× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শহীদ সালামের পরিবারের চাওয়া পূরণ হয়নি

ফেনী প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২৭ এএম

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম। ফটো সংগৃহীত

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম। ফটো সংগৃহীত

ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। এখনও নানা আক্ষেপে দিন পার করছে ফেনীর দাগনভূঞার ভাষাশহীদ আবদুস সালামের পরিবার। দীর্ঘ সময়ে তাদের কয়েকটি চাওয়া পূরণ হয়নি।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আজিমপুর কবরস্থানে সালামের কবর চিহ্নিত করা হলেও টাইলস বাঁধাই করে সংরক্ষণ, দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টকে সালাম চত্বর নামকরণ, ঢাকা-ফেনী-দাগনভূঞার একটি সড়ক সালামের নামে নামকরণ, মহাসড়কের পাশে সালামের বাড়ি নির্দেশক তোরণ নির্মাণ, ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেজেট প্রকাশ। এদিকে স্থানীয়ভাবে শহীদ সালাম স্মরণে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তদারকির অভাব ও অযত্নে নানা সমস্যায় আছে।

২০১৭ সালে শনাক্ত হয় শহীদ সালামের কবর। ঢাকার আজিমপুরে শায়িত আছেন এই মহান ভাষাসৈনিক, জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা আনসার উজ্জামান। সালামের ছোট ভাই আবদুল করিম ও ভাতিজা মকবুল আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার উজ্জামান, অঞ্চল-৩-এর সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার হাফিজুর রহমান এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের উপস্থিতিতে ২০১৭ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি সালামের কবর শনাক্ত করা হয়।

আনসার উজ্জামান বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক শহীদ আবদুস সালামের কবর শনাক্ত করেছি। আজিমপুর কবরস্থানেই তিনি শায়িত আছেন। মেয়র ২১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবেন বলে কথা রয়েছে।’ পরিবারের সহযোগিতায় তার কবর শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোহরার হাফিজুর রহমান।

বিদ্যালয়ের নামকরণের গেজেট

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। তার স্মৃতি রক্ষায় সালামনগরে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ নুরজাহান বেগম বলেন, ‘নামকরণের পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত গেজেট প্রকাশ হয়নি।’

তোরণ নির্মাণ দাবি

সালামের বাড়ির পাশ দিয়ে চলে গেছে ফেনী-দাগনভূঞা-মাইজদী চার লেনের মহাসড়ক। দীর্ঘ ২০ বছর আগে এলাকাবাসী সড়কের পাশে সালামের বাড়ি নির্দেশক সাইনবোর্ড লাগায়। সড়কটি চার লেনে সম্প্রসারণের সময় ওই সাইনবোর্ডটি ভেঙে যায়। এরপর আর নির্মাণ হয়নি। এলাকাবাসীর দাবি, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ভাষা শহীদ সালামের গ্রাম দেখতে আসে। মহাসড়কে সালামনগর নির্দেশক তোরণ নির্মাণের দাবি করেছেন এলাকাবাসী। 

ভাষাশহীদ সালাম অডিটোরিয়াম

পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের নামে দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামটি ‘ভাষা শহীদ সালাম অডিটোরিয়াম’ নামকরণ করা হয়। নামকরণের ২ বছরের মধ্যে পরিত্যক্ত হওয়ায় তা নিলামে বিক্রি করা হয়। ভেঙে ফেলার ১৪ বছরেও নির্মিত হয়নি অডিটোরিয়ামটি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। ওখানেই অডিটোরিয়ামের নাম সালামের নামে রাখা হবে।’

স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার

ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে। বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ে কদর। শুরু হয় পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা। এ ছাড়া খবর রাখে না কেউ। তাই সালামের স্মরণে তার জন্মস্থানে আরও স্থাপনা তৈরির দাবি স্থানীয়দের। তাদের মতে, এটিকে দৃষ্টিনন্দন করা গেলে ফিরে পাবে প্রাণ। স্থানীয়রা জানান, সালামের স্মৃতি রক্ষায় দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ হলেও ভাষাশহীদের একটি ছবি ছাড়া নেই  কোনো স্মৃতিচিহ্ন। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যান দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন। 

আবদুস সালামের জীবন

ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর জন্ম হয় আবদুস সালামের। ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে সালাম সবার বড়। প্রথমে মাতুভূঞা করিম উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯৪২ সালে আতার্তুক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতা ফাজিল মিয়া কৃষিজীবী ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অভাব-অনটনে সালামের ম্যাট্রিক ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। নিত্য অভাব দেখে সালামের রোজগারের ইচ্ছে জাগে। পাঠ চুকিয়ে জেঠাতো ভাইয়ের হাত ধরে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে মতিঝিলে ডিরেক্টর অব ইন্ডাস্ট্রিজে পিয়নের চাকরি নেন।

বায়ান্নতে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে সালাম বাড়িতে আসেন এবং কিছুদিন ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে যান। তখন মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, মানতে হবে’ স্লোগানে রাজধানী ছিল আন্দোলন মুখর। ২৭ বছরের টগবগে যুবক সালাম জাতির জন্য, মায়ের ভাষার জন্য আন্দোলনে যোগ দেন। ছুটে যান মিছিলে। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সেই মিছিলে তিনিও যোগ দেন।

আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত গুলিবর্ষণে লুটিয়ে পড়েন সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিকসহ অনেকে। বুলেটবিদ্ধ সালামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টেলিগ্রামে খবর পেয়ে সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, জেঠাতো ভাই হাবিব ও প্রতিবেশী মকবুল আহমদ ঢাকায় ছুটে যান। দীর্ঘদিন সংজ্ঞাহীন থাকার পর ৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরদিন সকালে জানাজা শেষে আজিমপুর গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়। গ্রাম থেকে আসা সালামের পিতা, জেঠাতো ভাই ও প্রতিবেশী মকবুল জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

বর্তমানে ছোট ভাই আবদুল করিম সালামের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। ১৯৭৬ সালে সালামের পিতা ফাজিল মিয়া, ১৯৮২ সালে মা দৌলতের নেছা, ভাই সাহাব উদ্দিন, ১৯৯৯ সালে বোন কুরফুলের নেছা, ২০০২ সালে ভাই আবদুস সোবহান, ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি শহীদ সালামের ছোট বোন বলকিয়তের নেছা মারা যান। সালামের ছোট ভাই সুবেদার (অব.) আবদুল করিম জানান, সালামের স্মৃতিচিহ্ন বলতে কিছুই নেই। রক্তমাখা শার্ট আর একটি ছবি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খাজা আহমদ নিয়ে আর ফেরত দেননি।

পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পর শহীদ সালামের পরিবারকে ঢাকায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২০০০ সালে সরকার শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। এ ছাড়া আর কোনো সম্মান শহীদ পরিবারকে জানানো হয়নি। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখন সারা পৃথিবীর ১৮৮ দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ যারা প্রাণ দিয়ে রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছেন, সালামসহ তাদের পরিবারের চাওয়াগুলো বাস্তবায়ন করা এখন সবার দাবি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা