মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৯ পিএম
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল ফটো
বরিশাল নগরীর অমৃতলাল সড়কের জেনারেল হাসপাতাল এলাকা, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত আইন মহাবিদ্যালয় এবং শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় ঘোষিত নীরব এলাকায় গাড়ির হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য সাধারণ মানুষ, গাড়িচালকদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রচারপত্রও বিলি করা হয়েছিল। আইন মহাবিদ্যালয় ও জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ বিষয়ে দুটি সাইনর্বোডও রয়েছে। কিন্তু কে মানে কার কথা। গাড়ির হর্নে সব সময় প্রকম্পিত থাকে এসব এলাকা। এমন শব্দদূষণ বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগও লক্ষ করা যায়নি।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সামনের দোকানি নাইমুল হক বলেন, যানবাহন চলাচলের সময় হাসপাতালে গেটের সামনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা হয়। এ সময় যানজটের সৃষ্টি হলেই পেছনে থাকা গাড়িগুলো উচ্চশব্দে হর্ন বাজাতে থাকে। গাড়ির চালকরা একত্রে যখন হর্ন বাজাতে থাকেন, তখন শব্দে এই এলাকায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কোনো সংস্থাই এ শব্দদূষণ রোধে উদ্যোগ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, নীরব এলাকায় শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু এক দিন প্রচারপত্র বিলি করে দায় শেষ হয় না। এর জন্য মাঝেমধ্যে আইনেরও প্রয়োগ করতে হয়। নীরব এলাকায় চলাচলরত যানবাহনের হর্ন বন্ধসহ অতিমাত্রায় ইঞ্জিনের শব্দ হওয়া গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে।
সরেজমিন ওই তিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল ও আবদুর রব সেরনিয়াবাত আইন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাইবোর্ড ঝোলানো আছে এবং তাতে লেখা রয়েছে, ‘সামনে নীরব এলাকা, নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ’। কিন্তু প্রত্যেকটি গাড়ি, থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেল হাসপাতাল দুটি ও আইন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেই উচ্চশব্দে হর্ন বাজাচ্ছে। এ ছাড়া নীরব এলাকার সড়কের দুই পাশেই বিভিন্ন যানবাহনে ঠাসা। অতিমাত্রায় শব্দদূষণের উচ্চঝুঁকি থাকায় এর শিকার হচ্ছে শিশু, রোগী ও শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ ঘটা করে জেনারেল হাসপাতাল এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে। একটি সাইবোর্ড ঝুলিয়ে তারা তাদের দায় সেরেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে, তা গত দেড় বছরেও দেখা যায়নি।
নীরব এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মনিটরিং না থাকায় যানবাহনচালকরা ঠিকই হাসপাতালের সামনে এসে উচ্চশব্দে হর্ন বাজিয়ে এক প্রকার প্রতিযোগিতায় নামে। গত দেড় বছরে সাইনবোর্ড লটকানো ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ কিংবা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এমনকি চালক ও সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার করা হয়েছে, এমনটি এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে পড়েনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীতে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ১৩১ ডেসিবল এবং সর্বনিম্ন ৫৪ ডেসিবল। যদিও শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবল। শব্দদূষণ ৬০ ডেসিবল হলে মানুষ সাময়িক বধির এবং ১০০ অতিক্রম করলে পুরোপুরি বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। উচ্চশব্দে হর্ন বাজানোর শাস্তি হচ্ছে ১ মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
বরিশাল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক মিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নীরব এলাকায় কেউ যাতে শব্দদূষণ না করে, সেজন্য আমরা মাঝেমধ্যে প্রচারপত্র বিলি করি। পাশাপাশি মাসে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার নিয়ম আছে। সেটা করার চেষ্টা করি। কিন্তু বরিশালে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই। তাই জেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হতে হয়। সেখান থেকে কোনো কোনো সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পেতে বিলম্ব হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের পক্ষে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য গাড়ির চালক এবং সাধারণ মানুষেরও সচেতন হতে হবে।