× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাঙামাটির নতুন দুঃখ শুষ্ক কাপ্তাই

রিকোর্স চাকমা, রাঙামাটি

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৭ এএম

কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর ও ঘাছের গুঁড়ি। ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে নৌযান। প্রবা ফটো

কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর ও ঘাছের গুঁড়ি। ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে নৌযান। প্রবা ফটো

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগ কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এ হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে।

গত ৬০ বছরেরও বেশি সময় হ্রদে কোনো ড্রেজিং বা খনন হয়নি। জেগে উঠছে অসংখ্য ডুবোচর ও গাছের গুঁড়ি। ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে নৌযান। গাছের গুঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে চরম সংকটে পড়েছেন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা। ঝুঁকি নিয়ে হ্রদে ভ্রমণ করতে হচ্ছে পর্যটকদের। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা সদরের সঙ্গে লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথ। কাপ্তাই উপজেলায় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা থাকলেও নৌপথেও যাতায়াত করা যায়। অন্য উপজেলার মধ্যে নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় খাগড়াছড়ি জেলা ঘুরে বিকল্প সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। তবে সময় ও খরচ বেশি লাগে।

হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি, নানিয়াচর, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ির সঙ্গে জেলা সদরের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চার উপজেলার যাত্রীসাধারণসহ ব্যবসায়ীরা। তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে। বাকি দুই উপজেলা লংগদু ও বরকলে কোনোমতে লঞ্চ চলাচল করলেও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, রাঙামাটি থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলা সীমানা নতুন বাজার পর্যন্ত আসে। এরপর ছোট ট্রলারে জুরাছড়ি রাস্তার মাথা পর্যন্ত এসে মোটরসাইকেলে উপজেলা সদর পর্যন্ত আসতে হয়। এতে চার-পাঁচগুণ ভাড়া বেশি লাগে। জুরাছড়ি উপজেলার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এখানকার লোকজন। 

বিলাইছড়ির মো. কুদ্দুস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, হ্রদের পানি ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে একসময় শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা শহর থেকে মালামাল নিয়ে আসতে খুবই ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরিবহন খরচও বেশি পড়ে। 

লংগদু উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরমান খান বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মানুষের যাতায়াসহ পণ্য পরিবহনে বেশ ভোগান্তি হচ্ছে। বর্তমানে বাঘাইছড়ির সঙ্গে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক মাত্রায় পানি কমে গেছে। ফলে জেলা সদরের সঙ্গে চার উপজেলায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লংগদু কাট্টলী মিনা বাজার পর্যন্ত বরকলে কোনোমতে লঞ্চ চললেও খুব কষ্ট করে সেবা দিতে হচ্ছে। হয়তো সপ্তাহখানেক পরে চলাচল পরোপুরি বন্ধ করতে হবে। হ্রদের নাব্য ঠিক রাখতে দ্রুত খনন প্রয়োজন। পাশাপাশি গাছের গুঁড়িগুলো চিহ্নিত করে অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১৯৫৬ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হলে জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। তখন বলা হয়েছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষ, নৌযোগাযোগ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হবে। এরপরে ৬০ বছরেরও বেশি সময় হ্রদে কোনো ড্রেজিং বা খনন হয়নি।

বছর বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পলি জমে হ্রদ ভরাট হয়ে পানি কমতে থাকে। এ ছাড়া হ্রদের পাড় দখল করে গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা। নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবনও। পাহাড়ের পাদদেশে এবং ভাসমান টিলায় আশেপাশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বসতি। ফলে হ্রদ হারাচ্ছে নাব্যতা। দেখা দিয়েছে নৌযান চলাচলে সংকটসহ নানামুখী সমস্যা।

হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর আর গাছের গুঁড়ি। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের সময় নৌ চলাচলের সুবিধার্থে নিচু এলাকার গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছিল। তবে রাঙামাটি ডিসি বাংলো এলাকায় বড় বড় গাছ মাটির লেভেলে থাকায় কেটে ফেলা সম্ভব হয়নি। অর্ধেক কেটে রাখা এসব গাছের শিকড় বা গুঁড়ি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাছের গুঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকাডুবির ঘটনায় জয়পুরহাট থেকে আসা দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। শহরের ঝুলন্ত সেতু এলাকা থেকে রির্জাভ বাজারে যাওয়ার পথে জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নৌযানের চালকরা জানান, কাপ্তাই হ্রদের একাধিক স্থানে পানির নিচে গাছের গুঁড়ি রয়েছে। পানি বেশি থাকলে সেগুলো নিচে পড়ে থাকায় নৌযান চলাচলে সমস্যা হয় না। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো জেগে ওঠে। পানির ওপরে জেগে ওঠা গাছের গুঁড়ি দেখলে সতর্কভাবে নৌযান চালানো যায়। কিন্তু পানির সামান্য নিচে থাকা গুঁড়ি দেখা যায় না। মূলত এগুলোর সঙ্গেই ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা গাছের গুঁড়িগুলো চিহ্নিত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। 

হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটিই বন্ধ রয়েছে। পানির অভাবে যেকোনো সময় সেটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পানি স্বল্পতার কারণে চারটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। হ্রদের পানি বৃদ্ধি না হলে এই উৎপাদন সক্ষমতা সচল রাখা যাবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। মার্চ মাসে গরম শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন সব ইউনিট চালু করে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রয়োজন হবে। 

জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় অসংখ্য ডুবোচর ও গাছের গুঁড়ি জেগে উঠেছে। যেখানে দুর্ঘটনা হয়েছে, সেখানে এরই মধ্যে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে কথা হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদসহ সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ ড্রেজিংয়ের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে নাব্যতাসহ অন্যান্য সংকট কেটে যাবে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, কাপ্তাই হ্রদ থেকে ভারত সীমান্ত টেগামুখ পর্যন্ত খননের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ের মানুষের দুর্ভোগ ঘুচবে। পাশাপশি যোগাযোগ, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা