× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারী নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনার তদন্ত সম্ভব হয় না

সোহেল চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও থেকে ফিরে

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ১১:০৩ এএম

আপডেট : ২১ মে ২০২৩ ১১:০৪ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ঠাকুরগাঁওয়ে গত দুই বছরে ৩৪৮টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব হয়নি। যার কারণে অভিযুক্তদের বিচারও করা যায়নি। এ ছাড়া বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কার্যক্রমও অনেক সময় ঝুলে যায়। অনেকে আইনের ফাঁকফোকর থেকে বেরিয়ে যান। এতে সমাজে নিপীড়নের ঘটনাগুলো মেনে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানব কল্যাণ পরিষদের (এমকেপি) গবেষণা পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

এমকেপির তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ে জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ১০টি হত্যা, ২৬টি হত্যাচেষ্টা, ১২টি রহস্যজনক মৃত্যু, ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণচেষ্টা ২৮টি, আত্মহত্যা ৯টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ১০টি, যৌন হয়রানি ৪৫টি, নিখোঁজ ৬টি, শিশু নির্যাতন ১৫টি এবং অন্যান্য ধরনের ১৬৮টি নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। 

সংস্থাটি বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করা বা বিচারের মুখোমুখি করাও যায়নি। নারী নির্যাতনের ঘটনা এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, সামাজিক, অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাবে অনেক সময় নিপীড়িত ব্যক্তিরা বিচার চাইতেও লজ্জাবোধ করেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিযোগ করতে চান না ভুক্তভোগীরা। লোকলজ্জার ভয়ে তারা থানা-পুলিশের কাছেও যান না।

পীরগঞ্জে নির্যাতনের শিকার এমনই এক সংখ্যালঘু নারী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার প্রতিবেশী কাইয়ুম আলী। পেশায় গ্রাম-পুলিশ। গত ৭ অক্টোবর রাতে ফাঁকা বাড়িতে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টার পর চিৎকার করলে তিনি পালিয়ে যান।’

এ ঘটনায় ওই নারী কাইয়ুমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)(খ) ধারায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে ঠাকুরগাঁও নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। 

পরে আসামি জামিন নিয়ে ওই পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী ও তার স্বামী। ওই নারীর স্বামী বলেন, ‘কাইয়ুম আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। ওই পাড়ায় আগে সংখ্যালঘু ছয় পরিবার থাকত। এখন আমরা ছাড়া কেউ থাকে না। কাইয়ুম আমাদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’

এ বিষয়ে কাইয়ুম বলেন, ‘ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে বিপদে ফেলার জন্য এগুলো করছে তারা। আমি কখনোই তাদের হুমকি বা ভয় দেখাইনি।’

ঠাকুরগাঁও জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনাসহ সার্বিক অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলা শান্তিপ্রিয় এলাকা। এখানে অপরাধ কর্মকাণ্ড হয় না বললেই চলে। দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

ওই নারীর বিষয়ে ওসি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই সংখ্যালঘু পরিবারটি বাড়িতে থাকতে পারছে না, এমন কথা বা অভিযোগ আমি পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

২০২২ সালে ৩১ জানুয়ারি রাতে ঠাকুরগাঁও সদরে ১৪ বছরের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে পৌর এলাকার রিপন ওরফে সুজন। ওই ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ওই মেয়েটি। তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সে এখন আত্মীয়ের বাসায় থাকছে। 

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্যাতনের শিকার নারীদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ করে তুলতে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে এমকেপি, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ, নেটজ বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল কনফ্লিক্ট ট্রান্সফরমেশন প্ল্যাটফর্ম। এসব সংস্থা নারীর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন প্রতিরোধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।

নেটজ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসানা বিনতে আমিন বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান হারে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও নারীবিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি হোক। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ছাড়া পারিবারিক নির্যাতন আইন-২০১০ সফল করাসহ অন্য যেসব আইন রয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।’

ঠাকুরগাঁওয়ে নারী নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ঘটনা অকুস্থলে গিয়ে জেনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।

তিনি সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে বলেন, ‘অধিকাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হলে মুখ বন্ধ করে বসে থাকেন, সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে। এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে নির্যাতনের শিকার হলে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে, এ কথা ভেবে বসে থাকলে অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। নারীদের সব ভয়ভীতি দূর করে সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই সমাজে একটা সুষ্ঠুধারা প্রতিষ্ঠিত হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা