× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পর্যটক বরণে প্রস্তুত দুই সৈকত

কক্সবাজার অফিস ও পটুয়াখালী প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৮ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ২০:২০ পিএম

কক্সবাজার সমুদ্র  সৈকত।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটক বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার ও সাগরকন্যা কুয়াকাটার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এবার ঈদের ছুটিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয়ের আশা করছেন কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায়ও বেড়েছে পর্যটক। এই ঈদে কুয়াকাটায় দুই লক্ষাধিক পর্যটক আসবেন বলে আশা করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। 

কক্সবাজারে ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানে রঙ করা ও ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদের ছুটি পাঁচ দিন হলেও টানা সাত দিন কক্সবাজারে পর্যটকরা ভ্রমণে আসবেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এই সময়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তারা।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ঈদের ছুটি পাঁচ দিন হলেও টানা সাত দিন কক্সবাজারে পর্যটক আসবেন। অনেক পর্যটক ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এবার প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন।

বৈশাখের উত্তাল সাগর এসব পর্যটকদের দেবে ভিন্ন আমেজ। ফেডারেশনভুক্ত আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউসে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে টানা সাত দিনে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন তিনি।

আবুল কাসেম সিকদার আরও বলেন, কেউ যদি ছাড় না দেন পর্যটকরা যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি ছাড়ের ব্যবস্থা করে দেবেন।

কক্সবাজার সমুদ্র  সৈকত।

আবাসিক হোটেল সীগালের সহকারী ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ রাব্বী বলেন, ঈদে পর্যটক বরণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন তারা। খুব বেশি না হলেও আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে আসবেন, এমনটাই আশা করছেন। এজন্য আলাদা আলাদ বিশেষ প্যাকেজও রয়েছে।

বৃহত্তর বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠবে কক্সবাজার। ইতোমধ্যে পর্যটক বরণে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক সেবা দেবেন তারা।

হোটেল দি কক্স টু-ডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পর্যটকরা এলেই পরিচ্ছন্ন হোটেল দেখবেন।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় আবারও চিরচেনা রূপে ফিরবে সৈকতসহ পর্যটন এলাকা। নিরাপত্তা জোরদার করে পর্যটকদের সেবা দিতে প্রস্তুত তারা। এজন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন। 

শেহরিন আলম জানান, সৈকত ছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্পটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ সৈকতের প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, সৈকতে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। সৈকতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য দল গঠন করা হয়েছে।

সাগরকন্যা কুয়াকাটায় একই স্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। এ কারণে কুয়াকাটা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটায় দুই লাখের বেশি পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা দেখছেন সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাই ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণ করতে চলছে নানা প্রস্তুতি। 

সাগরকন্যা কুয়াকাটা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেল-মোটেলের রঙের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। অনেক হোটেলে আসবাবপত্রে এসেছে নতুনত্ব। হোটেল-মোটেলের সামনের জায়গাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। দোকানিরাও দোকান সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ট্যুরিজম বোটের মালিকরা তাদের পর্যটক বহনকারী বোটগুলো প্রস্তুত করছেন। শুঁটকিপল্লীর ব্যবসায়ীরা এ বছরের নতুন শুঁটকি দিয়ে দোকান সাজাচ্ছেন। 

দেশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটায় আসতে পারছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তাই তারা এবারের ঈদে কুয়াকাটা সৈকতকে বেছে নেবেন বলে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা। তাদের আশা, এবার কুয়াকাটায় দুই লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন হবে। 

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনও সৈকতে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঈদের আগেই সৈকত এলাকায় বিছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জাল-নৌকা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত বুধবার বিকালে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা হয়।

সভায় সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুইদিকে আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো দোকানপাট, মোটরসাইকেল, ট্যুরিস্ট বোর্ড, স্পিডবোট ও ফ্রাই মার্কেট না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কের পূর্বপাশে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সভায় আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, খাবার হোটেল, অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে পারে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। অতিরিক্ত চাপের সময় আরও পাঁচ হাজার পর্যটক কোনোরকম রাতযাপন করতে পারেন। কিন্তু পর্যটন মৌসুম ও বিশেষ দিনগুলোতে আসা পর্যটকের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত হয়।

তখন কুয়াকাটা সংলগ্ন মৎস্যবন্দর মহিপুর ও আলীপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যটকদের আশ্রয় নিতে হয়। এরচেয়ে অতিরিক্ত পর্যটকের সমাগম হলে সৈকতের বেঞ্চিতে, বাসের মধ্যে, খোলা আকাশের নিচেও পর্যটকদের রাত কাটাতে হয়। এসব পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হয় থানা-পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে। 

এ সংকট মোকাবিলায় অবশ্যই হোটেল-মোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং দিয়ে কুয়াকাটায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশাসন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 

কুয়াকাটা বিচ ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হেসেন আনু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। যার কারণে আবাসন সংকটে পড়তে হয় অনেক পর্যটককে। তাই আগাম বুকিং না দিয়ে পর্যটকদের কুয়াকাটায় না আসাই ভালো। 

কুয়াকাটা সিকদার রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার আল আমিন খান উজ্জ্বল বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই পর্যটক কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ঈদের ছুটিতে এখানে কয়েক লাখ পর্যটক আসবেন। ইতোমধ্যে তাদের হোটেলের ৭০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, আগে কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের সেবা দিতে পারতেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি ও ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের ব্যাপক চাপ হবে বলে প্রত্যাশা করছেন। তাদের হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের বড় অংশ বুকিং হয়ে গেছে।

সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা। 

ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা রিজিয়নের ইনচার্জ হাসনাইন পারভেজ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটায় আসবেন পর্যটকরা। বিপুলসংখ্যক পর্যটক উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি দলকে সার্বক্ষণিক এখানে থাকার জন্য চিঠি দিয়েছেন। কুয়াকাটার আশপাশের প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার করা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি স্পটে সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা