× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

একবার জাতীয় দলে ফিরতে পারলে ভালো হতো

আপন তারিক

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩১ এএম

আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৯ পিএম

একবার জাতীয় দলে ফিরতে পারলে ভালো হতো

তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘আশার ফুল’। স্বপ্ন ছড়িয়েছিলেন টেস্ট অভিষেকেই। বাংলাদেশের অনেক বড় জয়ে ছিল তার অবদান। কিন্তু ক্যারিয়ারের মাঝপথে এসে ফুলের সুরভি ছড়ানোর চেয়ে কাঁটার ক্ষতে পথ হারালেন। ক্রিকেট থেকে পথ হারানো আশরাফুল সেই যে দলছুট হলেন; আর ডেরায় ফেরা হলো না তার। সেই দুঃখ আছে। অপূর্ণতা আছে। সঙ্গে আছে একরাশ তৃপ্তি। আশরাফুলের সেই গল্পগাথার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব তুলে ধরেছেন আপন তারিক।


প্রশ্ন : আপনার অবসর সময়টা কীভাবে কাটে? মানে ছুটির দিনগুলো...

আশরাফুল : এখনও যেহেতু আমি খেলছি। আরও একটা সিজন খেলার ইচ্ছা আছে। এই সিজনটা ভালোমতো খেলতে চাই। এই বছরটা যেন আমি ভালো খেলতে পারি, সেজন্য প্র্যাকটিস করি, আর আমার একটা মেয়ে আছে আবিরা তাসনিম তুবা, একটা ছেলে আছে মোহাম্মদ তাওয়াফ আদভি; ভাইয়ার তিনটা বাচ্চা আছে, ভাইয়ার নতুন একটা বেবি হইছে দেড় বছর তাবিয়া, আমার বোনের একটা ছেলে। তো আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকি। বাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটে অবসর সময়। আর প্র্যাকটিস করি। সময় কেটে যাচ্ছে। যেহেতু সামনে খেলতে পারছি না মিস করি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় খেলা হচ্ছে বাংলাদেশের। সেই সব জায়গায় গিয়ে খেলি। এভাবেই আসলে সময় কাটাচ্ছি।

প্রশ্ন : ক্রিকেটের বাইরে ফিউচার নিয়ে ভাবনা কী আপনার? এখন তো অনেকেই ব্যবসায় জড়াচ্ছেন...

আশরাফুল : না, আমরা ছয় ফ্রেন্ড মিলে একটা রেস্টুরেন্ট দিয়েছিলাম ২০১১ সালে ওয়ারী র‍্যাংকিন স্ট্রিটে। সেটা আলহামদুল্লিলাহ এখনও চলছে। প্রায় ১০-১১ বছর হয়ে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টের। এছাড়া আমার ভাইয়ার একটা বিজনেস আছে অ্যাশ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, ওইটা আমাদের বাসার ওপরেই অফিস। তো আমার বিজনেস বা অন্য কিছুতে আমার নেশাও নেই। আমার জাস্ট ক্রিকেট নিয়েই থাকা, ইচ্ছা ও আছি এখনও। রেস্টুরেন্ট দেওয়াটা হলো, আমরা খেতে পছন্দ করি। সেখানে যাই, সপ্তাহে এক দিন এক বেলা। আগে তো রেগুলার যাওয়া হতো। এখন হয়তো মাসে এক দিন-দুই দিন খাবার নিয়ে আসি, খাই। এভাবেই চলে। ওইটা চলছে। আমার বিজনেস নিয়ে এত ফোকাস না, ক্রিকেট নিয়েই ফোকাস। 

প্রশ্ন : মাঝে মাঝেই আপনাকে বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। এই তো সেদিন দেখা গেল শাহরুখ খানের দিলওয়ালে দুলহানে লে জায়েঙ্গের মতো ট্রেনে উঠছেন। নায়িকা কাজলের মতো কেউ একজন হাত বাড়িয়ে আছে আপনার জন্য...

আশরাফুল : ফাইন অ্যান্ড ফ্যানির সঙ্গে একটা কন্ট্রাক্ট হয়েছিল তাদের থিমটা খুব ভালো লেগেছে। দিলওয়ালের ওই সিনটা ওনাদের মাথায় এসেছে। ওনাদের কাছে মনে হয়েছে, না আমাকে দিয়েই সিনটা ওনারা করাবেন। ফাইন অ্যান্ড ফ্যানি অনেক দিন ধরেই মার্কেটে আছে। 

প্রশ্ন : অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে?

