× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আইনে নেই, এনআইডি তবুও বাধ্যতামূলক!

হুমায়ূন কবীর

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩ ১৬:১০ পিএম

আইনে নেই, এনআইডি তবুও বাধ্যতামূলক!

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিকের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত নাগরিক সেবা পেতে এটি বাধ্যতামূলক করা যাবে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একটি প্রজ্ঞাপনও জারি রয়েছে। তবু বর্তমানে পাসপোর্ট, সিম রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও হজ রেজিস্ট্রেশনসহ নানা ক্ষেত্রে এনআইডি এক রকম বাধ্যতামূলক করে রাখা হয়েছে। 

আবার বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এনআইডি আমলে না নিলেও যোগদানের পর সার্ভিস বইয়ের তথ্য ও এনআইডির তথ্যে মিল না থাকলে বেতন-ভাতা আটকে যাচ্ছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই নাগরিকরা। এনআইডি সংশোধনের জন্য তারা ইসিতে ভিড় জমাচ্ছেন। এসব এনআইডি সংশোধন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে ইসি। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এখন চিঠি দেবে কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু চাকরি পাওয়ার আগে তার এনআইডি আমলে নেওয়া হয়নি বা তিনি তার তথ্য গোপন করেছেন। চাকরি পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তার সার্ভিস বই ও এনআইডির তথ্যে মিল নেই। তখন তার বেতন আটকে যাচ্ছে। তারা এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদন করছেন।’ 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছি। নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে চাকরি দেওয়ার আগেই যেন এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ কারণে এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও চিঠি দেওয়া হবে। 

সম্প্রতি ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যাদি আমলে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগদান এবং অন্যান্য সেবা প্রদান’ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। সভায় ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ অনুযায়ী কতিপয় সেবা গ্রহণে এনআইডি বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুসারে এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন নির্ধারণ ও দেওয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে ই-পাসপোর্ট, সিম রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, হজ রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এনআইডি এক রকম বাধ্যতামূলক করে রাখা হয়েছে।

এর আগে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইসির তৎকালীন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ সংক্রান্ত একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়েছিলেন। ইসি সচিবের এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একই বছর ৫ মার্চ এ বিষয়ে এনআইডির তথ্য বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তখন এনআইডি উইং থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরেও চিঠি দেওয়া হয়। 

২০১৯ সালে কমিশনের সে সময়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের এ সংক্রান্ত চিঠিতে জানানো হয়েছিল, ‘চাকরি বেতন ও ভাতাদি আদেশ-২০১৫’-এর ৩৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণ/বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এনআইডির তথ্যাদির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে চাকরি দেওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রেই এনআইডিতে লিপিবদ্ধ তথ্যাদি লক্ষ করা হচ্ছে না বা এনআইডি নেওয়া হলেও এর সঠিকতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে না। ফলে চাকরি পাওয়ার পর ‘পে ফিক্সেশন’ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের তখন এনআইডি অনুবিভাগে যেতে হচ্ছে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

সম্প্রতি এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চাকরি পাওয়ার পর এনআইডির তথ্যের সঙ্গে নিয়োগপত্র/সার্ভিস বইয়ে লিপিবদ্ধ তথ্যে মিল না পাওয়া গেলে পে ফিক্সেশন সম্ভব হয় না। সরকারি চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্ট ব্যবহার করে বয়স কম দেখিয়ে কেউ কেউ চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পেলেও পরে পে ফিক্সেশন না হওয়ায় তারা আর্থিক ক্ষতিসহ মারাত্মক ভোগান্তি ও হয়রানির মুখোমুখি হন। এনআইডির তথ্য আমলে না নিয়ে সরকারি দপ্তরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত বিকৃতি করাসহ নানা অসদুপায় অবলম্বনের প্রবণতাও রয়েছে। কেউ কেউ ভোটার তথা নিবন্ধনকালে একটি জন্মসনদ ব্যবহার করেন। পরে ভিন্ন আরেকটি জন্মসনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন। কিন্তু এরপর এনআইডি সংশোধন করতে এলে আবেদনকারীর পিতা-মাতার বয়সের সঙ্গে তার নিজের বয়সের অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে সহোদর ভাই-বোনের বয়সের ক্ষেত্রে ক্রোনোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারও দেখা দেয়। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জন্ম তারিখ গোপন করে অনেকে চাকরিতে যোগ দেওয়ায় যোগ্য ব্যক্তি বঞ্চিত হন। 

এ সংক্রান্ত সভায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে কর্মরত এমন চারজনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়, যারা এ ধরনের সমস্যা নিয়ে এনআইডি সংশোধনের আবেদন করেছেন। এদের একজন ফায়ার সার্ভিসে ড্রাইভার পদে কর্মরত আরমান খান (ছদ্মনাম) একজন। তিনি ভোটার হয়েছেন ২০০৭ সালে। তার এনআইডি সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। সেখানে তার জন্মবছর ১৯৯০ সাল। কিন্তু এনআইডিতে তার জন্মসাল ১৯৮০। তিনি এখন চাইছেন তার চাকরিক্ষেত্রের সার্ভিস বই, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এনআইডির জন্মতারিখকে মিল করতে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারিবারিক সনদ পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, এনআইডির তথ্য অনুযায়ী জন্মের ক্রম অনুসারে বড় বোনের সঙ্গে আবেদনকারীর বয়সের পার্থক্য ৮ বছর। কিন্তু তার চাহিত জন্মসালের সঙ্গে পার্থক্য দাঁড়াচ্ছে ১৮ বছর, যা অস্বাভাবিক। আবেদনকারীর পিঠাপিঠি দুই ভাই-বোনের এনআইডি নম্বর না থাকায় সেগুলো যাচাই করা যায়নি। তার নামে ২০১৯ সালে ইস্যু করা লাইসেন্স ও ২০১৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দেওয়া জন্মসনদে জন্মসাল ১৯৯০। নবম শ্রেণির প্রত্যয়নপত্রেও জন্মসাল ১৯৯০। অবশ্য ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, সনদটি তার বিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়নি। 

এনআইডি সংশোধনের বিষয়ে এই আবেদনকারী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার এনআইডি ঢাকা থেকে বছরখানেক আগে সংশোধন করা হয়েছে।’ অন্যান্য ডকুমেন্টের সঙ্গে এনআইডিতে উল্লিখিত বয়সের ১০ বছর পার্থক্য থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটার হওয়ার সময় বিষয়টি লক্ষ করা হয়নি। মা-বাবা অনুমান করে বয়স দিয়েছিলেন।’ 

পরে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, তথ্য গোপন করে চাকরি পাওয়ার পর এনআইডির বিভিন্ন তথ্য সংশোধনের বিদ্যমান আবেদনগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর/সংস্থার মতামত নিতে হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে। 

ওই সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের এনআইডি যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা থেকে অফিশিয়ালি সহযোগিতা চাইলে সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে যাচাইয়ের সুযোগ দিতে হবে। 

প্রসঙ্গত, চাকরি সংক্রান্ত এনআইডি সংশোধনের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এনআইডি উইংয়ের পরিচালককে (অপারেশন্স) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত ‘তথ্য গোপন করে চাকরি প্রাপ্তির পর জাতীয় পরিচয়পত্রে বিভিন্ন সংশোধন সংক্রান্ত কমিটি’ চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৫৭টি আবেদন নিয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে ৪১১টি অনুমোদন, ১৫৮টি বাতিল এবং ২৮৮টি আবেদন বিভিন্ন তথ্য ও তদন্তের জন্য মাঠপর্যায়ে রয়েছে। এই কাজ করতে এই কমিটিকে ৩৭টি সভা করতে হয়েছে। 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করা হয়। পরে ১৫ ডিসেম্বর নতুন পে-স্কেলের গেজেটেও বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। এরপর এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা ও পেনশন নির্ধারণ শুরু হওয়ার পর ইসিতে এ সংক্রান্ত এনআইডি সংশোধনের হিড়িক পড়ে। এই ঘোষণা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তখন লাখের বেশি সরকারি চাকরিজীবী এনআইডি সংশোধনের আবেদন করেন। সমস্যাটি এখনও রয়ে যাওয়ার এটি সমাধানে আবারও উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা