প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩ ১০:৪২ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩ ১১:৩১ এএম
২০০৫ সালে আফ্রিকায় ৩৫ মাইল দীর্ঘ ফাটল দেখা দেয় যা পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট নামে পরিচিত। ছবি : সংগৃহীত
গবেষকরা বলছেন, আফ্রিকার ভূমিতে
ফাটল অব্যাহত রয়েছে। এখানে দূর ভবিষ্যতে একটি নতুন মহাসাগর তৈরি হতে পারে। ভূতত্ত্ববিদদের
কেউ কেউ মনে করছেন, ম্যাগমার অতিরিক্ত চাপের কারণে সেখানে বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটতে
পারে।
ম্যাগমা হলো গলিত
বা আধা-গলিত প্রাকৃতিক উপাদান, যা থেকে সমস্ত আগ্নেয় শিলা গঠিত হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠের
নিচে ম্যাগমা পাওয়া যায়। গলিত শিলা ছাড়াও ম্যাগমাতে গ্যাসের বুদবুদ থাকতে পারে।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফার
মুর ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ‘পৃথিবীতে এটাই (আফ্রিকা) একমাত্র জায়গা, যেখানে একটি
মহাদেশীয় ফাটল কীভাবে একটি মহাসাগরীয় ফাটলে পরিণত হয় তা নিয়ে আপনি গবেষণা করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, মহাসাগরীয় ভূত্বক (ক্রাস্ট) তৈরি হতে শুরু করেছে।
এটির গঠন এবং ঘনত্বের ক্ষেত্রে মহাদেশীয় ভূত্বকের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।’
ইথিওপিয়ার মরুভূমির ভূত্বকে এই
ফাটল তৈরি হয়। ফাটলটি কেনিয়া ও উগান্ডার মতো দেশগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে এবং
ফাটল বরাবর একটি নতুন সমুদ্র তৈরি হতে পারে। তবে গবেষকরা বলছেন, একটি নতুন মহাসাগর
সম্পূর্ণরূপে তৈরি হতে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
২০০৫ সালে আফ্রিকায় ৩৫ মাইল দীর্ঘ
ফাটল দেখা দেয়, যা পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট নামে পরিচিত। একজন সামুদ্রিক ভূ-পদার্থবিদ ও
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক কেন ম্যাকডোনাল্ড ম্যাশেবলকে
বলেছেন, ‘এডেন উপসাগর ও লোহিত সাগর আফ্রিকার আফার অঞ্চলে এবং পূর্ব আফ্রিকার রিফ্ট
উপত্যকায় প্লাবিত হবে এবং একটি নতুন মহাসাগরে পরিণত হবে। পাশাপাশি পূর্ব আফ্রিকার
ওই অংশটি পৃথক ছোট মহাদেশে পরিণত হবে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের জিপিএস প্রযুক্তি
রয়েছে, তাই কী ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা অনেক বেশি ধারণা পেতে পারি।’
আফ্রিকা মহাদেশের এই বিভক্তির কারণ
অজানা রয়ে গেছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, সমুদ্রের তলদেশে ঘটে যাওয়া কোনো টেকটোনিক প্রক্রিয়ায়
আফ্রিকার টেকটোনিক প্লেটের পরিবর্তন হচ্ছে।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, আফ্রিকার ফাটলটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সীমানায় রয়েছে, যা কিছু সময়ের জন্য
আলাদা হয়ে যাচ্ছে। প্লেটগুলো সোমালিয়ান টেকটোনিক প্লেট, নুবিয়ান টেকটোনিক প্লেট
এবং আরবীয় টেকটোনিক প্লেট হিসেবে চিহ্নিত। এসব প্লেট প্রতিবছর কয়েক মিলিমিটার করে
দূরে সরে যায়।
নিউ অরলিন্সের তুলান ইউনিভার্সিটির
একজন ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী সিনথিয়া এবিঙ্গার বলেছেন, ফাটলটি আফ্রিকার যে স্থানে সৃষ্টি
হয়েছে, সে স্থানটিতে গ্রহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে।
এনবিসি নিউজকে এবিঙ্গার বলেন, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে উষ্ণ জনবসতিপূর্ণ শহর আফারে। সেখানে দিনের তাপমাত্রা প্রায় ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠে যায়। তিনি বলেন, টেকটোনিক প্লেটের চলাচলে সাধারণত ‘কয়েকশ বছর’ সময় লাগে। তবে আফ্রিকার ওই ফাটল মাত্র কয়েকদিনে তৈরি হয়েছে। আমরা এটা বোঝার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, তার ধারণা ক্রমবর্ধমান ম্যাগমার চাপের কারণে এই অঞ্চলে বিস্ফোরণের মতো ঘটনারও জন্ম দিতে পারে।
সূত্র : ইকোনমিক টাইমস, ফক্স নিউজ, জেরুজালেম পোস্ট