শহিদুল ইসলাম রাজী
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৯ পিএম
ফাইল ফটো
ইন্টারনেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ফাইবার নেটের অফিসে ব্যস্ত আলী বিন তালহা। হঠাৎ ইউনিফর্ম পরা পুলিশের দুই কর্মকর্তা এবং সঙ্গে একজন সিভিল পোশাকের যুবক অফিসে প্রবেশ করেন। যুবকটি তার ব্যাগের চেইন খুলে কিছু একটা বের করছিলেন। তাতেই সন্দেহ জাগে তালহার। জানতে চান ব্যাগের ভেতর কী। তখনই শুরু হয় বিপত্তি।
তালহা যুবকটিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে?’ তখন তার উত্তর, ‘পুলিশের লোক।’ এরই মধ্যে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের লোকজন। মুহূর্তে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। সবাই দেখতে চান পুলিশের আনা ব্যাগের ভেতর কী আছে। লোকজন পুলিশকে ঘিরে রাখেন। তালহা জাতীয় জরুরি সেবায় (৯৯৯) কল করে সহায়তা চান। খবর পেয়ে রামপুরা থানা থেকে পুলিশ আসে। পুলিশের সেই দুই কর্মকর্তা ও যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় গাঁজার পোঁটলা। ঘটনাটি গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর পূর্ব রামপুরার জামতলা শহীদ মিনার রোডে।
পরে অবশ্য রামপুরা থানা পুলিশের দাবি, একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কোন মামলায় কী অভিযোগ তা বলতে পারেননি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গোলাম মাওলা।
ঢাকা ফাইবার নেটের স্টাফ আজমীর হোসেন বলেন, ‘পুলিশ আমার মালিককে ফাঁসাতে গাঁজা নিয়ে এসেছে।’ তাদের পুরো ঘটনা ভিডিও করেন স্থানীয় লোকজন। ওই ভিডিওর অনেক অংশ প্রতিদিনের বাংলাদেশও পেয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এএসআই রাসেলের হাতে একটি ব্যাগের চেইন খোলা। গাঁজার পোঁটলা হাতে একজন ব্যক্তি পুলিশের দিকে দেখিয়ে বলছেন, ব্যাগে গাঁজা ক্যান? অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এএসআই রাসেলকে।
এর আগে ঘটনাস্থল রাজধানীর পূর্ব রামপুরার জামতলা শহীদ মিনার রোডের সাধারণ জনতা উত্তেজিত। চারপাশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে দুই পুলিশ সদস্য এএসআই রাসেল ও এসআই নূরুলকে। তাদের ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চান জনগণ।
স্থানীয়দের দাবি, ওই ব্যাগে আরও গাঁজা আছে। এ সময় তার সঙ্গে সিভিল পোশাকে আরও একজন ছিলেন, তাকেও খোঁজা হয়। ঘণ্টাখানেক উত্তেজনা বিরাজ করে ওই এলাকায়। পরে রামপুরা থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে জনতার হাত থেকে ছাড়া পান ওই দুই কর্মকর্তা।
ঢাকা ফাইবার নেটের মালিক আলী বিন তালহা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ওনাদের নাম জানতে চাইলেও কেউ নাম বলছিলেন না। আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তাও দেখাননি। দেখলাম সিভিল পোশাকের লোকটা তার ব্যাগের চেইন খুলে কী একটা বের করছেন। তখনই মনে হলো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। আমি তাকে (যুবক) বললাম, আপনি কী বের করতেছেন, থামেন। আগে আপনার পরিচয় দেন। তখন আমার স্টাফরা আর পাশের লোকজন এসে বিষয়টি দেখলেন এবং তারা ব্যাগটি নিয়ে খুলে দেখেন তাতে গাঁজা ভরা।’
এক প্রশ্নের জবাবে তালহা বলেন, ‘এক লোকের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। ওনার সঙ্গে এখনও আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক, লেনদেন চলতেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে টুকটাক কিছু বকেয়া পড়ে। ওইটার একটা ইস্যু নিয়ে তারা আমায় হয়রানি করার জন্য গাঁজা দিয়ে ফাঁসাতে চাইছিল। তারা এসে ওই বিষয়ে কথা বললেই পারত।’
ওই প্রতিষ্ঠানটির পাশের দোকানি রকি জানান, ‘তালহা একটা সিগারেটও পর্যন্ত খান না। অথচ তাকে গাঁজা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা হলো।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে রামপুরা থানার এসআই নূরুলকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। পরে এ সম্পর্কে রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মাওলা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের একটু ঝামেলা হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পুলিশের ব্যাগে গাঁজা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি আমার জোনাল এসিকে দেখার জন্য পাঠিয়েছি। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা দেখে জানাব।’