× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মোটা চালের বাজারকে অস্থির বলছে বিশ্বব্যাংক

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৯:২৪ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

গত এক বছরে বাংলাদেশে খাদ্যমূল্য তেমন না বাড়লেও গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় মোটা চালের বাজার বর্তমানে উচ্চমূল্যের ছোঁয়ায় অস্থির বলে মূল্যায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। গত ১৩ মার্চ সর্বশেষ বিশ্বখাদ্য নিরাপত্তা-বিষয়ক আপডেটে বাংলাদেশ অংশে এ মূল্যায়ন করা হয়। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে সাধারণত উচ্চমূল্যের জন্য দায়ী স্থবির উৎপাদন ও মজুদ লোকসান। ২০২২ সালের বন্যা, কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, কম বাণিজ্যপ্রবাহ ও ডলারের উচ্চমূল্য এক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী। 

ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক এ-ও জানাচ্ছে, বাংলাদেশে গমের আটার দাম বাড়তে শুরু করেছে। আমদানিতে যথেষ্ট মন্দা, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও উচ্চ পরিবহন খরচের কারণে গমের দাম ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এদিকে মোটা চালের দামও অস্থির। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বোরো ফসল অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে অনুকূল ভূমিকা রাখছে। তা ছাড়া সরকারি শস্যভান্ডারও পুনঃমজুদ করা হচ্ছে। 

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল সর্বনিম্ন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত শুক্রবার ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় মুদি দোকানি লিমন বলেন, আটাশ চাল নামে পরিচিত মোটা চাল ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এটিই সবচেয়ে কম দামের চাল। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। 

এর আগে ৯ মার্চের এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে লিখেছিল, ২০২২ সালের মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এপ্রিলে ১ শতাংশ কমে তা নেমে আসে ৬ দশমিক ২ শতাংশে। আগস্টে গিয়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯ শতাংশে। ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে বছর শেষ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেটি আরও কমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে।

প্রতিবেদনটিতে বিশ্বজুড়ে দেশীয় খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বগতির কথা জানানো হয়। বলা হয়, ২০২২ সালের অক্টোবর এবং এর পরবর্তী সময়ের পঞ্চম মাসে তথা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যমূল্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় সমস্ত নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৯৪ দশমিক ১ থেকে ৫ শতাংশের ওপর, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৮৬ শতাংশ এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৮৭ দশমিক শূন্য শতাংশ। আবার অনেক দেশ দ্বি-সংখ্যার মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি।

উপরন্তু উচ্চ-আয়ের দেশগুলোর প্রায় ৮৭ দশমিক ৩ শতাংশ উচ্চখাদ্য মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষতি সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য বিশ্বব্যাংকের।

দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কৃষি এবং খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক যথাক্রমে ২ থেকে ৫ শতাংশ কমে থমকে আছে। তবে রপ্তানি মূল্যসূচক একই স্তরে বন্ধ হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ভুট্টা, গম ও চালের দাম কমার পর আর বাড়েনি অর্থাৎ এসবের দাম যথাক্রমে ৬, ৭ ও ২ শতাংশ কম। 

বার্ষিক ভিত্তিতে ভুট্টা এবং গমের দাম ১৫ শতাংশ কম, সেখানে চালের দাম ১৯ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের জানুয়ারির তুলনায় ভুট্টা এবং গমের দাম যথাক্রমে ২৪ এবং ৭ শতাংশ বেশি। সেখানে চালের দাম ৩ শতাংশ কম।

অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেট ইনফরমেশন সিস্টেম (এএমআইএস) মার্কেট মনিটরের মার্চ ২০২৩ সংস্করণে ইউক্রেনের যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় কৃষিবাজারে বিরাজিত অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ইউক্রেনীয় উৎপাদনস্বল্পতা, বৈশ্বিক মজুদ পুনর্নির্মাণ এবং দামের চাপকে সহজ করতে অন্য দেশগুলোকে অতিরিক্ত শস্য এবং তৈলবীজ রোপণ করতে হবে। যদিও অনুকূল আবহাওয়া এবং শক্তিশালী সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় বাজারমূল্য ২০২২ সালের প্রথম দিকের স্তরে ফিরে আসতে পারছে না।

বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য, সর্বোচ্চ শিখর থেকে নেমে আসার পরও বেশিই রয়ে গেছে। তার ওপর নতুন রপ্তানি বিধিনিষেধ আবারও দাম বাড়াতে পারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের এক বছর পর রপ্তানি-সীমিতকরণের অনেকগুলো পদক্ষেপ বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু কোটা, লাইসেন্স এবং সরাসরিসহ ১০১টি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ। অনুমান করা হয়, এই বিধিনিষেধগুলো ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ১১ শতাংশেরও বেশি খাদ্য বাণিজ্য সামাল দিয়েছে, যা আবার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জন্য দায়ী।

ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) বিগত বছরের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে আরও যেসব অনিশ্চয়তা রয়েছে, তা পর্যালোচনা করেছে। দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনের যুদ্ধ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বিশ্ব গম বাণিজ্য, ১৭ শতাংশ বিশ্ব ভুট্টা বাণিজ্য এবং প্রায় ৭৫ শতাংশ বিশ্ব সূর্যমুখী বাণিজ্যকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এর ফলে যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে গমের ভবিষ্যৎ দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়; ভুট্টা এবং সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। বিশ্ব খাদ্যমূল্যে আরেকটি সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলেও সংকটাপন্ন কৃষি বাণিজ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।

এদিকে ফুড ক্রাইসিস ২০২২ মিডইয়ার আপডেটের গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, কমপক্ষে ২০৫ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হবে এবং ৪৫টি দেশে জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

খাদ্যনিরাপত্তা সংকটের ব্যাপক ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে, এপ্রিল ২০২২ সালে বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করেছিল, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বাড়াতে, ঝুঁকি কমাতে এবং খাদ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে অর্থায়নসহ চারটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। যার মধ্যে রয়েছেÑ উত্পাদক ও ভোক্তাদের সহায়তা করা; খাদ্য ও বাণিজ্য ইনপুটগুলোতে বর্ধিত বাণিজ্য সহজতর করা; দুর্বল পরিবারগুলোকে সমর্থন করা এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করা।

ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের প্রধানরা সম্প্রতি যৌথ বিবৃতি দেন। এতে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সংকটের অবনতি রোধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এখানে জরুরি তিনটি পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে ঘোষণা করা হয়। এগুলো হলোÑ ক্ষুধার হটস্পটগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়া; বাণিজ্য সহজতর করা, বাজারের কার্যকারিতা উন্নত করা; এবং বেসরকারি খাতের ভূমিকা উন্নত করা এবং সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিকারক ভর্তুকি সংস্কার ও পুনঃপ্রয়োগ করা। 

আরও বলা হয়, দেশগুলোর উচিত হবে স্বল্পমেয়াদি জরুরি হস্তক্ষেপের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপক প্রচেষ্টার ভারসাম্য বজায় রাখা। যাতে তারা সংকটে সাড়া দেয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা