প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৯ এএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৩ পিএম
ইলন মাস্ক বরাবরই বলে আসছেন, নিউরালিঙ্কের ব্রেন ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস পুরোপুরি নিরাপদ। ভবিষ্যতে নিজের সন্তানদের মস্তিষ্কেও এটি ইমপ্ল্যান্ট করতে আপত্তি নেই তার। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ইলন মাস্কের ব্রেন
মেশিন ইন্টারফেস প্রতিষ্ঠান নিউরালিঙ্কের মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আবেদন প্রত্যাখ্যান
করেছে। কোম্পানিটির বর্তমান ও সাবেক কর্মীদের সাতজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বৃহস্পতিবার
(২ মার্চ) এমনটাই জানিয়েছেন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি নিউরালিঙ্কের একাধিক নিরাপত্তা ইস্যু ও বেশ কিছু
ঘাটতির বিষয়ে আলোকপাত করে জানিয়েছে, মানব পরীক্ষা শুরুর আগে অবশ্যই এসবের সমাধান করতে
হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এমন সময় নিউরালিঙ্কের আবেদন প্রত্যাখ্যান করল, যখন কোম্পানিটি
আশা করছিল শিগগিরই তারা মানব ট্রায়াল সম্পন্ন করতে পারবে।
এ ছাড়া মস্তিষ্ক থেকে ডিভাইস অপসারণের প্রক্রিয়ার বিষয়েও নিউরালিঙ্ক আশ্বাস দিলেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি এফডিএ। সংস্থাটির কর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে নিউরালিঙ্কের কাছে পর্যাপ্ত সমাধান নেই।
আরও পড়ুন : ফেডারেল তদন্তের মুখোমুখি ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্ক
এ ছাড়া টেসলা গাড়ির মতো নিউরালিঙ্ক ডিভাইসেও ব্যবহার করা হয়েছে ছোট
আকারের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। আর মোবাইল ডিভাইস, কিংবা গাড়ির ক্ষেত্রে দেখা গেছে লিথিয়াম
আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারে গরম হয়ে যায়। নিউরালিঙ্ক ডিভাইসেও যদি লিথিয়াম আয়ন
ব্যাটারি গরম হয়ে যায়, তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে এফডিএ চাইছে নিউরালিঙ্ক প্রাণী অধ্যয়নের মাধ্যমে বিষয়টির কোনো সমাধান সামনে নিয়ে আসুক।
যদিও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক বরাবরই বলে আসছেন, নিউরালিঙ্কের ব্রেন ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস পুরোপুরি নিরাপদ। ভবিষ্যতে নিজের সন্তানদের মস্তিষ্কেও এটি ইমপ্ল্যান্ট করতে আপত্তি নেই তার।
এদিকে এফডিএর উদ্বেগ প্রশমিত করতে প্রাণীর ওপর পরীক্ষাও জোরদার
করেছিল নিউরালিঙ্ক। উল্টো এ ইস্যুতে প্রাণী অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। যদিও নিউরালিঙ্ক বলছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রাণীদের বেশ ভালোই যত্ন নেওয়া হয়। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও তারা ইউটিউবে প্রকাশ করেছে।
নিউরালিঙ্ক কী?
নিউরালিঙ্ক মূলত ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস (বিএমআই) বা ব্রেন কম্পিউটার
ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। এ ধরনের প্রযুক্তিতে মানবমস্তিষ্কের সঙ্গে
সরাসরি কম্পিউটারের সংযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে শুধু মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার
ব্যবহার করা সম্ভব।
নিউরালিঙ্ক ডিভাইস কী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে?
২০২০-এর ইভেন্টে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এর মালিক ইলন মাস্ক জানান, ভবিষ্যতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা, ব্রেন ড্যামেজ, হতাশা, উদ্বেগ ও আসক্তি, এমনকি নিউরোসংক্রান্ত বহু সমস্যার সমাধান করবে নিউরালিঙ্ক। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ভবিষ্যতে নতুন কোনো ভাষা শেখা কিংবা কোনো দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে নিউরালিঙ্ক ডিভাইস মুহূর্তে তা মস্তিষ্কে আপলোড করে দেবে। এমনকি ব্রেনকে কপি করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী মাস্ক।
প্রাথমিক অবস্থায় প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্পর্শ করা ছাড়াই
মোবাইল ও কম্পিউটারের মতো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন নিউরালিঙ্ক দিয়ে।
কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তারা?
২০২২-এর শুরুতেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পরিচালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি
দেয় ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিঙ্ক। যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নতুন
ডিভাইস ট্রায়ালের আগে ট্রায়াল ডিরেক্টর নিয়োগ করে।
ডিরেক্টরের দায়িত্ব সম্পর্কে সে সময় বলা হয়েছিল, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিকে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে সৃজনশীল একদল ডাক্তার ও উচ্চমানের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
এর আগে বছরের ডিসেম্বরে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন,
২০২২ সালের কোনো একসময়ে নিউরালিঙ্ক মানবদেহে চিপ স্থাপন করবে। যদিও পরে নতুন এক ইভেন্টে
জানানো হয়, ২০২৩ সালের মের মধ্যে তা করা হবে। সবশেষ এফডিএর সিদ্ধান্তে তা-ও অনিশ্চয়তায়
পড়ল।
প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় অগ্রগতি কতটুকু?
এরই মধ্যে শূকর ও বানরের মস্তিষ্কের সঙ্গে নিউরালিঙ্ক ডিভাইসের সংযোগ
সাধন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে নিউরালিঙ্কের বানর পেইজা তো রীতিমতো নিউরালিঙ্ক ডিভাইসের
মাধ্যমে ভিডিও গেমও খেলেছে। ইলন মাস্ক পেইজার বিষয়ে বলেছেন, ‘সুখী বানর’।
পেইজার ভিডিওর ভয়েসওভারে বলা হয়েছিল, ‘নিউরালিঙ্ক তার ব্রেন চিপের মাধ্যমে বানরের মোটর কর্টেক্স অঞ্চলে প্রতিস্থাপন করা ২ হাজারের বেশি সূক্ষ্ম তারের ইলেকট্রোড ব্যবহার করে মস্তিষ্ক থেকে বৈদ্যুতিক সংকেত রেকর্ড ও ডিকোডের কাজ করে, যা সরাসরি কম্পিউটার ডিভাইসে পাঠায়।’
সূত্র : রাশিয়া টুডে