পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৮ পিএম
প্রথমবারের মতো আয়োজিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েই দারুণ স্মৃতি নিয়ে ফিরলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। গ্রুপ পর্বেই দুই জায়ান্ট অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে হারানোর তৃপ্তি। যদিও সুপার সিক্সে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটা হারতেই এলোমেলো সবকিছু। তারপরও দারুণ এক সম্ভাবনা জন্ম দিয়ে ফিরলেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
এই দলটা নিয়ে দারুণ আশাবাদী কোচ দীপু রায় চৌধুরী। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মিশন শেষে ফিরে আশার ফানুস ওড়ালেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ। দীপু রায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন পার্থ প্রতীম রায়।
প্রস্তুতি প্রসঙ্গে...
আমরা যখন সিলেক্ট করছি, ক্রিকেট বোর্ড যখন হান্ট করল অনূর্ধ্ব-১৭ দিয়ে। তখন করোনার সমস্যা ছিল। কোথাও খেলা বা বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। যখন অবস্থা ভালো হলো, তখন ক্রিকেট বোর্ড চেষ্টা করছে কয়েক জায়গায় যাওয়ার। তবে সময় মেলেনি। সবাই এই সময় এত ব্যস্ত ছিল, তারা আমাদের সময় দিতে পারেনি। তখন ক্রিকেট বোর্ড এশিয়া কাপ খেলতে মালয়েশিয়া টিম এলে তাদের সঙ্গে বিকেএসপিতে ম্যাচ আয়োজন করল। একটা দল একসঙ্গে ক্যাম্প করে সঙ্গে সঙ্গে খেলল। যাতে ইন্টারন্যাশন্যাল ম্যাচ কীভাবে খেলতে হয় তা বুঝতে পারে। টিমের কালচার বলেন সবকিছু একটা সিস্টেমে আনার চেষ্টা করছে। তখন আমরা খেললাম। সেটা আমাদের অনেক উপকার করেছে। দল হিসেবে আমরা খেলা শুরু করছি। বাইরের সঙ্গে খেলার সুযোগ না পাওয়া মূল দলের সঙ্গে চারজন ক্রিকেটারকে নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যায়। যাতে ওইখানে অভিজ্ঞতা কন্ডিশন সবকিছু বুঝতে পারে। সবদিকে এগোতে পারে সে রকম একটা সুবিধা পেল। সেখানে খেলেও ভালো হলো, সেখানে গিয়ে একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে এলো। এখানে একটা ক্যাম্প হলো একাডেমিতে প্রায় এক মাসের। সেখানে আমরা কন্ডিশনিং স্কিল, তারপর ম্যাচ খেলেছি ইউল্যাবের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে। তারপর জাতীয় দলের সঙ্গেও ম্যাচ খেলেছি। এতে টিম আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ছেলেদের সঙ্গে ম্যাচ খেলা শুরু করায় স্ট্রং পয়েন্ট ছিল। এটা আমাদের অনেক হেল্প করেছে। আবার তারপরে ক্রিকেট বোর্ড আমাদের আগে পাঠিয়ে দিছে। ওখানে কন্ডিশন, প্র্যাকটিস ম্যাচ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েছিল। প্রতিদিন আমরা সেখানে অনুশীলনের মধ্যে ছিলাম। ওখানে রাজ্য দলের সঙ্গে ভালো খেলায় বিশ্বাস অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল।
সেমিফাইনালে না খেলার দুঃখ...
রানরেটের কারণে সেমিফাইনালে যেতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক ছিল। আমাদের গ্রুপ থেকে যারা গেছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। ভারত যদি ওইদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতত তাহলে আমরা ওইদিনই সেমিফাইনালে যেতে পারতাম। আমরা অপরাজিত ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া দুটো ম্যাচ হেরে ছিটকে যেত। ভারত বাজেভাবে হারায় রানরেটটা অনেক বেশি বেড়ে যায় আমাদের জন্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২৫-৩০ রানের মধ্যে আউট করা লাগত। আমরা ৯ ওভারে জিতেও কাভার করতে পারিনি।
স্কিলের সঙ্গে ভয়ডরহীন ক্রিকেট...
আমাদের প্লেয়াররা কিন্তু ফেয়ারলেস ক্রিকেট খেলছে। সেটা আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বাস করছি টাইমিং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিশ্বাস করিয়েছি তাদের স্কিল ভালো। স্কিল দিয়ে টাইমিং করে আমরা পারব। তার সঙ্গে পাওয়ার হিটিংটা। স্কিল যদি থাকে পাওয়ার হিটিংটা ইজি হয়ে যায়। এটা স্টেপ বাই স্টেপ আমরা করলাম। ডে বাই ডে আমরা ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করছি। সবদিক থেকে আমরা ভালো ছিলাম। বিশ্বাস ছিল আমরা অনেকদূর যেতে পারব। ওই বিশ্বাসটা কিন্তু প্রথম থেকেই দিয়ে আসছে। ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যখন যেটা চেয়েছি, সেটা দিছে। কখনও মানা করেনি। প্র্যাকটিস ম্যাচ ছেলেদের সঙ্গে অনেকগুলো খেলেছি খুলনাতেও। এতে সাহস বাড়ছে ওদের। মাহেদি খুলনায় ছিল, ও ব্যাট দিয়ে হেল্প করেছে। যাওয়ার আগে ক্রিকেট বোর্ড সব মেয়েকে ব্যাট দিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল, ভালো ব্যাট দিলে রেঞ্জ অব শট বাড়ে। কোনো জায়গায় মানা করেনি। সবার বিশ্বাসটা কম ছিল, আমরা ভালো করতে পারি।
চার পাশের সমর্থন মিলেছে...
প্রেসিডেন্ট (নাজমুল হাসান পাপন) সব সময় ফোন দিয়ে খোঁজ রেখেছেন। (শফিউল ইসলাম চৌধুরী) নাদেল ভাই, তৌহিদ ভাই, সিলেক্টর (মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু) মঞ্জু সব সময় খোঁজ নিয়েছেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দল সিলেক্ট করার সময় মঞ্জু সব সময় সমর্থন দিয়েছে। আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। সবার সমর্থন পেয়েছি। কোনো জায়গায় বাধা পাইনি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ, ফ্রি হ্যান্ড পাইছি।
পরের বিশ্বকাপের পরিকল্পনা...
দেশে ফেরার পর নেক্সট ওয়ার্ল্ড কাপের প্ল্যান আগে থেকেই করা হচ্ছে। আমার সঙ্গে কথা বলেছে। সবচেয়ে বড় জিনিস তারা সাহসী ক্রিকেট খেলছে। এই জিনিসটা খুব ভালো। আন্ডার ১৯-এ পাইপলাইন ভালো হলে ন্যাশনাল টিমের প্লেয়াররাও অটোমেটিক্যালি ভালো খেলবে। তারা অনেক বেশি সিরিয়াস হবে। যারা সিনিয়র প্লেয়ার যারা দল ছাড়বে, তরুণরা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়েই খেলবে। আমাদের চারটা প্লেয়ার মেইন টিমে আছে। আমি শিওর ন্যাশনাল টিম ওদের দারুণভাবে হ্যান্ডেল করবে। দুই বছরের মধ্যে ভালো জায়গায় চলে যাবে। পারফর্মার হবে। মারুফা ও স্বর্ণা খেলার জন্য প্রস্তুত। প্রথম একাদশে জায়গা পেলে আমি অবাক হব না। এখন আমরা আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেব। সবাই আমাদের সমর্থন দিয়েছে। যদি প্রপার সাপোর্ট থাকে, তাহলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করব। পরবর্তী বিশ্বকাপে অবশ্যই আমরা ফাইনাল খেলব বলে আশাবাদী। ক্রিকেট বোর্ড দুই বছরের জন্য যে প্ল্যান করছে, তাতে পরিবেশ আরও বদলে যাবে। আমি অনেক হোপফুল, চেষ্টা করব, একটা বিশ্বকাপ আনার।