× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘শ্যাডো ব্যাংকিং’ চালুর চেষ্টায় বিএসইসি

মজুমদার বাবু

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩ ০৮:২৭ এএম

‘শ্যাডো ব্যাংকিং’ চালুর চেষ্টায় বিএসইসি

ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিভিন্ন ব্যাংকের স্পেশাল নোটিস ডিপোজিট (এসএনডি) ধরনের হিসাবে রক্ষিত অর্থ ও তার সুদ থেকে আয়ের পরিমাণ জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে এই সুদ আয় বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা হিসাবে জমা দেওয়া কিংবা তাদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এটাকে অনৈতিক ও শ্যাডো ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তার কাছে রক্ষিত অর্থের বিপরীতে সুদ দিতে পারে না। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর প্রতিনিধি দল বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনুরোধ প্রথমে ফিরিয়ে দিয়েছিল। পরে তাদেরকে এটি লিখিত আকারে দেওয়ার নির্দেশ দেন গভর্নর এবং এর ওপর ভিত্তি করে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন। কিন্তু তারা লিখিত কিছু জানায়নি। বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই গত ৩ এপ্রিল নিজেদের মতো করে নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ডিএসইকে চিঠি দিয়ে সব উৎস থেকে ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে অর্থ জমা হয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল ট্রেকহোল্ডারদের বরাবর একটি চিঠি দেয় ডিএসই। তাতে বলা হয়, ২০২১ সালের ২১ জুন জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের (সিসিএ) অবণ্টনকৃত মুনাফার অর্থ ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে জমা হওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জমাকৃত অর্থের ব্যবহার-সংক্রান্ত তথ্য আগামী ১১ মের মধ্যে ছক অনুযায়ী পাঠাতে হবে। ছকে মুনাফার পরিমাণ, বণ্টনকৃত ও অবণ্টনকৃত অর্থের পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।

এটাকে অনেকটা অবৈধ সেভিংস সোসাইটি কিংবা সঞ্চয় সমিতির মতো শ্যাডো ব্যাংকিং বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্রোকারেজগুলোর এমন লভ্যাংশ প্রদানের হিসাবায়ন অনেক জটিল হবে। কারণ কবে বিওতে টাকা ছিল, কবে শেয়ারে বিনিয়োগ হয়েছে, আবার বিক্রি হয়েছেÑ এসবের হিসাব-নিকাশে অপারেশন ডিফিকাল্টিজ তৈরি হবে। ব্রোকারেজগুলোওবা এতে রাজি হবে কেন? এছাড়া বিওর মূল উদ্দেশ্য তো ব্যাংকের ডিপোজিটের মতো না, এটা তো শেয়ার কেনা-বেচার জন্য। এতে ব্যাংকের লিকুইডিটি প্রবলেম তৈরি হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ জানান, ব্রোকারেজগুলো তাদের বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের বিপরীতে সুদ প্রদান করে, তাহলে তা অবৈধ হবে। এতে ব্যাংকের চলতি হিসাব কিংবা সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার পরিবর্তে বিওর মাধ্যমে ব্রোকারেজগুলোতে টাকা রাখতে উৎসাহিত হবে। ফলে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় শ্যাডো ব্যাংকে রূপ নেবে। আর ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩১ (১) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া এ ধরনের সুদ প্রদান করতে পারে না।

তবে বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের (সিসিএ) স্থিতি থাকার বিপরীতে প্রাপ্ত সুদ গ্রাহককে বিতরণ বা অবণ্টিত সুদ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং আইন বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা সম্পর্কে আমি এখনও অবগত নই। তাই এ সম্পর্কে না জেনে কিছু বলতে পারব না।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও ব্যাংকার মো. নূরুল আমিন বলেন, বিও হিসাবে সুদ বা লভ্যাংশ প্রদান করা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের লাভ দৃশ্যমান হলেও প্রকৃতপক্ষে এর সুফল তারা পাবে না। বরং এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে গুটিকয়েক বড় বিনিয়োগকারী লাভবান হবে। তারা ওইসব হিসাবে কোটি কোটি টাকা ফেলে রাখতে পারবে আয়কর সুবিধা পাওয়ার জন্য। এতদিন তারা সেখানে টাকা ফেলে রাখলেও কোনো লভ্যাংশ পেত না, এখন পাবে। ফলে সবদিক থেকেই তারা লাভবান হবে। এ ছাড়া এ লভ্যাংশ বা সুদ বণ্টনের হিসাবায়ন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর জন্যও জটিলতা তৈরি করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বলেন, আগে আমাদের ব্রোকারেজ উইং এসএনডি অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলেও এখন রাখছে না। কারণ এতে হিসাব জটিলতায় মুনাফার তুলনায় ব্যবস্থাপনা চাপ বাড়ে। বিএসইসির ভাবা উচিত ছিল, ট্রেকগুলোর ব্যবস্থাপনা খরচ আছে, সেখানে কোনো-না কোনো কোম্পানির বিনিয়োগ আছে। তারাও লভ্যাংশ চায়। এমন নির্দেশনায় ব্রোকারেজগুলোর টিকে থাকা আরও কঠিন হবে। কোনো ব্রোকারেজ লোকসান করলে তো বিও অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা বা বিএসইসি এর দায় বহন করে না।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের অবণ্টিত মুনাফা এতদিন ব্রোকারেজ হাউস বা ট্রেকহোল্ডারাই নিত। ২০২১ সালের জুন মাসে টাকার স্থিতি থাকার বিপরীতে প্রাপ্ত সুদ গ্রাহককে বিতরণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনায় কিছু বিষয় অস্পষ্ট ছিল। সেটা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের অনেকে বলেছেন, এটা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সুদের টাকা এখনও কোনো গ্রাহককে বিতরণ করছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও সিসিএ অ্যাকাউন্টের অর্থ কোনো বিনিয়োগকারীকে দেওয়া হয়নি। এটার সুদের হারও অনেক কম এবং এটা হিসাব করার ক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে, তাই দেওয়া যায়নি। সম্প্রতি বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে অবণ্টিত সুদ স্থানান্তের যে কথা হচ্ছে, এটা নিয়েও আলোচনা চলছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা