× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় জীবনে বাঁক পরিবর্তনে মার্চ

সেলিনা হোসেন

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪ ১০:৩২ এএম

অলঙ্করণ প্রবা

অলঙ্করণ প্রবা

আমাদের জাতীয় জীবনে বাঁক পরিবর্তনের অধ্যায়গুলোর মধ্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাঙালি জাতির অনন্য গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের চূড়ান্ত প্রাপ্তি স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে। মার্চ বিশেষ করে ৭ মার্চ, বাঙালি জাতির মুক্তির পথ-ঠিকানা খোঁজার বিশেষ একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভক্তির পর দুই যুগব্যাপী সংগ্রাম-সাধনার মধ্য দিয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা মুক্তির যে মোহনায় উপনীত হয়েছিল, তাকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম আমাদের। এমন দৃষ্টান্ত বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

আজ সেই ঐতিহাসিক মার্চের প্রথম দিন। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে যে অলিখিত ভাষণটি দিয়েছিলেন, যা মহাকাব্যিক ভাষণ হিসেবে স্বীকৃত, তা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও স্মারক। ওই ভাষণের কারণেই বিশ্ব গণমাধ্যম বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি হিসেবে অভিহিত করে। একাত্তর শুধু বর্ষপঞ্জির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ই নয়, একাত্তর সময়ের ঊর্ধ্বে, দিনক্ষণ-বছরের ঊর্ধ্বে বহমান স্রোত। এই স্রোতই আমাদের জীবনের গতি এক থেকে বহুর মধ্যে নিয়ে যায়। একাত্তর বাঙালির স্বপ্নকে ধরে রাখে জীবনের টেরাকোটায়। নিঃসন্দেহে এ-ও বলা যায়, একাত্তর বাঙালির চেতনায় অবিনাশি পঙ্‌ক্তিমালা, জাতীয় জীবনের অগ্নিমশাল।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বাঙালি জাতি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙাল জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই রাত তো বটেই একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর যে বর্বরতা-পৈশাচিকতা চালায় তা বিশ্ব ইতিহাসে কদর্য অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের ‍সূচনাতেই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল এবং তার প্রাণনাশের জঘন্য চেষ্টাও চালিয়েছিল কিন্তু পারেনি। একদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ অন্যদিকে বিশ্ব জনমত এসব কিছুর কাছে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়, অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা এবং এর পূর্ণতা মেলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে-নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধ। মার্চ এলেই একাত্তরের অবিনাশী চেতনা আমাদের নতুন করে জাগায়। একাত্তরের চেতনাই আমাদের মূল শক্তি। এই মহান অধ্যায়কে যারা অতীতের বিষয় বলে উড়িয়ে দিতে চায় তাদের প্রতিরোধ করা আমাদের কর্তব্য। শুধু তা-ই নয়, আমাদের দায়িত্ব হলো একাত্তরের চেতনাকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে একীভূত রেখে ঐতিহ্যের আপন আলোয় স্নাত রাখা।

বাংলাদেশ বায়ান্ন বছর পেরিয়ে তেপ্পান্ন বছরে পদার্পণ করেছে। আজকের বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গোটা বিশ্বের কাছেই সমীহ জাগানিয়া অবস্থান নিশ্চিত করেছে। টানা চতুর্থবারসহ পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ এবার সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নবযাত্রা শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-উত্তর গত জানুয়ারিতে। স্বাধীনতা-উত্তর এ পর্যন্ত বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক শাসন মেয়াদকালে উন্নয়ন-অগ্রগতির চওড়া সড়ক আমাদের সক্ষমতারও সাক্ষ্য বহন করে। সরকারের এই অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা কতটা উজ্জ্বল, বিদ্যমান পরিস্থিতি এরও সাক্ষ্য দেয়। বিশ্বনেতাদের কাতারে তিনি তার প্রজ্ঞার কারণেই নিজের স্থান নির্ধারণ করার পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। 

তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরও শাণিত করতে হবে দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থে। এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার বড় শক্তি। মার্চ এলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার যে অধ্যায়গুলো একে একে উন্মোচিত হতে থাকে তা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি সঞ্চারকও বটে। বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের একটি মানচিত্র এবং পতাকাই দিয়ে যাননি, মুক্তির দিকদর্শনও দিয়ে গেছেন। তার দর্শন চর্চা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়েই আমরা পরিশীলিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক মুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। গড়তে পারি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু নির্ধারণ করেছিলেন অনেক আগেই। আমরা জানি, আধুনিক বিশ্বে সব ক্ষেত্রেই আছে প্রতিযোগিতা। অর্থনীতির প্রতিযোগিতা, শিল্পের প্রতিযোগিতা, শিক্ষার প্রতিযোগিতা, জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, ক্রীড়ার প্রতিযোগিতা এবং আরও কত কিছু। তবে সবার ওপরে আছে মেধা-মনন ও সৃজনশীলতার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় আমাদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, পিছিয়ে রাখা চলবে না, প্রতিযোগিতায় জয় আছে; পরাজয় নেই। পরাজয়ের অর্থ আমরা বায়ান্ন-একাত্তর তো বটেই আমাদের প্রতিটি গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অধ্যায়ে অধ্যায়ে তা বদলে দিয়েছি। স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে গেলে জয় হাতের মুঠোয় আসবেই, তা-ও বঙ্গবন্ধুই দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। 

লক্ষ্য আমাদের নির্ধারিত, প্রয়োজন শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাওয়া। দুর্যোগ কাটিয়ে দেশ এগিয়ে যাবেই। স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আরও গভীরভাবে লালন করে এগোতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্যের বাংলাদেশ গড়ায় যে প্রত্যয় রয়েছে তা জাগ্রত রাখতেই হবে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সমাজিক ন্যায়বিচারের পথ মসৃণ করা প্রগতিশীল সবার গুরুদায়িত্ব। এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না, তা সত্য। তারপরও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প বারবার ছড়াতে চেয়েছে। স্বাধীনতাকে করে তুলতে হবে অর্থবহ। অগ্নিঝরা মার্চ আমাদের সেই অঙ্গীকার আরও পুষ্ট করুক। ইতিহাস চর্চা অত্যন্ত জরুরি। সব জাতির ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য। মার্চ এমনই এক মাস, যা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে উজ্জ্বল রশ্মিই শুধু বিকিরণ করে না, এ মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্ব ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে আছে। বর্তমান প্রজন্মকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে মানবসম্পদ হিসেবে। স্বাধীনতা ও প্রগতিবিরোধী সব মহলের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল সব শক্তিকে দাঁড়াতে হবে যূথবদ্ধভাবে। তারুণ্যের জাগরণ আমাদের আশান্বিত করে এবং এ-ও উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে আমাদের সামনে রয়েছে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সভাপতি, বাংলা একাডেমি

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা