সিরাজুদ্দৌলা আরাফাত, শেকৃবি
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:২০ এএম
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ফটো
নবীন শিক্ষার্থী আসার সঙ্গে সঙ্গেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) চালু হয়েছে নতুন দুটি হল। ছেলেদের জন্য এক হাজার আসনের শেখ লুৎফর রহমান হল এবং মেয়েদের জন্য একই পরিমাণ আসনের শেখ সায়েরা খাতুন হল।
তবে সিট বণ্টন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এ দুটি হলে সিট বণ্টন করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এ নিয়ে প্রশাসন ও ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর জনবলের অভাবে বন্ধ থাকলেও ২৮ ফেব্রুয়ারি নবীনবরণের পরপরই খুলে দেওয়া হয়েছে হল দুটি। ওঠানো হয়েছে নবীন শিক্ষার্থীদের। কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালটির কোনো হলে আর গণরুম থাকবে না। যাতে নতুন শিক্ষার্থীদের গণরুমে থেকে আর কষ্ট করতে না হয়, তার জন্যই এ ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিরুমে চারজন করে আসন বণ্টন সম্পন্ন করেছি। এ ছাড়া গণরুমে থাকা ৮১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও নতুন হলে আসন দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে আর থাকতে দেওয়া হবে না।’
তবে সিট বণ্টনের দায়িত্বরত শিক্ষকদের অভিযোগ, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত ঠিকঠাক সিট বণ্টন চলতে থাকলেও বিপত্তি বাধায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সিট বণ্টনের দায়িত্ব নিতে চায় তারা।
জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নবীন শিক্ষার্থীদের সিট বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন। এ সময় শেখ লুৎফর রহমান হলের একটি কক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর সমঝোতায় আসতে ছাত্রলীগের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করতে দেখা গেছে হল প্রশাসনকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, নবীন শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ ছাড়া সিট পেয়ে গেলে তখন ছাত্রলীগকে আর মূল্যায়ন করবেন না। ভালো সিটের আশায় থেকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নেবেন না। এতে নিজেদের মান হারাবে ছাত্রলীগ। এ জন্যই নতুন হলে সিট বণ্টন নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তর, দক্ষিণ, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কুমিল্লা ও পাবনা-সিরাজগঞ্জ; এই ছয়টি আঞ্চলিক গ্রুপ রয়েছে। ক্যাম্পাসে এসব অঞ্চল ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিত। এসব গ্রুপের প্রধান কাজ প্রভাব বিস্তার করা।
ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় অঞ্চলভিত্তিক এসব গ্রুপের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিবছর স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় লোকবল বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপের নেতাকর্মীরা নবীন শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ গ্রুপে যুক্ত করেন।
শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার ভিত্তিতে তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। লিখিত কোনো নিয়ম না থাকলেও এসব আঞ্চলিক গ্রুপের নেতাকর্মীরাই আবাসিক হলের সিট বণ্টন করেন। বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। বিভিন্ন সময় এসব অঞ্চলের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে।
অন্যদিকে সিটবাণিজ্যের পুরোনো ট্যাগ রয়েছে ছাত্রলীগের ওপর। অভিযোগ রয়েছে, তাদের ছত্রছায়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থাকছেন বহিরাগত, অছাত্র ও চাকরিজীবীরা। ফলে নতুন হল নিয়ে আবারও সিটবাণিজ্যের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক আনিসুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম, ডাবলিং এবং সিট সংকট থাকবে না। এখন ৮১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিচতলা, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা এবং ৮০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও সপ্তম তলার কিছু অংশে ওঠানো হয়েছে। বাকি যাদের সমস্যা আছে, তাদেরও ক্রমান্বয়ে ওঠানো হবে।
হলে সিট বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সভাপতি মাসুদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘আমরা চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সিট পাক। সেদিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সিট দিচ্ছিল। তবে প্রতি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের সিনিয়রদের মাধ্যমে সিট পান, সেটি নিশ্চিতের জন্য আমরা গিয়েছিলাম।’