প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১০:০৫ এএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৮:৫০ পিএম
প্রাণ সৃষ্টির উপাদানগুলোর উৎস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। ইলাস্ট্রেটেড ছবি : নাসা
আমাদের পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি কীভাবে? এই মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর দীর্ঘদিন ধরেই খোঁজার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে প্রাণের সৃষ্টি ও বিকাশ নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব বিজ্ঞানমহলে আলোচিত হচ্ছে। যার মধ্যে একটি হলো, পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টির প্রধানতম উপাদানগুলো সম্ভবত পৃথিবীর বাইরে থেকে তথা মহাবিশ্ব থেকে এসেছে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ন্যাচার কমিউনিকেশনসে মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফলে প্রাণের উৎপত্তি-সংক্রান্ত ধারণাটি ‘পৃথিবীর বাইরের প্রস্তাবনা’র পক্ষেই গেছে।
প্রায় ৩০ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহাণু থেকে আসা ব্ল্যাক পার্টিকলসের টুকরা নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা এর মধ্যে জীবন সৃষ্টিকারী উপাদান পেয়েছেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিউগু নামের গ্রহাণু থেকে সংগৃহীত ১০ মিলিগ্রাম উপাদানের মধ্যে রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের (আরএনএ) বিল্ডিং ব্লক গঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যৌগ ইউরাসিলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই উপাদানটি সব প্রাণীর সব কোষের মধ্যেই রয়েছে।
রিউগু থেকে নিয়ে আসা ৫ দশমিক ৪ গ্রাম শিলা ও ধূলিকণার বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক গবেষণা এটি।
আরএনএ অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও ইউরাসিল নিয়ে গঠিত। যদিও প্রাণের ব্লু প্রিন্ট হিসেবে বলা হয় ডিএনএকে। একক আরএনএ কেবল গুরুত্বপূর্ণ বার্তাবাহকের কাজ করে। যার কাজ হলো, প্রোটিন সংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিএনএর দেওয়া নির্দেশকে বাস্তবায়ন করা।
বিজ্ঞানীরা এর আগেও পৃথিবীতে এসে আঘাত করা বেশ কয়েকটি গ্রহাণুতেও প্রাণ সৃষ্টি করতে সক্ষম উপাদান খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু তাদের পক্ষে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ছিল না যে, এটি উল্কাতেই ছিল, নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতেই এটি যুক্ত হয়েছে। কারণ পৃথিবীর যেখানেই গ্রহাণু পতিত হোক না কেন, সব জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে অণুজীব সৃষ্টির উপাদান। উল্কা পৃথিবীতে পড়ার পর এসব উপদান পৃথিবী থেকে উল্কায় স্থানান্তরিত হতে পারে। এ কারণে উল্কাপিণ্ডকে গুরুত্বপূর্ণ উৎসের ব্যাখ্যাকে আরও জটিল করেছে।
কিন্তু হায়াবুসা-টু মহাকাশযানের আনা উপাদানের ক্ষেত্রে এমন বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। বাস্তবিকই এর সঙ্গে পৃথিবীর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এবার প্রাণ সৃষ্টির উপাদান যে গ্রহাণুতেও থাকে, তা একেবারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু আসলেই কী এই উপাদান থেকেই পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ-তা জানতে আমাদের হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে।
এর সঙ্গে যুক্ত হোক্কাইদো ইউনিভার্সিটির গবেষক ইয়োশিরো ওবা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, রিউগু গ্রহাণুতে খুঁজে পাওয়া ইউরাসিল আরও একটি বিষয় নিশ্চিত করেছে, তা হলো পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির বহু আগেই এ ধরনের উপাদান গ্রহাণুর মাধ্যমে পৃথিবীতে এসে পড়েছিল।
হায়াবুসা-২ কে পৃথিবীর বাইরে প্রেরণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালে এবং সফলতার সঙ্গে গ্রহাণু থেকে নমুনা নিয়ে ক্যাপসুলে ঢুকিয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে ফেরত আসে।
তবে যেসব নমুনা এটি নিয়ে আসে, তার মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো, পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা কোনো গ্রহাণু থেকে প্রথমবারের মতো পানির ফোঁটাও সংগ্রহ করা গেছে।
সূত্র : এএফপি