‘মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাব মাঠ থেকে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত বলছি...’ -বাতাসে কান পাতলে এখনও এই কণ্ঠস্বর শুনতে পান বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরোনো দর্শকরা! ইথারে ভেসে আসা তার ধারাভাষ্যে তখন থেকেই বুঁদ গোটা বাংলাদেশ। বলে বলে বর্ণনা। বল-রানের হিসাব, দুশ্চিন্তায় ঘেমে একাকার! সমীকরণ মেলাতে পারবে তো কিলাত কেলাব মাঠের ওই এগারো বাঙালি? বাংলাদেশ নামের উর্বর ব-দ্বীপে সেদিন কী বয়ে গেছে তা বোঝাতে হাজারো শব্দও যেন অসহায়।
দিনভর উৎকন্ঠা শেষে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত যখন তার নাটকীয় দরাজ কণ্ঠে চিৎকার দিয়ে উঠলেন ‘এবং বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি ১৯৯৭ সালের চ্যাম্পিয়ন...’, ব্যস, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া তখন উত্তাল। সেবারই প্রথম বাঘের গর্জন শুনেছিল বিশ্ব। সেই কথার শিল্পী জাফরউল্লাহ শারাফাত। আব্দুল হামিদ-তৌফিক আজিজদের দেখানো পথ ধরে যিনি বাংলা ধারাভাষ্যকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়!
ভাষার মাসে সেই শারাফাতের কণ্ঠও কেমন যেন অসহায়ের মতো শোনাল। কারণ, তিনি অগ্রজদের দেখানো পথে হাঁটতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার অনুজরা পথ হারিয়েছে। এমনকি যে বেতার থেকে তার শুরু সেখানেও এখন বাংলা ধারাভাষ্যের দুঃসময়। টেলিভিশনেও একই গল্প!
এই যে অবজ্ঞা বাংলার প্রতি। হিসাব মেলাতে পারেন না শারাফাত। প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে বলছিলেন, ‘বাঙালি কিন্তু একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের প্রাণের বিনিময়ে কিন্তু এই ভাষা। সেই শহীদদের প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা ভুলে বাংলা ভাষাটাকে বিকৃত করা, বাংলাকে বাংরেজি বানানো খুবই দুঃখজনক। রেডিও হোক কিংবা টেলিভিশন যারা দায়িত্বশীল তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, তারা যেন এটায় নজর দেন। তোমরা বাংলা ভাষাটাকে কেন বিকৃত করে ধারাভাষ্য দিচ্ছো! বইয়ের যে প্রমিত ভাষা, সঠিক উচ্চারণ এর বাইরে তো আমরা যেতে পারি না। যখন আপনি কোনো টেলিভিশন কিংবা বেতার যেকোনো মাধ্যমেই কথা বলুন ঠিকঠাক মেনে বলতে হবে।’
সবাই ভাইরাল হওয়ার পেছনে ছুটছে। এ কারণে একটা মোহ থেকেও ধারাভাষ্যে আসছেন অনেকে। তাদের জন্য শারাফাতের পরামর্শ, ‘দেখুন, এখন অনেক ধারাভাষ্যকার। এরা উৎসাহিত হলো আমাদের দেখেই। তাদের ভাবনা, আমি যদি ওই পর্যায়ে যেতে পারি। কিন্তু সেখানে যেতে হলে তো সঠিকভাবে যেতে হবে। রাতারাতি তারকা হওয়ার একটা প্রবণতা সবার মধ্যে। এটা বেদনাদায়ক। এখানে শর্টকাট বলে কিছু নেই। ক্রিকেট ধারাভাষ্য খুবই টেকনিক্যাল একটা ব্যাপার। প্রতিনিয়ত নিয়ম পাল্টাচ্ছে। রেকর্ড হচ্ছে। সব মাথায় থাকতে হবে। প্রমিত বাংলা ভাষাটাও জানতে হবে!’
কিন্তু সেই জানাটাতেই এখন অনেক অনীহা। অবশ্য ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ারও সুযোগ কম বাংলাদেশে। শারাফত বলছিলেন, ‘আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না কতটা সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্য থেকে কাজ করি। ধারণাও করতে পারবেন না, কতটা কম সম্মানী নিয়ে কাজ করে যেতে হয়!’
অবশ্য চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতদের শুরুর পথটা ছিল আরও কঠিন। তখন বসার একটা ভালো চেয়ারও ছিল না তাদের। প্রচণ্ড রোদে মাথার ওপর কোনো ছাউনিও ছিল না! সারা রাত জেগে থেকে পরের দিন দিয়েছেন ধারাভাষ্য। পথটা ছিল বন্ধুর। কেউ জানেই না সেই গল্প! অথচ এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে চলে বিকৃত বাংলায় ধারাভাষ্য! হারিয়ে যেতে বসেছে আব্দুল হামিদদের সেই সুমিষ্ট কণ্ঠে প্রমিত বাংলায় ধারাভাষ্য!
তবে শারাফাত হতাশ নন, তার বিশ্বাস নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হবে। যথাযথ সম্মানী পাবেন ধারাভাষ্যকাররা, প্রমিত বাংলার জয় হবে মাইক্রোফোনের সামনেও!
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.