আশরাফুল : এসব কাজই আসলে অন্য মানুষের প্রেশারে করতে হয়। নাটক যেটা করতে হয়, তারেক ভাই যিনি লিখেছেন, উনি এমনভাবে ধরেন যে, বলেন করেন... করেন। ওনার হেল্প করতে গিয়েই আসলে কাজগুলো করা। না ফিউচারে এমন কোনো ইচ্ছা নেই অভিনয়ে থাকার। ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকতে চাই। ক্রিকেট আমি বুঝি এবং ভালোবাসি। মাঝে মাঝে হয়তোবা টুকটাক একটা দুইটা করা যেতে পারে। কিন্তু প্রফেশনভাবে ওই লাইনে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। 

প্রশ্ন : ধারাভাষ্যে আসার ইচ্ছা আছে কী? ব্যাটিংয়ের মতোই আপনি তো বেশ সাবলীলভাবেও কথা বলেন!

আশরাফুল : এটাও আমার মাইন্ডে আছে। আমি প্রফেশনটা নেব কি না। আমি চিন্তা করছি। প্রথমে দেখব আমি কতটুকু সাকসেসফুল হতে পারি। কোচিং লাইনে যদি ভালো করি, তাহলে তো আলহামদুল্লিলাহ। যদি না পারি, তাহলে এই অপশনটা আমার মাইন্ডে আছে। তো আমি খেলাটা ফলো করলে আমার ভালো লাগে। ওই এক্সপেরিয়েন্সটা আমার মনে হয় না যে আমি ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারবে। ২২ গজের মধ্যে ১৪৫ কিলোমিটার বল আসছে। ইনসুইং বা আউটসুইং হচ্ছে। বলটা লেগস্টাম্পে নিয়ে চার-ছয় মারবেন, ফেস করবেন, ওই ফিলিংসটা কিন্তু সাধারণ মানুষ বুঝবে না। আমি খেলে আমার এক্সপেরিয়েন্সটা শেয়ার করতে পারব। সেই জায়গা থেকে আমি যখনই কোনো খেলা নিয়ে অ্যানালাইসিস করি। প্রথমে আমি চিন্তা করি, ওই জায়গায় আমি থাকলে কী করতাম বা কী হতো। বা আমি কী করেছিলাম। আমার ক্যারিয়ারে সেম সিচুয়েশনে কী করেছিলাম। তাহলে আরেকটা ছেলে কেন পারছে না সেই জিনিসটা। অনেকে হয়তো দেখি খেলা ছাড়ার পরে এমনভাবে বলে যেন খুব সহজ। ক্রিকেট খেলাটা এত সহজ না। একবার যদি ওনারা চিন্তা করেন আমি আমার ক্যারিয়ারে কী করছি, তখন কিন্তু আমরা যখন কথা বলব, মেপে কথা বলাটাই স্বাভাবিক। 

প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায় খেলোয়াড়ের পরিবারের অনেকে খেলায় আসেন। আপনার পরিবারের কেউ ক্রিকেটে আসবে নাকি?

আশরাফুল : আমার ভাইয়ার ছেলে তানজিল ক্রিকেট খেলে। ও এখন আন্ডার ১২ ক্যাম্পে আছে। ও এখানে আফতাব নগরে গোড়ান ক্রিকেট একাডেমিতে প্র্যাকটিস করে। তো ওর খুব ইচ্ছা ক্রিকেটার হওয়ার। তো এবার বিকেএসপিতে ২০০ জনের মধ্যে সুযোগ পেয়েছে। তো সেই জায়গা থেকে মনে হয় ৩৫ জন সিলেক্ট করবে। চার দিনের ক্যাম্প আছে ৩ তারিখ। ওর ইচ্ছা আছে ক্রিকেটার হওয়ার। আমার বাচ্চা দুইটাও ক্রিকেট খেলে। ছেলে-মেয়ে। এখন তো ক্রিকেট খেলে। আমরা যখন ঘরে খেলি। যদি ফিউচারে চাই, তাহলে অবশ্য ওয়েলকাম করব। এবং হেল্প করব। কিন্তু প্রেশার দেব না যে খেলতে হবে। কারণ খেলাটাতে সুখের থেকে কষ্টটাই বেশি। আপনার আনন্দের থেকে কষ্টটাই বেশি।

প্রশ্ন : কিছুদিন আগে সাকিব মজার ছলে বলেছিলেন বিপিএলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পেলে নাকি দুই মাসে সব পাল্টে দেবেন। এমনকি বিসিবির প্রধান হওয়ার একটা ইচ্ছার কথাও শুনিয়েছেন। আপনি নাজমুল হাসান পাপনের জায়গায় এলে কী কী করতে চান?

আশরাফুল : এই বিষয়ে আমি জানি না। আমার কাছে মনে হয় লাস্ট চার-পাঁচ বছর ধরে আমি বলছি, আমাদের ক্রিকেটটা কিন্তু ৫০-৬০ জনের জন্য না। আমাদের ক্রিকেটটা হলো ফার্স্ট ক্লাসে যতজন ক্রিকেটার আছে, লিস্ট ‘এ’-তে যতজন ক্রিকেটার আছে, সবার জন্য। ক্রিকেট সিজনে যে ছয়টা মাস আমরা ক্রিকেট খেলি, ওই সময় যেন আমরা বসে না থাকি, প্রায় চার মাস ধরে বসে থাকে। ওই অ্যারেজমেন্টগুলো আমি আশা করব। প্রচুর ফ্যাসিলিটিজ তৈরি করা উচিত। ঢাকার যারা ছেলে, আমরা যারা ঢাকাতে থাকি, আমরা প্রচুর আনলাকি প্লেয়ার। আমাদের কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। ক্যামবাক করার কোনো রাস্তা নেই। ওই একটা মিরপুরে একটা ইনডোর। ওইটা ন্যাশন্যাল টিম করে, এ টিম করে। মহিলা টিম করে সবাই। ঢাকার যারা ছেলে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটার, তারা ক্রিকেটার হতে চায়, তাদের কিন্তু ওই সুযোগটা নেই। আগে যেমন আমরা আবাহনী মাঠে করতাম, এখন কিন্তু ওই সুযোগটা  নেই। এইসব জিনিস... কাজ করলে কাজ করার অনেক জায়গা আছে। আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হতে চান, তাহলে আমাদের যে ফ্যাসিলিটিজ, ওই ফ্যাসিলিটিজে যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যান, তাহলে এক্সামপলটা কিন্তু ভালো হয় না। আপনার কোনো কিছু নেই, আপনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কিন্তু সবাই ওই থিংকিংয়েই যাবে, আমাদের কিছু দরকার নেই, আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। চ্যাম্পিয়নদের ফ্যাসিলিটিজ হতে হবে চ্যাম্পিয়নদের মতো। প্রচুর প্র্যাকটিস করার সুযোগ করে দিতে হবে। ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ। ঢাকা শহরে ইনডোর নেই, বাচ্চারা যাবে... ইংল্যান্ডে আন্ডার ৯ থেকে ৭০-৮০ পর্যন্ত কেউ যদি ক্রিকেট খেলতে চায় প্রপার মাঠে ক্রিকেট খেলতে পারে। আমাদের ওই ফ্যাসিলিটিজটা দরকার। আমাদের দেশে সেই সুযোগটা নেই। আপনি চাইলেই আজকে একটা ম্যাচ খেলবেন, সেটা পারছেন না। 

প্রশ্ন : এখনকার ক্রিকেটাররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ট্রলের শিকার হয়। সেটা নিয়ে আপনার ধারণা কী? এই সমস্যা থেকে অনুজ ক্রিকেটাররা কীভাবে মুক্ত থাকতে পারে?

আশরাফুল : আমি ভাগ্যবান, আমরা যখন শুরু করেছিলাম, এইসব সমস্যায় পড়িনি। এখনকার ক্রিকেটারদের জন্য এখনকার মানুষের জন্য জীবনটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। কারণ সবাই সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করে। সবাই চাইলেই মন্তব্যটা করে দিতে পারে। এই জিনিসটা একটা স্পোর্টসম্যানের জন্য ভেরি টাফ। এই জায়গাটাতে আমার মনে হয় যতটা পারে পজিটিভ থাকা। এবং নেগেটিভ কিছু না করা। যতটা হাম্বেল থাকা যায়। আর ওই জিনিসগুলো না ফলো করা। এটা বলাটা সহজ, আগে হয়তো অনেক সহজ ছিল। আগে শুধু নিউজপেপার ছিল, খবর ছিল ৮ আর ১০টার খবর। এখন কিন্তু হাতের মোবাইলে চলে এসেছে সবকিছু। সেই জায়গাটাতে কন্ট্রোলে নেই। যতটুকু পারেন, ইউজ না করে থাকাটা।

প্রশ্ন : আপনার জীবনের গল্পটা তো সিনেমার মতো। নন্দিত আবার নিন্দিতও। আপনাকে নিয়ে কোনো বায়োগ্রাফি হবে কী?

আশরাফুল : আসলে একবার জাতীয় দলে ফিরতে পারলে ভালো হতো। বাংলাদেশ টিমে ফিরলে জিনিসটা অসাধারণ হতো। তাহলে হয়তোবা নিজেকে বোঝানোটা ইজি হতো। তারপরও হয়তোবা যেভাবে মাদারটেক থেকে ধানমন্ডি হেঁটে গিয়েছি। ধানমন্ডি থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম হেঁটে গিয়েছি। ওয়াহেদুল গণি স্যার হেঁটে গিয়েছেন। ওনার সঙ্গে থেকেই তো মানুষ হওয়া। বাবা-মা তো ছিলেনই। যতটুকু ভালো মানুষ পছন্দ করে পুরো ক্রেডিটটাই গণি স্যারকে দেব। সেই ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল, এখনও অঙ্কুর ক্রিকেট একাডেমি ফ্রিতেই করছেন। আমার জীবনের আপ অ্যান্ড ডাউন মিলিয়ে সিনেমা তো হতেই পারে।

প্রশ্ন : আর নিজের আত্মজীবনী?

আশরাফুল : অবশ্যই করার আছে। ক্যারিয়ারের সব কিছু মিলিয়ে বই লেখার ইচ্ছা তো আছেই।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা