বিশেষ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫১ এএম
ফাইল ফটো
জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পে প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। বোতলজাত অক্সিজেন থাকে ইয়ার্ড ও ইস্পাত কারখানাগুলোতে। জাহাজ কাটা কিংবা রড উৎপাদনে ওয়েল্ডিং সেকশনে প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। বলা চলে, অক্সিজেন ছাড়া এই দুই শিল্প অচল। ফলে দুই শিল্পের প্রয়োজনে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে ১৫টি অক্সিজেন কারখানা।
এখন জাহাজ ভাঙা শিল্প ও রড উৎপাদন কারখানাগুলোর দুরবস্থা শুরুর পর একে একে বন্ধ হচ্ছে অক্সিজেন কারখানাগুলোও। অথচ শিল্পের প্রয়োজনে স্থাপিত অক্সিজেন কারখানাগুলো করোনা মহামারির সময় তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করেছিল। তখন সরকারি সিদ্ধান্তে এবং বেসরকারি পর্যায়ের কিছু অক্সিজেন কারখানা মালিকের দানের সুবাধে করোনা আক্রান্ত রোগীরা বিনামূল্যে অক্সিজেন পেয়েছিলেন। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনাকালীন চিকিৎসা খাতে কখনও অক্সিজেনের সংকট হয়নি। এমন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে বৃহৎ দুটি শিল্পের দুরবস্থার কারণে।
দেশে চাহিদার প্রায় অর্ধেক অক্সিজেন জোগান দেয় লিন্ডে বাংলাদেশ নামের একটি অক্সিজেন উৎপাদন কারখানা। এটি সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত। কারখানাটি এখনও চালু আছে।
শিপইয়ার্ড, জাহাজ ভাঙা কারখানা ও ইস্পাত কারখানা সূত্রে জানা গেছে, চালু থাকা সব শিপইয়ার্ডে প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এর বাইরে ইস্পাত কারখানার মধ্যে বিএসআরএম, কেএসআরএম, জিপিএইচসহ শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত কারখানাগুলোর ওয়েল্ডিং সেকশনে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। এটি না হলে মেশিন আটকে যায়। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া চেসিস ও পার্টস সংযোজন, অটোমোবাইল ও গাড়ির ওয়ার্কশপসহ নানা কাজে অক্সিজেন ব্যবহার হয়।
অত্যধিক প্রয়োজনীয় এই অক্সিজেন কারখানা বন্ধ হচ্ছে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে। জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড ঘিরে চট্টগ্রামে ১৫টি অক্সিজেন কারখানা গড়ে উঠলেও গত দুই বছরেই সাতটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো রিগ্যাল অক্সিজেন লিমিটেড, এআরএল অক্সিজেন লিমিটেড, এসএল অক্সিজেন লিমিটেড, ফয়জুন অক্সিজেন লিমিটেড ও রাইজিং অক্সিজেন লিমিটেড। চার মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড। সে কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদন হতো। সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি বিস্ফোরণের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট।
এখনও বন্ধ না হলেও বন্ধের পথে থাকা কারখানাগুলোর একটি সীতাকুণ্ডের কেআর অক্সিজেন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৭০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদন করে। মূলত জাহাজ ভাঙার কাজে এসব অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অক্সিজেনের চাহিদা কমে গেছে। এ ছাড়া অক্সিজেন উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে কারখানা এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ৫-৭টি সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদিত হচ্ছে। এতে মাসে ৩৫-৪০ লাখ টাকা লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। কারখানাটির শ্রমিক সংখ্যাও ১৫০ থেকে ৮৫ জনে নেমে এসেছে।
কেআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, ‘কারখানায় মাত্র ৩৫-৪০ জন কর্মী রয়েছে। কর্মীদের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুৎসহ মাসে কারখানা ব্যয় অন্তত ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে উৎপাদন কমায়। তাই আগামী মাস থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’