× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লবণের সংকট নেই, প্রশ্ন উঠছে দাম ও মান নিয়ে

সোহেল চৌধুরী ও নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩ ১৪:২৯ পিএম

লবণের সংকট নেই, প্রশ্ন উঠছে দাম ও মান নিয়ে

ঈদুল আজহা সামনে রেখে কক্সবাজারের লবণ মিলগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা। প্রতিদিনই ১ লাখ মেট্রিক টন লবণ সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। যা কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হবে। মিলারদের দাবি, কক্সবাজারের মাঠে ও মিলে মজুদ রয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন লবণ। তাই সংকট দেখিয়ে আমদানির প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনও (বিসিক) জানাচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলছেন, লবণের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া এক বছরের ব্যবধানে লবণের দাম প্রতি বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক রেশও পড়তে পারে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায়। প্রসঙ্গত, মান ভালো রাখতে যেকোনো চামড়া ছাড়ানোর ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যেই লবণ লাগাতে হয়।

৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন

দেশে এবার রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। দেশে ২০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত লবণের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার টন। কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। যা গত ৬২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রয়োজন হবে ১ লাখ মেট্রিক টন লবণ। গেল বছর লবণের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৭ হাজার ৬৮০ টন।

ব্যস্ত লবণ চাষি ও শ্রমিক 

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ঘাটে একের পর এক লবণভর্তি ট্রলার ভিড়ছে। প্রতিটি ট্রলারে রয়েছে ৯শ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন লবণ। 

কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর শিল্প এলাকায় রয়েছে ৮০টির মতো লবণের মিল। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও চকরিয়ার লবণ মাঠ থেকে প্রতিদিনই মিলে আসছে হাজার হাজার মেট্রিক টন লবণ। মিলগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা।

ইসলামপুর শিল্প এলাকার লবণ ট্রাক গণনাকারী মো. আশরাফ হোসেন বলেন, এখন প্রতিদিনই লবণ বোঝাই ১শ থেকে দেড়শ বা ১শ থেকে কিছু কম ট্রাক ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে লবণ হবে প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন।

মহেশখালীর লবণ চাষি আবদু রশিদ বলেন, প্রায় ৯শ টন লবণ বিক্রি করার ট্রলার নিয়ে ইসলামপুর ঘাটে এসেছি। এখানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি করছি সাড়ে ৪শ টাকায়।

লবণশ্রমিক রহিম উদ্দিন বলেন, কোরবানির সামনে শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। ট্রলার থেকে লবণবোঝাই করে মিলে এবং মিল থেকে ট্রাকে তুলে দিতে প্রতিদিনই কয়েকশ শ্রমিক ব্যস্ত রয়েছে।

‘আমদানির প্রশ্নই আসে না’

কক্সবাজার মিল মালিক সমিতির সভাপতি সামশুল আলম আজাদ বলেন, ‘মাঠে ৮ লাখ মেট্রিক টন এবং মিলে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ রয়েছে। সেহেতু দেশে লবণের সংকট দেখা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। যারা সংকট দেখিয়ে লবণ আমদানির পাঁয়তারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এরা প্রতি বছরই ঈদুল আজহা এলে সংকট দেখিয়ে লবণ আমদানি করার পাঁয়তারা চালায়।’

কোরবানিকে কেন্দ্র করে লবণের সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক (লবণ সেল প্রধান) সরোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোরবানির জন্য লবণের সরবরাহ প্রচুর রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় লবণ সরবরাহ নিশ্চিতের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক অর্থে লবণের সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে চামড়ার দাম ঠিকমতো না পেলে লবণ নিয়ে কেউ কেউ অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করে থাকেন। তাই চামড়ার দামই আসল। চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘গুজবে কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। মাঠে গর্ত করে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন মজুদ করে চাষিরা। এখন সেই লবণ বিক্রি করছে। তবে দাম একটু বাড়তি হতে পারে, কারণ বর্ষা মৌসুমে মাঠে গর্ত থেকে লবণ তুলে তা বিক্রি করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।’ 

দাম ও মান নিয়ে ক্ষুব্ধ চামড়া ব্যবসায়ীরা

লবণের সরবরাহ বেশ ভালো থাকলেও চামড়া ব্যবসায়ীরা এর দাম ও মান নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানে এর দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

লবণের দাম নিয়ে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী গফুর মিয়া বলেন, ‘লবণের দাম অনেকটা অতিরিক্তই বলা যায়। গত বছর এক বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ কিনেছি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ বছর তার দাম উঠছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এই বাড়তি দাম এখন চামড়ার ওপরে প্রভাব ফেলবে।’

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘আমরা লবণ আগেভাগেই কিনে রেখেছি। তবে লবণের দাম বেশি। গত বছর লবণ ১৪ টাকায় কিনেছি। এবার কেনা পড়ছে ১৮ টাকা কেজি। এতে প্রতি পিস চামড়ায় গতবারের তুলনায় এ বছর ৫২ টাকা বেশি লাগছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের খরচ তো আছেই। গত বছর প্রতি পিস চামড়ায় লবণ লাগানো বাবদ ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ বছর দেওয়া হবে ৬০ টাকা করে। অর্থাৎ লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চামড়া সংগ্রহের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘লবণের দাম বাড়তির দিকে। চামড়া সংরক্ষণে প্রচুর লবণ লাগে। তাই দাম কমানো দরকার। একইসঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউ কোনো সংকট সৃষ্টি করতে না পারে।’

এ বছর লবণের উৎপাদন বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির। তিনি বলেন, ‘লবণ উৎপাদন বাড়লেও কোয়ালিটি একেবারে নিম্নমানের হয়েছে। যা আমরা মার্কেটিং করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি। কোয়ালিটিটা মেইনটেইন করা উচিত ছিল।’

লবণের দাম বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাড়ছে লবণের দাম। চাহিদার তুলনায় ঘাটতি রয়েছে লবণের। আমদানির অনুমতি দিলে বাজার স্বাভাবিক হবে অন্যথায় হবে না। প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টন লবণের ঘাটতি থাকে। লবণ ঘাটতি হলে আমদানির কথা বললে শিল্প মন্ত্রণালয় অজুহাত দেখায় চাষিদের ক্ষতি হওয়ার। অথচ শিল্প মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশেই শুল্ক ফাঁকি বিভিন্নভাবে লবণ বাজারে ঢুকছে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা