× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাধীন দেশে বাংলায় ক্রিকেট ধারাভাষ্য হয় না এটা দুঃখজনক

আপন তারিক, বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:১৪ পিএম

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:২২ পিএম

স্বাধীন দেশে বাংলায় ক্রিকেট ধারাভাষ্য হয় না এটা দুঃখজনক

বাংলা ধারাভাষ্যের কিংবদন্তি আলফাজউদ্দিন আহমেদ। ভালোবাসার টানে ধারাভাষ্যে জড়িয়ে আছেন চার দশকেরও বেশি সময়। দীর্ঘ এই অভিজ্ঞতায় তৃপ্তি যেমন আছে, আছে আক্ষেপও। এসব নিয়েই তার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিবেদক আপন তারিক

প্রশ্ন :  কবে থেকে আপনার ধারাভাষ্যে পথচলা শুরু?

উত্তর : ৮১ সালে—১৯৮১ সাল থেকে।

প্রশ্ন : যদি একটু বিস্তারিত বলতেন... 

আলফাজ : ১৯৮০ সালের শেষের দিকে একটা অডিশন হয়েছিল রেডিওতে। আমি রেডিওতে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তখন শুনলাম ওখানে ধারাভাষ্যকারদের অডিশন হচ্ছে। আমি আমার বন্ধুকে বললাম, ভাই আমি তো কমেন্ট্রি করতে পারি। আমি কি অডিশন দিতে পারব? তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ, পারবেন। তিনি ব্যবস্থা করে দিলেন—আমি অডিশন দিলাম। সেখানে আমি ছাড়া বাকি সবাই ফেল করেছিল। তারপর ’৮১ সালের শুরুর দিকে, মাসটা ঠিক মনে নাই। তখন তো ফুটবল খেলা হতো, ক্রিকেটের ফ্রিকোয়েন্সি কম ছিল। প্রথম ম্যাচেই আমি ধারাভাষ্য দিই। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনীর একটা ম্যাচ হচ্ছিল। সেটাতে আমার সঙ্গে ধারাভাষ্যে আহমেদ ভাই ও মিন্টু ভাই ছিলেন। সেটাতেই বুকিং পাই, ওটাই প্রথম—গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে, সেখান থেকেই শুরু। 

নব্বইয়ের দশকে এসে আমরা যখন ’৯৭-এ আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করি ওখানে আমি ছিলাম না, শারাফাত (চৌধুরী জাফরউল্লাহ) ও শামীম ছিল। তবে এরপর থেকে যতগুলো বিশ্বকাপ হয়েছে আমি ধারাবিবরণী করেছি, হয় সেখানে গিয়ে নয়তো এখানে বসে। এভাবে কাজ করেছি।

প্রশ্ন : সেই প্রসঙ্গে আসব। যেহেতু আপনি বলছিলেন আপনার বন্ধুর সহযোগিতায় এসেছেন। আপনার আগ্রহ ছিল, তখন আসলে কী ভেবেছিলেন?

আলফাজ : আমি তখন রূপালী ব্যাংক হেড অফিসে একটি চাকরি করি। তখনও আমরা খেলাধুলা ছাড়িনি। খেলাধুলা করতাম। আমরা চার ভাই, বড় ভাই আহমেদ শরীফ; ছোট দুই ভাই নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং মঈনউদ্দিন আহমেদ। নিজাম আবাহনীর গোলকিপার ছিল, যখন সালাউদ্দিন সাহেব ফুটবল খেলতেন চুন্নু-নান্নু-সালাউদ্দিনদের দলের গোলকিপার ছিল নিজাম। আমরা তখন ফুটবল-ক্রিকেট দুটোই খেলতাম। এটা কিছুটা সিজনাল ছিল, গ্রীষ্মকালে ফুটবল খেলতাম, শীত এলে আমাদের কুষ্টিয়াতে ক্রিকেট খেলা চলত। ক্রিকেটে চার ভাই একসঙ্গে ইন্টার সিটিসহ অন্য অনেক টুর্নামেন্ট খেলেছি। ডিস্ট্রিক টিমেও চার ভাই একসঙ্গে খেলেছি। ঢাকায় এসে আমি রূপালী ব্যাংকের টিম করেছি, খেলেছিও। আব্দুল হাদি রতন নামের একজন ছিল, তিনিও রূপালী ব্যাংকে আমার দলের হয়ে খেলেছেন। এরপর যখন ভালো টিম করলাম তখন জিএম নওশাদ খেলেছেন। হেলাল, সুরুজ, ব্যাটারদের মধ্যে ফারুক আহমেদ খেলেছেন। 

প্রশ্ন : আজকে শুধু আপনার ধারাভাষ্যের মধ্যে থাকতে চাচ্ছি। আরেক দিন না হলে বিস্তারিত গল্প শুনব...ধারাভাষ্যে আসার আগ্রহটা আসলে কীভাবে হয়েছে...

আলফাজ : আগ্রহ খেলাধুলা থেকে। আমরা যখন খেলাধুলা করতাম তখন কিছুটা বসতাম। মাইকের সামনে পুরো সময়টা না বসতে পারলেও বেশ কিছু সময় সেখানে কথা বলতাম। ১৯৫১ সালের দিকে যখন অজয় বোস এবং কমলবাবুর মাধ্যমে ধারা বর্ণনায় আসার আগ্রহ। তাদের শুনে আমার মনে হচ্ছিল আমিও পারব। এটা আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করেছে। 

তখন থেকে অনেক খেলার কমেন্ট্রি শুনেছি, হামিদ ভাইকে শুনেছি। এরপর ইচ্ছা ছিল সুযোগ পেলে আমিও ধারাভাষ্যকার হব। হঠাৎ করে সুযোগটা এভাবে আসবে আমি ভাবতে পারিনি। 

প্রশ্ন : বাংলা কমেন্ট্রির সময়গুলো যদি বলতেন...

আলফাজ : একেবারে শুরুর দিকের কথা বলি। অজয় বোস, কমলবাবু ওনারা যখন শুরু করলেন তারপর তাদের সঙ্গে যোগ দেন পুষ্পেন্দু সরকার। কলকাতায় যখন খেলা হতো তখন কমেন্ট্রি শোনাত আকাশবাণী। রেডিওর নাম ছিল কলকাতার আকাশবাণী। সেটি খুব স্পষ্ট শোনা যেত আমাদের ওখানে। আমরা সেই খেলাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। তারপর হঠাৎ করে শুনলাম হামিদ ভাইয়ের কণ্ঠ। ঢাকায় খেলা হলে ষাটের দশকে তখন রেডিও পাকিস্তানে কাজ করতেন তিনি। খেলা শেষে তিনি পাঁচ মিনিটের একটা ধারাবিবরণী পাঠ করতেন। লিখিত বা অন্য কিছু ছিল কি না, জানি না। তবে, পাঁচ মিনিটে বাংলায় তিনি পুরো খেলার সামারি বলতেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে ’৬৮ সালের দিকে তাদের ধারাভাষ্য করতেও শুনেছি, রেডিও পাকিস্তান থেকে।

দেশ যখন একাত্তরে স্বাধীন হলো তখন থেকে বাংলা ধারা বর্ণনা নিয়মিত শুরু হলো। এমসিসি এলো, সেটিও ধারা বর্ণনা হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ঢাকা ও রাজশাহীতে— তখন থেকে ধারা বর্ণনা শুনি। বাংলাদেশের বহু জায়গায় তখন হামিদ ভাইয়ের কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ে। আমি শুনেছি, তিনি বলতেন, ‘আমি আব্দুল হামিদ বলছি...’ চমৎকারভাবে তিনি বলতেন। খুব আকর্ষণ করত। একসময় মনের ভেতরে ইচ্ছা জাগে আমিও ধারাভাষ্যে কাজ করব। সেই সুযোগ ১৯৮০ সালে আমার কাছে আসে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। হয়তো কোয়ালিটি ভালো ছিল বলেই কোথাও কখনও তদবির করতে হয়নি। সে কারণে মানসিকভাবেও তৃপ্ত।

প্রশ্ন : আপনাদের সময়ে বাংলা ধারাভাষ্যকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন, তখন তো ফুটবলই ছিল প্রাণ...

আলফাজ : ফুটবল খেলা খুব দ্রুত শেষ হয়— নব্বই মিনিটের খেলা। আমরা মারামারি হতেও দেখেছি, টিয়ার গ্যাসও ছুড়েছে, মোহামেডান-আবহানীর খেলায়। তো অসাধারণ ধারাভাষ্য করতেন হামিদ ভাই, ফুটবলে। মোস্তফা ভাই ছিলেন, আমাদের মাঝে মিন্টু ভাই খুব ভালো কাজ করতেন। এগুলো সব কানে বাজে, চোখের সামনে ভাসছে। আমি সব সময় নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি, যেভাবে চাইছি সেভাবে করেছি। জানি না, কতটা ভালো করেছি না করিনি। তবে, অনেক দিন ধরে কাজ করছি, আমি এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আগে প্রস্তুতি নেওয়া লাগত, আমি কত করেছি, খেলোয়াড়ের হোটেলে গিয়ে টিম ম্যানেজারকে জিগ্যেস করতাম, তোমার টিম কোন জায়গায় ভালো, ডিফেন্স নাকি অফেন্সে ভালো, কে কয়টা গোল করেছে, কার সম্ভাবনা কতটুকু, গোলরক্ষক কেমন—এই তথ্যগুলো নিয়েই আমরা কমেন্ট্রি করতাম। একটা প্রস্তুতি নিতাম। এখন যেমন তেমন কষ্ট করা লাগে না, লোকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ওয়েবসাইটে গেলে সব তথ্য পাওয়া যায়। তখন একটু বাড়তি পরিশ্রম করতে হতো। 

আমি আর মৃধা মনে মনে প্রতিযোগিতা করতাম, যে ওর থেকে বেশি তথ্য দেব। তবে, শুধু তথ্যেই প্রতিযোগিতা ছিল না। আমরা সব সময় বলতাম, তথ্যটা জায়গামতো দিতে পারলেই সেটিই সবচেয়ে ভালো কমেন্ট্রি। যারা এটা করতে পারে, তাদের ভালো কমেন্ট্রার বলে মনে হয়।

প্রশ্ন : অগ্রদূত ও সমসাময়িকদের কথা বলেছিলেন। আপনি যদি নিরপেক্ষ জায়গা থেকে যদি দেখেন কার ধারাভাষ্য বেশি পছন্দ করতেন...

আলফাজ : আমরা তখন ফুটবলের কমেন্ট্রি বেশি করতাম। সব সময় হামিদ ভাইকেই আমার ভালো লাগত। তার বাংলা উচ্চারণও খুব ভালো ছিল, সে দারুণ বলতেন। উনি বর্ধমানের লোক, অনেক ভালো বাংলা বলতে পারতেন। খেলাটাও ভালো বুঝতেন। আমরা কিন্তু প্রায় সবাই খেলে তারপর কমেন্ট্রিতে এসেছি। হামিদ ভাই ভারত থেকে পড়ে এসেছিলেন। মিন্টু ভাই ব্লু ছিলেন। মিন্টু ভাই পার্সোনালিটি মেইন্টেইন করতেন। খুব বেশি মিশতেন না, কথা বলতেন না। ব্যক্তিত্ব রাখতেন। মৃধা খুব ভালো ছিল, চর্চা করতেন। আমাকে শেখাতেন, আমিও তাকে বোঝাতে চাইতাম। প্রমীলা ফুটবল নিয়ে আমার আপত্তি আছে। প্রমীলা বলতে বোঝায় সেসব নারী, যারা মনোরঞ্জনে সংযুক্ত আছে। ফুটবলের ক্ষেত্রে তারা শুধুই নারী, মহিলা। এই নিয়ে আমার সঙ্গে মৃধার তর্ক হতো। শুদ্ধ বিশ্লেষণের চেষ্টা করতাম। যারা আমাদের সঙ্গে খাপ খেত না তাদের সঙ্গেও আমাদের ভালো একটা ব্যবহার হতো। টিম নিয়ে সব সময় আনন্দ পেতাম। কলকাতার চেয়ে মানে এগিয়ে থাকতে চাইতাম। 

প্রশ্ন : পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের কমেন্ট্রির মাঝে পার্থক্য কী...

আলফাজ : এখন তো তারা একেবারে অন্যভাবে করে। একজন কমেন্ট্রি করে আরেকজন এক্সপার্ট হিসেবে থাকে। আগেও তেমন ছিল। দুজন কমেন্ট্রি করত একজন এক্সপার্ট থাকত। কলকাতায় যারা কমেন্ট্রি করে তারা একসময়ের খেলোয়াড়, নামিদামি খেলোয়াড়। তারা সেটাই কমেন্ট্রিতে নিয়ে এসেছেন। মাইক্রোফোন সামনে এলে তারা সেটি বেশ চমৎকারভাবে কথা বলতেন। খেলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা কথা বলে গেছেন। আমাদের দেশে কোনোদিন আমরা ভালো এক্সপার্ট কমেন্ট্রি পাইনি। কিন্তু আমরা যে লয়ে বা স্পিডে কথা বলেছি সে স্পিডে কথা না বললে খেলা অনেক বেরিয়ে যাবে, সেই বিষয়টি আমরা তৈরি করতে পারিনি। আমরা কিন্তু একজন একজন করে কমেন্ট্রি করা সেটিই করেছি এবং এখনও করে যাচ্ছি। কিছুটা এখন পরিবর্তন এসেছে। এখন দুজন করি। সবার সঙ্গে আবার দুজন করা যায় না। 

প্রশ্ন : এখন রেডিওতে কমেন্ট্রি ব্যাপারটা আরও চ্যালেঞ্জের। কিছুদিন আগে বিসিবি রেডিও তাদের বাংলা সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এখন টিকে থাকাটাও চ্যালেঞ্জের। কি মনে হয় এটা উতরানো যাবে? 

আলফাজ : আপনারা ভুলে যান সাংবাদিকসহ আপনাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাই। ৫২ বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে, এতদিনেও এখনও বাংলা ভাষায় ক্রিকেটে ধারা বর্ণনা হয় না। এটার জন্য দায়ী কারা ধারাভাষ্যকাররা নাকি অন্য যারা তারাও। কবে হবে? এই দেশের মালিক তো বাংলাদেশিরা, ইংরেজরা না নয়। বন্ধ হয়ে যাবে বা কি হবে এসব শুনতেও বিরক্ত লাগে। বন্ধ হবে না, হতে দেব না। প্রয়োজনে আমি রাস্তায় নামব। ১৭ কোটি বাঙালির জন্য আপনাকে বাংলায় ধারা বর্ণনা করতেই হবে। আমি জানি, ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ। টিভি রাইটস বিক্রি করে বিসিবির আরও বড় লোক হওয়া উচিত। বিপিএলে ভালোভাবে তারা ব্র্যান্ডিং করতে পারছে না বলে আয় কমে যাচ্ছে। এটাও বিসিবির ব্যর্থতা। ইংরেজি ধারাভাষ্য আরও ভালো হতে হবে। পাশাপাশি বাংলায়ও ধারাভাষ্য হতে হবে। সে ক্রিকেট হোক অথবা ফুটবল। সেটা দেখার অধিকার দেশের মানুষের রয়েছে। তারা মানুষ। বাংলা ধারা বর্ণনা করতে পারেনি বলে এটি বিপিএলের বড় ব্যর্থতা। আমি চাই, এটা করা হোক। এবং এটা করা সম্ভব। ছেলেখেলা বা ছেলেমানুষি বোঝালে তো হবে না। বিটিভিকে বলতেই হবে এটা করা সম্ভব। যারা ইংরেজিতে রাইটস কিনছে তাদের সম্মানহানি করছি না। আমরা ভিন্ন ভাষায় বাংলাদেশে দেখার জন্য ব্যবস্থা করছি। 

প্রশ্ন : উদ্যোগটা তাহলে কে নেবে?

আলফাজ : একটা চিঠি যদি বিসিবির প্রধান বিটিভিকে লেখেন, খেলাগুলো বাংলায় সম্প্রচার করার অনুরোধ করা হচ্ছে। সঙ্গে তার একটা কপি যদি আমাদের তথ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়ে দেন, তাহলেই কিন্তু এটা করা সম্ভব। কিন্তু সেই জিনিসটি আমরা করতে চাই না। খালি বন্ধ করেছে বন্ধ করেছে বলছেন। বিবিসির কী হয়েছে না হয়েছে তা আমি জানি না। বিবিসি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তার একটি উইন্ডো বন্ধ হোক না হোক আমার কিছু আসে যায় না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, আমরা প্রতিষ্ঠানের মালিক; আমাদের প্রতিষ্ঠান আমাদের কথামতো চলতে হবে।

প্রশ্ন : রেডিওতে কথা বলাটা তো একটা আর্ট, বন্ধের মধ্যেও অনেক প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে শুরু করেছে। সেভাবে বিকৃত বাংলা ভাষায় ধারাভাষ্য দেওয়া হচ্ছে। আপনি শুনেছেন কি না, জানা নেই...

আলফাজ : এটা সত্যি কথা আমি অস্বীকার করতে চাচ্ছি না। এখন বাংলা ভাষা ব্যবহার করে যেই ধারাভাষ্য দেওয়া হচ্ছে তাতে অনেক বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইংরেজি বাক্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এটা সত্যি কথা। আর এটা যে শঙ্কার তা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। যখন ধারাভাষ্যকারের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন অনেক ভালোর মধ্যে কিছু খারাপও চলে আসে। সবাই ভালো ধারাভাষ্যকার হবে, সেটা আশা করাও ঠিক না। 

আপনারা যেমন ইংরেজি ধারাভাষ্য দিতে বিদেশ থেকে ধারাভাষ্যকার নিয়ে আসছেন, তাহলে আপনি বাঙালি ধারাভাষ্যকার বিদেশ থেকে নিয়ে এসে ধারাভাষ্য প্রচার করেন। আমি সেটাতেও রাজি আছি। তবে বাংলা ধারাভাষ্য হতে হবে বাংলাদেশে, এটা হলো আমার কথা। ধারাভাষ্য দিতে গেলে কিছু মিশেল হবেই; তবে কোয়ালিটি জিনিসগুলোর কোয়ালিটি থাকবেই। 

প্রশ্ন : আপনি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা কমেন্ট্রিতে যুক্ত আছেন। ৪২ বছর ধরে। এ পর্যায়ে এসে আপনার কি মনে হয়, ইংরেজি কমেন্টি যেমন পেশা হিসেবে নেয় অনেকে, সে রকম কি বাংলা কমেন্ট্রি কেউ পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশে?

আলফাজ : মোটেই নেই। আপনি কী করে ভাবছেন? বাংলাদেশে ইংরেজি ধারাভাষ্যকার আছেন দুজন আতহার আলি খান ও শামীম আশরাফ চৌধুরী। এ ছাড়া যারা করেছেন তারা এসেছেন আর গেছেন। ইংরেজি ধারাভাষ্য দিলে একটা ম্যাচে তারা ৫০০ ডলার পান। আর আমরা ধারাভাষ্য করলে- আলফাজ উদ্দিন আহমেদ গত ৪২ বছর ধরে দেশের সবোচ্চ পর্যায়ে যার গ্রেডেশন, তিনি পান ১৫০০ টাকা। বাংলাদেশ বেতার থেকে এবং তার জন্য আমার ৮-১০ ঘণ্টা সময় দিতে হয়। তাহলে এই ১৫০০ টাকা যদি পাই আমি, মাসে কয়টা খেলা হয়। আর এটাকে আপনি জীবিকা হিসেবে নেবেন কীভাবে। কাজেই এটা হলো স্বপ্নের কথা। বাস্তবে এগুলো সম্ভব না। তবে হ্যাঁ, এর মধ্যেও কিন্তু এক-দুজন করছেন। আমি কুমার কল্যাণের কথা বলতে চাই। সে কিন্তু ধারা বর্ণনা ছাড়া আর কিছুই করে না। কিন্তু সে কি করছে সব জায়গায় সে ধারা বর্ণনা করে। এখানেও করে টাঙ্গাইলেও করে, নওগাঁতে গিয়েও করে, সাতক্ষীরাতেও করে অর্থাৎ সব পর্যায়েও সে ধারা বর্ণনা করে। সে ছুটে বেড়ায় অর্থাৎ যেখানে তাকে ১ হাজার টাকা অফার করা হয়, সেখানেই সে যায়। এভাবে কিন্তু ধারাভাষ্যকে পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব নয়। পেশা হিসেবে নিলে এটাকে অবশ্যই আগে নিশ্চিত করতে হবে, এটি একটি মর্যাদাসম্পন্ন পেশা, এবং তার জন্য অবশ্যই একটি মর্যাদাসম্পন্ন পেমেন্ট হওয়া উচিত। এই জায়গাতেই আমরা এটিকে মর্যাদাসম্পন্ন পেশা হিসেবে নিয়ে যেতে পারিনি। ৫০০ টাকা, ৭০০ টাকা, হাজার টাকা এই হলো পেমেন্ট। 

প্রশ্ন : এমনটা হলো কেন?

আলফাজ : মুখে শিল্প আমরা বলি। কিন্তু বাস্তবে সেই সম্মানটুকুও দেওয়া হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। অবশ্যই এই জায়গায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার রয়েছে। বাংলা ভাষাকে মযার্দা দেওয়ার বিষয়টা রয়েছে। আমরা সত্যি বলতে বাংলা ভাষাটাকে সে অর্থে মর্যাদা দিই না আসলে। মানসিকভাবে দিই না। মুখে মুখে সবাই বলি বাংলা ভাষা, বাংলা ভাষা, বাংলা ভাষা কিন্তু এর জন্য মূল্য দিতে আমরা কেউ প্রস্তুত না। সালাম-বরকত মূল্য দিয়ে গেছেন এই পর্যন্তই।

প্রশ্ন : এভাবেই কি চলবে তাহলে, আপনার কী মনে হয়।

আলফাজ : না এভাবে চলবে না। একটা সময় আসবে, বিবর্তন আসবে। ঠিক হবে আমার মনে হয়। আমি আশাবাদী মানুষ। আমি সব সময় বলি একটা সময় আসবে, কেউ না কেউ আসবে আপনারা দেখবেন এই জিনিসটাকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাবে। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এর জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত একটা মানুষ। আমি নিশ্চিত, একদিন আমাদের কথা তার কাছে পৌঁছাবে। আমি নিশ্চিত, আমরা ১৫০০ টাকা পাই তিনি জানেন না। তবে, এটা তার কাছে পৌঁছালে তিনি এটাকে ঠিক করে ফেলবেন। জানি, তিনি খেলা শোনেন। তিনি জাফরউল্লাহ শারাফতকে শোনেননি তা কিন্তু না। 

আমাদের ক্রিকেট বোর্ড বছরে একটা দিন তো আমাদের ডাকতে পারে। যারা খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন, যারা স্টেকহোল্ডার রয়েছেন, স্পন্সরদেরও। ডেকে বলা যায়, আমাদের জাতীয় দলের এই অবস্থা। আমাদের টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টেস্ট রয়েছে, এ ছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেট ও মেয়েদের ক্রিকেট রয়েছে। সবাইকে নিয়ে আমরা বসি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই। এ বছর আমরা এই এই টুর্নামেন্ট করব। আমরা এটা এটা করব। তা ছাড়া বিসিবির মালিক তো আসলে জনগণ। এখানে কত টাকা কোথা থেকে এলো। বছরে কত টাকা আয় হলো। এই বছর আমরা কত টাকা ব্যয় করব। তার একটা ধারণা তো দিতে পারেন। এটা এমন একটা প্রতিষ্ঠান, যার কোনো হিসাব নাই। ব্যর্থতার পর ব্যর্থতার সঙ্গে তারা জড়িয়ে রয়েছে। অথচ তাদের বলার পরও তাদের কোনো অ্যাকশন নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা