টোকন ঠাকুর
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:৩৩ পিএম
কী সেই কবিতা, যা লিখতে পারিনি বলে আমাকে আজও লিখে যেতে হচ্ছে? আমি
জানি, আমার চেয়ে বেশি জানেন সাহিত্য সম্পাদক, আমি একটি কবিতা লিখতে পারব।
সেভাবেই লিখি। লেখা ছাপা হয়ে যায় কাগজে, সেই কাগজ হাতে নিয়ে তুমিও তো
পড়ো, পড়তে পড়তেই টের পাও, আমি যা লিখতে পারতাম, পারিনি। টের পান সাহিত্য
সম্পাদক, তিনি আবার এক ভোরবেলা দোয়েল পাখি, শিস দেন, আমি আবার লিখতে
বসি, লিখি, সেই লেখা তোমার হাতে গেলে তুমি আবারও টের পাও, হয়নি। আমার
সিসিফাসের কথা মনে পড়ে। বসন্তপুর গ্রামের পাশে কালিগঙ্গায় পুঁতে আসা আমার
বাল্যকাল ডাকঘর হয়ে যায়। আমি চিঠি লিখি বাল্যকালকে, আমার চিঠি বহে নিয়ে
যায় হাওয়া, হাওয়াই তো ডাক-হরকরা। সবাই জানে, চিঠিযুগ শেষ হয়ে গেছে। আমিও
কাগজে লেখা পাঠাই ইমেইলে, ইশারায়। ইশারায় লেখা পাঠানো যায়? যায়। আমার
ইশারায় পাঠানো লেখাগুলো ছাপা হয় জঙ্গলের গাছের পাতায়। সেই লেখাই আমার শ্বাস
প্রশ্বাস, গুঞ্জরিত হয়। জঙ্গলে শোনোনি পাতার মর্মর?
তাই বাল্যকালকে চিঠি লিখি। লিখতে লিখতে যদি সেই না লেখা কবিতাটি লিখে
ফেলতে পারি, আমি জানি, তারপর আমি অবসরে যাব। তারপর আর সাহিত্য
সম্পাদকের শিস আসবে না। তুমিও আমার অপেক্ষায় থাকবে না, যেন বা একটি যুগের
অবসান হয়ে যায়! যেন বা আমাদের আর দেখা না হলেও পৃথিবীর কোনও ক্ষতি নেই।
আমাদের আর কথা না হলেও পৃথিবীতে কথা বলে যাবে অন্য কেউ, ভালোবেসে যাবে
অন্য কেউ। শীত-কুয়াশায় রেল লাইনের উপর বসে থাকবে অন্য পাখি, ঘাসের ডগায়
শিশির দেখবে অন্য চোখ। কিন্তু সেই কবিতা তো আমি এখনো লিখতে পারিনি বলেই
অনন্তের দিকে তাকিয়ে আছি, সেই এক মূর্ছনা শুনব বলেই মহাকালব্যাপী উৎকর্ণ আছি!
সেই কবিতাটিই তো লিখতে চাই, যার মধ্যে আমি সম্পূর্ণ উপস্থিত থাকতে পারব,
তোমার পাঠেই পঠিত হবো। বিছানায়, তোমার বালিশের পাশে জেগে জেগে তোমার
ঘুম দেখব। তোমার নিঃশ্বাসের ওঠানামা দেখব। কবিতা হয়েই তোমার পাশে ঘুমিয়ে
পড়ব। দুপুরের রোদ ঘষে লেখা আমার কবিতা বা আমি পৌষের সারারাত তোমার কাছে
থাকতে পারব, ভাবতে পারব, সিসিফাস চূড়ায় পৌঁছেছে। একবার চূড়ায় বসে কি পৃথিবী দেখব না?
যদি সেই কবিতাটি লিখতে পারি, যদি তোমার ঘুমের পাশে সারারাত ভাঁজ করা
কাগজের পৃষ্ঠায় দুপুরের রোদে লেখা কবিতা হয়ে সম্পূর্ণ উপস্থিত থাকতে পারি, যদি
পরাগরেণুর সন্ধানে ফুলবনে ঘুরে মরতে পারি...