× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওরা ঠিকই পারে আর আমরা...

এম. এম. কায়সার

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৪ এএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১০:০৩ এএম

ওরা ঠিকই পারে আর আমরা...

ভুলটা কোথায় হলো?

সিরিজ হারার পর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে এখন বাংলাদেশ। 

তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে পিছিয়ে দল। এক ম্যাচ হাতে রেখেই আগেভাগেই সিরিজ জিতে নিল ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে ২০৯। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৯৪। সংখ্যা দুটো শুরুর দুই ম্যাচে বাংলাদেশের স্কোর। এই মামুলি সংগ্রহ নিয়ে আর যাই হোক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারানো যায় না।

যায়ওনি। প্রথম ম্যাচে উইকেটের সহায়তায় কিছুটা চ্যালেঞ্জ জানানো গেলেও ম্যাচ ঠিকই জিতল ইংল্যান্ড। মিরপুরের প্রায় অচেনা কন্ডিশন এবং উইকেটে যে কায়দায় তারা সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং করল তাতে মনে হচ্ছে জায়গাটা তাদের বাংলাদেশের চেয়ে বেশি চেনা!

দুই ম্যাচে ডেভিড মালান ও জ্যাসন রয়ের সেঞ্চুরির পর বলাবলি হচ্ছে এই উইকেটে তাদের বিপিএল এবং প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ খেলার অভিজ্ঞতাই এগিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো ডেভিড মালান দুটো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আর চারটা বিপিএলে খেলেছেন। জ্যাসন রয়েরও খানিকটা বিপিএল অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা যদি একটা করে সেঞ্চুরি করতে পারেন তাহলে ১০টা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং ৯টা বিপিএল খেলা সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের তো আরও বেশি করে সেঞ্চুরি করা উচিত! ডেভিড মালান ও জ্যাসন রয় পারলে আমাদের খেলোয়াড়রা পারে না কেন? অভিজ্ঞতায় তো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের চেয়েও অনেক অনেক এগিয়ে। আসলে পার্থক্যটা হলো যোগ্যতায়-সক্ষমতায়-দৃঢ়তায়। 

আর তাই জ্যাসন রয় সেঞ্চুরির ইনিংসের বর্ণনায় বলতে পারেন- ‘প্রথম ম্যাচে শুরুর দিকে আমি যে বাজে শট খেলে আউট হওয়ার পর নিজেই নিজেকে অনেক বকাবকি করলাম। বড় একটা ইনিংস খেলার সুযোগটা আমি নষ্ট করায় দুঃখ পেলাম। পরের ম্যাচে সেই ভুল যেন আর না করি, সেই পণ নিয়ে নামলাম। সেঞ্চুরিটা পেয়ে ভালো লাগছে।’

এই যে ভালো করার ইচ্ছে, এরই নাম দৃঢ়তা। কই এমন দৃঢ়তা তো বাংলাদেশের কারোর মধ্যে দেখা গেল না। 

সিরিজ হারা ম্যাচে ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোলিংকে দায়ী করছেন। কিন্তু দল যখন ২০৯ ও ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় সেখানে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স নিয়ে মুখরক্ষার উপায় কোথায়?

মূলত বাংলাদেশের সমস্যাটা ব্যাটিংয়ে। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে। দুই ম্যাচেই দলের ব্যাটিংয়ে ভুল হয়েছে। মানছি প্রথম ম্যাচে উইকেট ডিফিকাল্ট ছিল, তবে রান ডিফেন্ড করার মতো স্কোর তো অন্তত করতে হবে? ওপেনাররা ৩০, ৩৫ রান করে ফিরে আসছেন। এক ওপেনার সেট হতেই পারছেন না। আরেক ওপেনার সেট হয়েও আউট হয়ে ফিরছেন। মিডলঅর্ডারেও দলের সিনিয়রদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে এদের এখন একমাত্র লক্ষ্য আগামী বিশ্বকাপ দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখা। এজন্য দলের অবস্থা বা ম্যাচ পরিস্থিতি মুখ্য নয়, দরকার কেবল ব্যক্তিগত খাতায় কিছু রান! 

আফিফ হোসেন শেষ পাঁচ ম্যাচে চারবারই সিঙ্গেল ডিজিটে আউট। দলের সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনে আরও আত্মবিশ্বাসী, আরও দক্ষ ব্যাটার চাই। ইংল্যান্ড দলে মঈন আলি সাত নম্বরে খেলেন। মঈন শেষ ম্যাচে মাত্র ৩২ বলে ৪২ রান তুলেছেন। পরিস্থিতির দাবি তারা মেটাতে পারেন। আমরা পারি না। প্রথম ম্যাচেও কঠিন পরিস্থিতিতে মঈন আলি ১৪ রান করেছেন। কিন্তু ম্যাচের ওই কঠিন সময়ে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ ঠিকই গড়ে দিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের ৭ ও ৮ নম্বরে ব্যাট করতে আসা স্যাম কারানের স্ট্রাইক রেট ১৫০-এর ওপরে। তারা দুজনে মিলে ৫টি ছক্কা মেরেছেন। অন্যদিকে আমাদের ৭ ও ৮ নম্বর ব্যাটার মিলে হাঁকিয়েছেন মাত্র একটি ছক্কা। এই পজিশনের ব্যাটারের জন্য স্ট্রাইক রেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওই সময়ে তো আপনাকে একটু চার্জ করতেই হবে। এমন ব্যর্থতার কাহিনি ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। 

এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই তাসকিনের ব্যাটের নির্ভরতায় বাংলাদেশ একবার দুশো পেরোয়, আরেকবার দুশোর কাছাকাছি গিয়ে থামে। তাসকিন না থাকলে এই সঞ্চয় আরও মামুলি হতো। কিন্তু তাসকিনের মূল কাজ তো রান করা না। তিনি তো জান দিয়ে বল করবেন। করছেনও তাই। হেরে যাওয়া সিরিজে এখন পর্যন্ত একমাত্র শাইনিং লাইট তাসকিন আহমেদ। দলে আটজন ব্যাটার নিয়েও আপনাকে যদি রানের পুঁজি জোগাড়ে নিখাদ একজন বোলারের ওপর নির্ভর করতে হয় তাহলে এটা পরিষ্কার যে ব্যাটিং করা যাদের কাজ তারা পারছেন না।

ব্যাটাররা রানে না থাকার কারণেই কোনো কিছুতেই কিছু কাজে আসছে না। প্রথম ম্যাচে ২০৯ রান হলো। অথচ স্কোরটা ২৮০-ও হতে পারত। খুবই সম্ভব ছিল ২৮০ করা। ইংল্যান্ড যদি আগে ব্যাট করে ৩২৬ করতে পারে তাহলে আমরা কেন আগে ব্যাট করে নিজেদের মাঠে ২৮০ করতে পারব না। 

মিরপুরের উইকেটে ইংল্যান্ড ৩২৬ রান তুলেছে। বাস্তবতা হলো, বর্তমানে ওয়ানডেতে এটা আহামরি কোনো রান না যে আপনি চেজ করতে পারবেন না। কথায় কথায় কর্তাব্যক্তিরা স্বপ্ন দেখান বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এই যুগে ওয়ানডেতে এখন ওভারপ্রতি ৬ রানের টার্গেট যেকোনো দলই তাড়া করতে সক্ষম। সেই যুগে আপনি নিজের পরিচিত কন্ডিশন ও উইকেটে ৩০০ রান চেজ করার ক্ষমতা যদি না রাখেন তাহলে আপনি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কী করে?

গেল বছর ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে ভারত আমাদের বিরুদ্ধে ৪০৯ রান করল। ডাবল সেঞ্চুরি করলেন শুভমান গিল। জবাবে পুরো বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল মাত্র ১৮২ রানে। আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চান তবে অবশ্যই আপনার মধ্যেও চ্যাম্পিয়নদের সেই মানসিকতা থাকতে হবে। জয়ের জন্য জোরালো তাড়না বা চেষ্টার লক্ষণ তৈরি করতে হবে। আপনি পারেন আর না পারেন আপনাকে তো সেই চেষ্টাটুকু করতে হবে। প্রতিপক্ষকে যদি বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে আপনিও যেকোনো কঠিন টার্গেট তাড়া করে জিততে পারেন- তাহলে তাদের কাছ থেকে সেই সমীহটা আদায় করতে পারবেন। তাহলেই বোঝা যাবে টিম হিসেবে আপনার একটা শক্তি আছে। তবে প্রতিপক্ষ ৪০০ রান করার পর যদি মনে হয় আপনি ওখানেই শেষ, তাহলে তো এই ম্যাচ খেলার কোনো মানে হয় না। 

ওপেনার তামিম ইকবাল দুই ম্যাচেই শুরু পেয়েছেন। শুরু পেলে আপনাকে ইনিংস লম্বা করতেই হবে। ফিনিশার হয়ে ফিরতে হবে। শুরু পাওয়ার পর আপনি যদি এটাকে বড় না করেন তাহলে তো সমস্যা। তামিম ইকবাল আগে ৬০, ৭০ করতেন; এখন তিনি আটকে যাচ্ছেন ৩০, ৩৫-এ।

বোলিংয়ে মুস্তাফিজ ভারতের বিপক্ষে ভালো করেছিলেন। কিন্তু এই সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে ভীষণ ম্লান দেখাচ্ছে তাকে। এখনও উইকেটশূন্য এবং বড় খরুচে। মুস্তাফিজের কাছ থেকে টিম ম্যানেজমেন্টও কী চায়, সেটাও কিন্তু বড় বিষয়। প্রথম ম্যাচে তাকে বোলিংয়ে আনা হলো ২০ ওভারের সময়। আপনি যদি তাকে মূল বোলারই মনে করেন তাহলে তাকে এত দেরিতে কেন আক্রমণে আনবেন?

যুক্তি হতে পারে, পুরোনো বলে তিনি ভালো। তাই বলে তাকে নতুন বলে একেবারেই সুযোগ দেবেন না তা তো হয় না। 

ইংল্যান্ড বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তারা দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে কত দ্রুত পরিস্থিতি ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে সেই অনুযায়ী খেলতে হয়। সহজ কথা বাংলাদেশ এখন প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঠিক কোথায় আছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। এসব সমস্যার সমাধান যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল খুঁজে না পায় তাহলে বড় আসর বা বিশ্বকাপে আমরা কেবল স্বপ্নই বুনে যাব আর বাকিরা ট্রফি নিয়ে উল্লাস করবে। পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে আমরা শুধু হাততালি দিয়ে অন্যদের সেই উৎসবে অনেক দূরের অংশীদার হয়েই থাকব!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা