× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শুধু পাচারের রুট নয়, কোকেন ব্যবহার হচ্ছে এদেশেও

জামশেদ নাজিম ও সাইফ বাবলু

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৩ এএম

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৬ পিএম

গত ২৪ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে সলিড কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান নিয়ে আটক হন  নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামে এক আফ্রিকান নারী। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে সলিড কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান নিয়ে আটক হন নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামে এক আফ্রিকান নারী। ছবি: সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ হওয়া কোকেনের চালান দুটি অন্য দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিলÑ প্রাথমিক তদন্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এমন ধারণা করলেও বাংলাদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও এখন এ জাতীয় মাদক সেবনের চাহিদা বেড়েছে বলে ধারণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা এসব মাদকে আসক্ত তাদের চাহিদা মেটাতেও দেশে এই মাদক আসতে পারে। ফলে কিছুদিন আগেও যেখানে শুধু এ ধরনের মাদক পাচারের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে বাংলাদেশকে বলা হতো, সেই ধারণাও এখন পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশি মাদক কারবারি সিন্ডিকেটও এক্ষেত্রে জড়িত। তদন্তে নাম এসেছে এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীসহ আটজনের। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন্স) অতিরিক্ত ডিআইজি তানভীর মমতাজ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার আটক কোকেনের ‍দুটি চালানের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশের ইতিহাসে শতকোটি টাকা মূল্যের সলিড কোকেন উদ্ধার হয়েছে। তিনি জানান, এর আগেও কোকেনের ছোট ছোট চালান এদেশে আটক হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, চালানগুলো অন্য দেশে পাচারের জন্য আনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার আটক চালানগুলোর সঙ্গে এদেশীয় মাদক কারবারিরা জড়িত রয়েছে বলেও প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাচারের সুবিধা নিতে বিদেশি নাগরিকদের ব্যবহার করা হয়েছে। যারা আটক হয়েছে তারা বিদেশি চক্রের সঙ্গে জড়িত। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) পরিদর্শক মো. হোসেন মিঞা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আন্তর্জাতিক কোকেন পাচার চক্রের অন্তত আটজনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানানÑ কোকেন, হেরোইন, আফিম উচ্চমূল্যের মাদক। আমাদের দেশে সম্প্রতি এ মাদকের চাহিদা বেড়েছে। আর চাহিদার কারণেই এসব মাদক বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। 

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি র‌্যাবও মাদক নির্মূলে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। আমরা জানতে পেরেছি গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই কোকেন, হেরোইন ও আফিম জাতীয় মাদক সেবন করেন। মূলত তাদের চাহিদা পূরণে আকাশপথে এসব মাদক দেশে আসতে শুরু করেছে। তবে পাচারের জন্য এ জাতীয় মাদক বাংলাদেশে আসছে কি না সেটিও দেখার বিষয়। 

গত বুধবার দেশের ইতিহাসে কোকেনের সবচেয়ে বড় চালানটি উদ্ধার করার দাবি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় আফ্রিকার দেশ মালাওয়ের এক নারী যাত্রীর ব্যাগ থেকে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন আটক এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই অভিযানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নও ছিল। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোকেনের আরেকটি চালান উদ্ধার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) যৌথ দল। এপিবিএনের ডগ স্কোয়াডের সদস্য ‘অলি’ (কুকুর) ওই কোকেন খুঁজে বের করে। এপিবিএন ও ডিএনসির যৌথ এ অভিযানে কোকেন পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তানজানিয়ার বাসিন্দা মোহামেদি আলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। 

মামলায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তানজানিয়ার নাগরিক মোহামেদি আলি জানিয়েছেন, ২০০ গ্রাম কোকেনের প্যাকেটসহ একটি ব্যাগ তাকে দিয়েছিলেন নাইজেরিয়ান নাগরিক ডন আফ্রিন নামে একজন। বাংলাদেশে এসে ওই ব্যাগসহ তিনি হোটেল অ্যাফ্রোড ইনের ১০২ নম্বর ‍রুমে অবস্থান নেন। ওই হোটেল তাকে ঠিক করে দেয় সাইফুল ইসলাম রনি নামের একজন। গত ২০ জানুয়ারি সাইফুল ইসলাম ওই হোটেলের বাইরে এসে লাগেজটি নিয়ে যায়। সে সময় লাগেজ থেকে আলি ২০০ গ্রাম ওজনের একটি প্যাকেট কোকেন রেখে দেন নিজের কাছে, যা উদ্ধার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। 

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৫ বছরে দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অন্তত ১০ কেজি কোকেন উদ্ধার করেছে। অন্যদিকে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে অন্তত ৬৩ কেজি। সব মিলিয়ে কোকেন উদ্ধার হয়েছে ৭৩ কেজির মতো। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেনি কোকেনের পাচার। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১৫ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে (কোস্ট গাড, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ) ৩ হাজার ৯৪৬ কেজি ৪৫২ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে অন্তত ২০৬ কেজির মতো। আফিম উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৫ কেজি। অন্যান্য সংস্থা উদ্ধার করেছে ৩৪৮ কেজি ২৯৯ গ্রাম। 

কর্মকর্তারা আরও বলছেনÑ কোকেন, হোরোইন, আফিম উচ্চ লেভেলের মাদকসেবীদের চাহিদাযুক্ত মাদক। ধনী পরিবারের মাদকসেবীরা এসব মাদক নিয়ে থাকেন। ফলে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের অনেকেই নিজেদের চাহিদা মেটাতে এ ধরনের মাদকের পাচারে যুক্ত হন। এসব মাদক তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারেও ছড়িয়ে দেন। যাতে পাচারে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করা যায়। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পদের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দেশে এর আগেও কোকেনের বড় চালান ধরা পড়েছিল। ২০১৬ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা উত্তর মেট্টোর তৎকালীন উপ-পরিচালক খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে অভিযানে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম পরিমাণের চালান বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। সে সময় গ্রেপ্তার হন একজন ড্যানিশ নাগরিক। তখন বিষয়টি বেশ আলোচিত ছিল। ওই চালানটিও অন্য দেশে নেওয়ার টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানানÑ কোকেন, হেরোইন ও আফিমের চালান পাচারে একাধিক গ্রুপ থাকে। সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে উড়োজাহাজে বাংলাদেশে এনে আবার আরেক দেশের যাত্রীর কাছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি হাত কাজ করে। কোকেন পাচারে বিদেশি নাগরিকদের বাহক হওয়ার নজির বেশি। কোকেন, হেরোইন, আফিম উদ্ধার ও গ্রেপ্তার সংক্রান্ত মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে চলমান রয়েছে। অনেক মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়নি। মামলার তুলনায় শাস্তির পরিসংখ্যান খুবই কম।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা