× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাতিরঝিল বিনষ্ট করার আরও একটি প্রকল্প!

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৫ এএম

হাতিরঝিল বিনষ্ট করার আরও একটি প্রকল্প!

নানা আলোচনা-সমালোচনার পরও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিলের পশ্চিমাংশে (সোনারগাঁও হোটেল) বালু ভরাটের কাজ চলছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবেশবাদীসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা। এই ক্ষোভের মধ্যেই হাতিরঝিলের পূর্বাংশেও র‌্যাম্প নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। 

এটি বাস্তবায়ন হলে হাতিরঝিলের নান্দনিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এর পানিপ্রবাহ ও ড্রেনেজব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। তা ছাড়া বাড়তি ট্রাফিকের চাপে হাতিরঝিলের স্বস্তির আবহ আর থাকবে না। তাই হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে সব ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

সম্প্রতি হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক (চিটাগাং রোড এবং তারাব লিংক মহাসড়কসহ) চার লেনের এক্সেপ্রেসওয়েতে ওঠানামার দুটিসহ মোট তিনটি র‌্যাম্প হাতিরঝিলে বসাতে রাজউককে প্রস্তাব দিয়েছে সওজ। এ নিয়ে গত ৬ আগস্ট একটি সভাও করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সভা সূত্রে জানা গেছে, সেখানে হাতিরঝিলে নকশাবহির্ভূত আর কোনো স্থাপনার অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার স্থাপনের সময় একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত এতে অটল থাকতে পারেনি রাজউক। 

তবে রাজউক আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত এই আপত্তি টিকবে বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ। ফলে এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

সওজ বলছে, এ প্রকল্পের আওতায় হাতিরঝিলের সঙ্গে নতুন একটি এক্সিট ও একটি এন্ট্রি র‌্যাম্প নির্মাণে রাজউকের অনাপত্তি প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে গত ৮ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ২৩ জানুয়ারি রাজউক প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তখন ড্রয়িং ডিজাইনসহ আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ১২ ফেব্রুয়ারি ডংয়িং ডিজাইনসহ আলোচনার সময় এন্ট্রি ও এক্সিট র‌্যাম্পের সঙ্গে রামপুরা ইউলুপ প্রকল্পের সঙ্গে আরও একটি র‌্যাম্প স্থাপনের জন্য অনাপত্তি পত্র চাওয়া হয়।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এক সভায় রাজউক জানিয়েছিল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ৪১টি খুঁটি হাতিরঝিল লেকে পড়বে। এতে লেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আরও ৩ সংস্থার আপত্তি

১৩ কিলোমিটার এ প্রকল্পে ৯ কিলোমিটারই উড়ালসড়ক। সেই উড়ালসড়কের বেশিরভাগ খুঁটিই পড়েছে রামপুরা খালে। এ নিয়ে গত ১৪ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তা ছাড়া এ প্রকল্পে এলাকা থেকে নির্মাণাধীন মার্কেট এবং বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র সরানো নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেরও আপত্তি রয়েছে। নকশা অনুযায়ী বিটিভির সীমানার ভেতরে কয়েকটি পিলার পড়বে। সেক্ষেত্রে বিটিভির জমি অধিগ্রহণের বিষয়ও রয়েছে। 

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের উড়ালসড়কের পিলারগুলো পড়েছে রামপুরা খালের পাড়ে। পাড় ঘেঁষে তৈরি করা পিলারের কারণে রামপুরা খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া এ সড়কের নির্মাণকাজের কারণে রামপুরা স্টর্ম ওয়াটার পাম্পের জেনারেটরও সরাতে হবে।

বিশেষজ্ঞ মত

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, হাতিরঝিলে এলিভেটেডের র‌্যাম্প নির্মাণ পরিবেশ, প্রতিবেশ, নান্দনিকতা ও ড্রেনেজ সিস্টেম ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে, যা দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানে এলিভেটেডের র‌্যাম্প নামালে শুধুমাত্র সৌন্দর্য নষ্ট হবে না, পানির প্রবাহেও বাধা সৃষ্টি হবে। 

তিনি বলেন, এ ধরনের কাজের জন্য সবাইকে নিয়ে আলোচনা করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। কারও ইচ্ছা হলেই যেখানে যা মন চায় তাই করে ফেলছে। এভাবে আধুনিক নগর পরিকল্পনা চলতে পারে না। 

স্থপতি রফিক আজম বলেন, পান্থকুঞ্জ পার্কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের খুঁটি বাসানোর সিদ্ধান্তের সময়ই আপত্তি করেছিলাম। সেটা রক্ষা করতে পারিনি। ঢাকা শহরে খোলা জায়গা এমনিতে নেই বললেই চলে। খোলা জায়গা পেলেই র‌্যাম্প নামাতে হয়, পিলার নামাতে হয়Ñ এটা দুঃখজনক। এসব শুনলে কষ্ট হয়। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, সরকারি দপ্তরগুলো জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করছে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনমত নেওয়া দরকার। কিন্তু সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের বড় প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে হাতিরঝিলের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে। জনমত না নিয়ে হুট করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা এসব করছে তাদেরকে জবাবিহির আওতায় আনা দরকার।

কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে

হাতিরঝিল প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিল নগরীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। যানজটমুক্ত ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে সবাই এখানে ঘুরতে আসেন। মানুষের স্বস্তির এক টুকরো জায়গাকে রাজউক ধ্বংস করতে চায় না। হাতিরঝিলকে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য আমরা এখানে আর কোনো স্থাপনার অনুমোদন দিতে চাই না। 

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে সওজের প্রকল্প পরিচালক এনামুল হককে একাধিকবার ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বুধবার দুপুরে সড়ক ভবনে তার কার্যালয়ে গিয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংস্থাগুলোর অনাপত্তি নিতে তারা কাজ করছেন। একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, সরকারের সব পর্যায় থেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। দেশের বৃহৎ স্বার্থেই এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ছোটখাটো যেসব বিষয় আছে সেগুলো খুব শিগিরিই সমাধান হয়ে যাবে। 

যা আছে প্রকল্পে

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিকল্প হিসেবে ডেমরা দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে ঢাকায় প্রবেশের বিকল্প পথ তৈরি করতে ২০১৬ সালে হাতিরঝিল-আমুলিয়া-ডেমরা চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে চায়না কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে সওজ। চুক্তির ৯ মাসের মধ্যে কাজ শুরুর করার কথা ছিল। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় নতুন করে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এ প্রকল্পে চিটাগাং রোড, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, মেরাদিয়া ও রামপুরা সেতু এলাকায় থাকবে চারটি ইন্টারচেঞ্জ। দুই পাশে স্থানীয়দের চলাচলের জন্য সার্ভিস রুট, দুটি সেতু, দুটি কালভার্ট, একটি ওভারপাস, প্রয়োজনীয় ফুটওভার ব্রিজ ও একটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রথম ২৫ বছর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে কনসোর্টিয়াম। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগবে ১০ মিনিট। তবে এটি ব্যবহারের জন্য টোল দিতে হবে। চুক্তি অনুসারে সরকার টোলের পুরো অর্থ পাবে এবং কনসোর্টিয়াম পাবে একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক।

চুক্তি অনুযায়ী এ প্রকল্পে বেসরকারি অংশীদার চায়না কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন কনসোর্টিয়াম প্রায় ২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ চীনা কনসোর্টিয়াম বিনিয়োগ করবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা