× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘কড়া হেডমাস্টারের’ যুগে ফিরছে বাংলাদেশ!

এম. এম. কায়সার

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৯ পিএম

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:২১ পিএম

চন্ডিকা হাতুরেসিংহ। প্রবা ফটো

চন্ডিকা হাতুরেসিংহ। প্রবা ফটো

কোচের তালিকায় নামিদামি অনেকে আছেন। কদিন আগেও আরেকটি সিভি এসেছে বিসিবির ই-মেইলে। তবে আপাতত সেই তালিকা থেকে সম্ভাব্য কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে চন্ডিকা হাতুরেসিংহে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে সেই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

-চন্ডিকার বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী?

নাজমুল জানালেন, ‘আছে, সে এখনও অ্যাভেইলেবল। আমরা চারজন খুব ভালো নামিদামি কোচ পেয়েছি। এর মধ্যে একজন ভারতেরও আছে। এই চারজনের মধ্যে ভারতেরটা ছাড়া বাকি যাকে চাইব তাকেই আমরা পাব। পরিস্থিতি এখন আপাতত তেমনই। তবে সমস্যা হলো এদের মধ্যে তিনজনকে হয় আইপিএল, নয় বিগ ব্যাশ বা অন্য যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য ছুটি দিতে হবে। এই শর্তে তারা চাকরিটা চায়। এই সমস্যাটা আবার চন্ডিকা হাতুরেসিংহের নেই। ও কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততার সঙ্গে নেই। ও আমাদের ফুলটাইম দিতে রাজি আছে। অন্যদের কেউ আর ওর মতো এত বেশি সময় দিতে রাজি না। আমাদের হেড কোচ আরও অন্য কোথায় ব্যস্ত থাকুক সেটা আমরা চাই না। আমরা এখনও সেই সিদ্ধান্তে অটুট আছি। দ্বিতীয় সমস্যা হলো এখন জাতীয় দলের এত বেশি খেলা থাকে যেকোনো কোচের পক্ষেই তিন ফরম্যাটে সব খেলায় দায়িত্ব পালন করা কঠিন কাজ। জাতীয় দলের পাশাপাশি ডেভেলপমেন্টের জন্যও কাজে ব্যস্ত থাকা সম্ভবপর না। এজন্য আমরা ঠিক করেছি, হেড কোচের সঙ্গে আমরা কমপক্ষে একজন সহকারী কোচও নিয়োগ দেব।’

কোচ হাতুরেসিংহে বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নন। এর আগে তিন বছর জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্বে ছিলেন এই শ্রীলঙ্কান। সেই সময়টায় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে টেস্ট ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে জিতেছে। পঞ্চপাণ্ডবখ্যাত মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, তামিম ও মুশফিকের মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে ড্রেসিংরুম এবং মাঠের পরিবেশে পুরোদস্তর নিজের কর্তৃত্ব দেখিয়েছেন কোচ হাতুরেসিংহে। দলকে ‘শাসন’-এর তার এই ভঙ্গিতে বিসিবিও মুগ্ধ। সত্যটা স্বীকার করলেন বিসিবি সভাপতি, কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যেকোনো সিরিজ শুরুর আগে দলের সঙ্গে এসে যোগ দিত। সেই ব্যবস্থায় আমরা একটু বদল আনতে চাই। যদি সময় থাকে তাহলে সিরিজের আগে আমরা ক্রিকেট ক্যাম্প করব। সঠিকভাবে সেখান থেকে ক্রিকেটার আমরা নিতে পারব। এসব দিক থেকে জাতীয় দলের জন্য সময় দেওয়ার বিষয়ে হাতুরেসিংহে তালিকায় থাকা কোচদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। ও যখন যে কাজটা ধরে সেটা নিয়েই শুধু চিন্তা করে। সারাক্ষণ শুধু খেলা নিয়েই থাকে। প্রতিপক্ষের দুর্বল দিক কোনটা? আমাদের প্লাস পয়েন্ট কোথায়? উইকেট কেমন হওয়া উচিত? সবকিছু সে একা করে।’

খেলোয়াড়দের কর্তৃত্বের মধ্যে রাখা এবং ‘বসগিরির’ একটা প্রবণতা রয়েছে হাতুরেসিংহের ব্যক্তিত্বে। দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে এমন কড়া হেডমাস্টার ধাঁচের কোচকেই পছন্দ বিসিবির। নাজমুল হাসানের কথাতেও তাই মিলল- ‘যেকোনো সিরিজে দেখা যায় খেলোয়াড়রা পিক অ্যান্ড চুজ করে। এতে সিরিজের সার্বিক পরিকল্পনা দুর্বল হয়ে যায়। এসব দিক সামাল দিতে হাতুরেসিংহে বেশ দক্ষ। ওর কথা হলো তুমি খেলবা না। ঠিক আছে তোমার না খেলার যুক্তি আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু মনে রাখবা তুমি যেমন খেলবা না, ঠিক তেমনই আমিও তোমাকে যেকোনো খেলায় বাদ দিতে পারি। ড্রপ করতে পারি। তখন তুমি বাড়তি কোনো কথা বলতে পারবা না। ওই খেলোয়াড় তখন মনে করে, হায় হায় আমি যে খেললাম না, পরের সিরিজে আমাকে হয়তো বাদ দিয়ে দেবে! এই যেমন ধরেন জাকির হাসানের বিষয়টা একটা উদাহরণ হিসেবে ধরি। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে এত সুন্দর খেলল ছেলেটা। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে পারফর্ম করা সহজ কাজ নয়, বেশ কঠিন। এখন বিষয়টা হলো তামিম যখন দলে ফিরবে, নিশ্চয়ই তখন পরের সিরিজে জাকির বাদ পড়বে। এখন দেখুন এই ছেলেটার জন্য এটা কেমন লাগে! আমাদের সবারই খারাপ লাগার বিষয় এটা। সমস্যাটা হলো তামিম ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে খেলতে পারল না। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও খেলল না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটা টেস্ট খেলল না। এ রকম করলে তো হবে না! আমি এই বিষয়ে আর বেশিকিছু বলতে চাই না। এ রকম পিক অ্যান্ড চুজ তো তখন অনেকেই করবে। ও করেছে বলেই যে আমি এখানে বলছি তা নয়। আমি স্রেফ একটা উদাহরণ হিসেবে এটা সামনে আনলাম। তবে এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি নিশ্চিত চন্ডিকা হাতুরেসিংহে কোচ হিসেবে এলে এগুলো আর হবে না। কেউ আর তখন এসব করতে পারবে না। এসব আর চলবে না। এই হলো সোজা কথা।’ 


এই সময়ে বাংলাদেশে এখন তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের কোনোটিতেই সুনির্দিষ্ট কোনো অধিনায়ক নেই। ক্যাপ্টেন্সির মিউজিক্যাল চেয়ার চলছে যেন। ড্রেসিংরুমে সত্যিকারের কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে এমন একজন কোচ দরকার যিনি শো’টা রান করবেন। চালকের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। সেই স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণের জন্য চন্ডিকা হাতুরেসিংহেকে এই সময়ে সবচেয়ে যোগ্য মনে করছে ক্রিকেট বোর্ড। 

কোচ হিসেবে আগেও এমন পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন চন্ডিকা। দ্বিতীয় মেয়াদে তার চাকরির ক্ষেত্রে সেটাকেও প্লাস পয়েন্ট বলে ভাবছে বিসিবি। 

২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসছে ইংল্যান্ড। সেই সিরিজের আগেই নতুন কোচ ঠিক করে ফেলবে বিসিবি। তেমন প্রতিশ্রুতিই দিলেন নাজমুল- ‘হাতুড়েসিংহের সঙ্গে আমাদের সব বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা আগে তাকে যে পরিমাণ অর্থ দিতাম কোচ হিসেবে এবার তারচেয়ে কম দামেই অফার করেছি। তবে সম্ভাব্য কোচের পদে হাতুড়েসিংহে এগিয়ে থাকলেও এখনও কিন্তু বিষয়টা ফাইনাল না। ফাইন টিউনিং কিছুটা বাকি আছে। ইংল্যান্ড আসছে ২৪ ফেব্রুয়ারি। আমরা পরিকল্পনা করেছি যেন নতুন কোচ ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে দিতে পারেন।’ 

বাংলাদেশ দলের শেষ দুই ক্রিকেট কোচ স্টিভ রোডস ও রাসেল ডমিঙ্গো ড্রেসিংরুম সামাল দিতে এবং খেলোয়াড়দের ওপর কর্তৃত্ব রাখার ক্ষেত্রে বিসিবিকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। দুজনেই ছিলেন একটু বেশি কোমলমতি। দলকে শৃঙ্খলে রাখতে তারা যথেষ্ট কড়া হতে পারেননি। খেলোয়াড়রা যে যার ইচ্ছামতো আচরণ করায় সেই প্রভাবটা পড়েছে দলের পারফরম্যান্সেও। এই প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘আগে যে শৃঙ্খলা এনেছিলাম, তা পেছনের আড়াই বছরে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে (ক্রিকেটাররা)। আমি এখন দেখছি একের পর এক নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে কয়েকজন খেলোয়াড় চলে গেল দাওয়াত খেতে। কেন এমন হবে? এমনটা চলতে থাকলে তো দলে কোনো শৃঙ্খলাই থাকবে না। জালাল ভাই (জালাল ইউনুস) ও সুজনকে (খালেদ মাহমুদ সুজন) আমি ফোনে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা থাকতে ওরা কীভাবে অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও গেল? কোন সাহসে গেল? আপনারা সেটা ঠেকাতে পারলেন না কেন? বিষয়টা হলো এই নিয়মকানুনগুলো এত ঢিলে হয়ে গেছে যে এগুলো ঠিক করতে হলে আমাকে আগের মতো ওই রকম কিছু করতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’

 সেই পথ সঠিক করতেই কোচ চন্ডিকা হাতুরেসিংহের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করছে বিসিবি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা