রম্য ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২২ ২২:৪০ পিএম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষটি এক্কেবারেই রাশভারী ব্যক্তি ছিলেন না। বরং বেশ রসিক মানুষ ছিলেন বলেই জানা যায়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বেশকিছু ঘটনায়।
০১.
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অত্যন্ত হাস্যরসিক। মাঝে মধ্যে তার সহচর ও ভক্তদের ধাঁধাও ধরতেন। একদিন তিনি এক মজলিসে তার এক ভক্তকে বললেন, ‘এমন একটা শব্দের নাম কর, যার প্রথম অক্ষর ছেড়ে দিলে মান থাকে, দ্বিতীয় অক্ষর ছেড়ে দিলে কান থাকে আর তিন অক্ষরই ছেড়ে দিলে প্রাণ থাকে না। ভক্ত তো হতভম্ব। বহু চিন্তা করে কেনো কূল-কিনারা করতে না পেরে অসহায়ের মতো বললেন, ‘পারছি না তো, আপনিই বলে দিন না’। কবি বললেন, ‘শব্দটা হলো ‘কামান’।’
০২.
একবার শান্তিনিকেতনে ওজন মাপার যন্ত্র কেনা হলো।
সেই যন্ত্র দিয়ে ছেলেমেয়েদের একে একে ওজন নেওয়া হচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন। একেকজনের ওজন নেওয়া শেষ হলেই কবি তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘কিরে তুই কত হলি?’
এর মধ্যে একটি মেয়ের ওজন হলো দুই মণ। মেয়েটির আবার সেময় বিয়ের আলাপ চলছিল, কবি তা জানতেন। তাই মজা করে তিনি বললেন, ‘কিরে, তুই এখনো দু মন? এক মন হলি নে!’
০৩.
একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি একসঙ্গে খেতে বসেছিলেন। গান্ধীজি লুচি খেতে এক্কেবারেই ভালোবাসতেন না। তাই তাঁকে ওটসের পরিজ খেতে দেওয়া হয়। আর কবি খাচ্ছিল গরম গরম লুচি।
এটা দেখে গান্ধীজি তাঁকে বলে বসলেন, ‘গুরুদেব তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছো।’ এর উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘বিষ হবে তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’
০৪.
শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক নেপাল রায়কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার লিখে পাঠালেন, ‘আপনি আজকাল কাজে অত্যন্ত ভুল করছেন। এটা খুবই গর্হিত অপরাধ। এ জন্য কাল বিকেলে আমার বাড়িতে এসে আপনাকে দণ্ড নিতে হবে।’
নেপালবাবু খুব দুশ্চিন্তায় পড়লেন। চিন্তায় চিন্তায় রাতে তাঁর ঘুম হলো না। সকাল হতেই তিনি ছুটলেন গুরুদেবের কাছে। বসার ঘরে তটস্থ হয়ে বসে ছিলেন নেপাল। না জানি কী ভুলের জন্য আজ কী দণ্ড পেতে হয়!
মোটা একটা লাঠি হাতে ঘরে প্রবেশ করলেন রবিঠাকুর। নেপালবাবু ভাবলেন, দণ্ড হিসেবে বোধ হয় এ যাত্রা লাঠির বাড়িই খেতে হবে!
কবি লাঠিটি নেপালবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এই নিন আপনার দণ্ড। সেদিন যে আমার বাড়িতে এসে ফেলে গেছেন, তা একদম ভুলে বসে আছেন!’