× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রভাবশালীদের হাতে ভর্তুকির কৃষিযন্ত্র

মো. রাসেল, বরগুনা

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:০২ পিএম

ট্রাক্টর। প্রবা ফটো

ট্রাক্টর। প্রবা ফটো

উপকূলের কৃষকদের সমস্যা সমাধানে সরকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নামের একটি যুগান্তকারী প্রকল্প নিয়েছে। যার আওতায় ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে অন্তত ১২ ধরনের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে আসছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এসব কৃষি যন্ত্রপাতি প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ যন্ত্র নামে-বেনামে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে একাধিক নামে একাধিক যন্ত্র নিয়েছেন। এমনকি এক উপজেলার যন্ত্র অন্য উপজেলা থেকে নেওয়ারও নজির রয়েছে। এসব কৃষিযন্ত্রই আবার প্রকৃত কৃষকরা ভাড়ায় নিয়ে ব্যবহার করতে বাধ্য হন।

জানা গেছে, প্রতিটি ফসল কাটার যন্ত্রের জন্য সরকারকে ২২ লাখ টাকার কম-বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষককে দিতে হয় মাত্র ৯ লাখ টাকা। বরগুনা জেলায় গত দুই অর্থবছরে এমন ২ হাজার ২৪৪টি সহায়ক কৃষিযন্ত্র দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর সুফল কতজন পেয়েছেন, তার কোনো সঠিক তথ্য নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে।

বরগুনার আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া গ্রামের কৃষক লোটাস হাওলাদার। তিন বছর ধরে ঘুরেছেন সরকারি একটি ফসল কাটার যন্ত্রের জন্য। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। লোটাস হাওলাদার বলেন, ‘আমি দুই-তিন বছর ধরে ঘুরে একটা মেশিন সংগ্রহ করতে পারি নাই। অথচ শুনি, অনেকে ছাড়াইয়া বিক্রি করে ফালায়। কী রকম বিক্রি করে বুঝি না। অফিসে আমরা গেলে শুনি মেশিন নাই, মেশিন দিমু কোথা থেকে।’

লোটাস হাওলাদার ফসল কাটার যন্ত্র না পেলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঠিকই পেয়েছেন একই গ্রামের কৃষক মো. নাসির উদ্দিন। তবে নাসিরের যন্ত্র নেই তার কাছেও। নাসির বলেন, ‘আমি আনি নাই, আমার শালায় (শ্যালক) আমার নাম দিয়া কৃষি অফিস থেকে ছাড়াইছে। শুনছি বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিলেটÑ ওই সব এলাকায় ধান কাটে।’

নাসিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেই ফসল কাটার যন্ত্রটি মিলল পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ছুরিকাটা গ্রামে নাসিরের শ্যালক আব্দুর রহমানের বাড়িতে। বাবা ও ভাইয়ের নামেও একটি করে মোট তিনটি যন্ত্র মিলল তার বাড়িতে। যার একটি এনেছেন অন্য উপজেলা থেকে। তাদের বাড়ির পাশেই বিভিন্নজনের নামে-বেনামে আরও সাতটি যন্ত্রের খোঁজ মিলেছে। যার সবগুলোই সরকারের ভর্তুকির টাকায় নেওয়া। তবে আব্দুর রহমানকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কৃষিযন্ত্রের খোঁজে আসার সংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে চলে যান। তাকে বারবার ফোন করা হলেও ধরেননি। 

ওই এলাকার কৃষক মাহবুব বলেন, ‘যাদের জায়গাজমি নেই, তারা মেশিন পেয়ে বিক্রি করে ফালায়। আর আমরা প্রকৃত কৃষক, আমরা পাই না। আমাদের জমি টাকা দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়। ফসল কাটার সময় টাকা দিয়ে ফসল কাটাতে হয়। সরকার আমার কৃষি যন্ত্রপাতি দিলেও সেটা প্রভাবশালীরা নিয়ে যায় টাকা দিয়ে।’

কৃষির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আমানউল্লাহ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা বরাদ্দ নেন একটি পাওয়ার টিলার। যদিও মাত্র ১০ হাজার টাকা লাভে যন্ত্রটি বিক্রিও করে দেন তিনি। আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমার তো জমিজমা নাই, তাই ছাড়াইয়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিছি।’

অভিযোগ রয়েছে কৃষি অফিসের যোগসাজশে ভর্তুকির যন্ত্র বিক্রি বা হাতবদলের এমন উদাহরণ একটি-দুটি নয় অনেক। কৃষক মানিক বলেন, ‘আমরা তো শুনি সরকার আমাদের হালচাষ করার মেশিন দেয়, ধান কাটার মেশিন দেয়। আমরা শুনি অথচ আমরা কৃষকরা কিছু পাই না।’

জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ একটি যুগান্তকারী প্রকল্প। চলমান এই প্রকল্পে প্রকৃত কৃষকদের সুফল ভোগ করার কথা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্পর্ক করে প্রভাবশালী একটা চক্র কৃষিপণ্যগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার সেই কৃষিযন্ত্রেই কৃষকরা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করেন। এতে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু সৈয়দ মো. জাবায়দুল আলম বলেন, ‘কৃষিকাজে ব্যবহার হচ্ছে না এবং অন্য যারা আছে তারা পায় নাÑ এ রকম সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু থাকলে বিষয়টা আমরা দেখব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা