সিলেট অফিস
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৯ এএম
সুরমা নদী। ফাইল ফটো
বহুল প্রতীক্ষিত সুরমা নদী খনন কার্যক্রমের শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক বর্জ্য। নগরবাসীর ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য নদীর গভীরে মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে। এতে ড্রেজারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় চারদিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এভাবে চললে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ করা কঠিন হবে। নগরীর বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এই খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যদিও বড় পরিসরে না করায় বাস্তবে খননে কতটুকু কাজে দেবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরাও সন্দিহান।
গত ২১ জানুয়ারি সিলেট সদর উপজেলার মোঘলগাঁও ইউনিয়নের চানপুর খেয়াঘাটে সুরমা নদী খননকাজের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। চানপুরের পাশাপাশি নগরী-সংলগ্ন টুকেরবাজার এলাকায় খননকাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আজিম উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিনের জন্য কাজই করা যাচ্ছে না। যতক্ষণ ড্রেজারে খনন করা হয়, তারচেয়ে বেশি সময় যায় ড্রেজার পরিষ্কার করতে। গত বৃহস্পতিবার থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য কাজই বন্ধ রয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে তিন দফা বন্যায় নগরীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ১০-১৫ দিন পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে ছিল। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার জন্য নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ‘সিলেটের প্রাণ’ সুরমা নদীর নাব্য সংকটকে প্রধানত দায়ী করা হয়। ভারতের বরাক নদী জকিগঞ্জ সীমান্তে সুরমা ও কুশিয়ারায় ভাগ হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পুনরায় মিলিত হয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার ওপর দিয়ে ২৪৯ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে সুরমা। দীর্ঘ প্রবাহের মধ্যে মাত্র ১৮ কিলোমিটার নদী আপাতত খনন হচ্ছে।
প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ সুরমার কুচাই থেকে লামাকাজী পর্যন্ত সুরমা নদীতে এই খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পাউবো। সিলেটে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, নদীগর্ভে বিপুল পরিমাণ পলিথিনের স্তর জমেছে। এজন্য ২০-২৫ মিনিট পরপর মেশিন বন্ধ রেখে পরিষ্কার করতে হয়। এতে সময়মতো কাজ শেষ করা কঠিন হবে। তারপরও জুন মাসের মধ্যে খননকাজ শেষের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এমনকি নদীতে ৮-১০ ফুট উচ্চতায় পানি থাকলেও ড্রেজিং করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে সুরমা নদী খনন না করায় নব্য সংকটে নগরীর নিম্নাঞ্চল ও তীরবর্তী মানুষদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য ১০ বছরে সুরমা খননের চারটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পাশাপাশি তিনবার নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। নৌপথ পুনরুদ্ধারের জন্য সুরমা খননের প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রকল্পের কোনোটাই আলোর মুখ না দেখায় বানের পানিতে উপচে পড়ে সুরমা। জকিগঞ্জের অমলসিদে উৎসমুখে পলি জমে বিশাল চর জেগেছে, যা নদীর পানি প্রবাহকে বিঘ্নিত করছে।