানালা জাতীয় গহ্বর আছে। ১৯৮২ সালে এসব গহ্বরে প্রতিবন্ধকস্বরূপ লোহার রড লাগানো হয়। মসজিদের উত্তর পার্শ্বে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একটি দিঘি আছে। সুলতানি স্থাপত্যের আকর্ষণীয় এই শাহি মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসে।