প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১১:০৬ এএম
স্পিনের জাদুকর না থেকেও আছেন। এখনও জাদু ছড়িয়ে যাচ্ছেন শেন ওয়ার্ন। ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছেন। সত্যিকারার্থে তার মোহনীয় ক্রিকেটীয় আবেদন কিছুতেই মুছে যাওয়ার নয়। খেলাপাগল দুনিয়ায় যতদিন ক্রিকেট টিকে থাকবে, যতদিন লেগস্পিনের জাদু নিয়ে চায়ের টেবিলে বিতর্ক চলবে; ততদিন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন অস্ট্রেলিয়ান এ ক্রিকেট কিংবদন্তি। ‘শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি’র মহানায়কের ঘূর্ণির মহিমায় মুগ্ধ হবে ক্রিকেটবিশ্ব।
শেন ওয়ার্নের মহাপ্রয়াণের এক বছর কেটে গেছে গতকাল। তারপরও ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে এখনও অমলিন ক্রিকেট ময়দানের এ শিল্পী। তার নিপুণ হাতের তুলিতে ক্রিকেট ময়দানে আঁকা হতো স্পিন-ভেলকির মনোমুগ্ধকর সব চিত্র। গত বছর ৪ মার্চ ক্রিকেট দুনিয়াকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশের বাসিন্দা হয়েছেন ওয়ার্ন। থাইল্যান্ডের কো সামুই দ্বীপে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। মানুষ ওয়ার্ন আর ঘরে ফিরতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেছিল তার নিথর দেহ। সেই থাই দ্বীপে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫২ বছর বয়সে চিরশান্তির ঘুমে চলে যান সবার প্রিয় ওয়ার্ন।
২২ গজের লড়াই আর শেন ওয়ার্ন যে সমার্থক। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, বাইরের লোকজনও সেটা বিশ্বাস করেন। কেননা প্রয়াত ওয়ার্ন ক্রিকেট ব্যতীত অন্য কিছু ভাবতেই পারতেন না। অবসরে চলে যাওয়ার পরও ক্রিকেটের প্রতি তার অসম্ভব টানটা অটুটই ছিল আগের মতো। বলা যায় মৃত্যুবার্ষিকীতে দারুণ এক শ্রদ্ধাঞ্জলি পেলেন ওয়ার্ন। ভারত সফরে প্রথম দুই টেস্টে হেরে পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল তার প্রিয় জন্মভূমি। অবশেষে তিন দিনেই ইন্দোর টেস্ট নিজেদের করে নিয়েছে। সেটা আবার তার মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন। এ জয়ে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি বাঁচানোর সম্ভাবনাটা জিইয়ে রাখল অজিরা। স্বর্গ থেকে অনুজদের বিজয় দেখে নিশ্চিত হেসেছেন ক্রিকেট লিজেন্ড ওয়ার্ন। স্পিনফাঁদে ফেলে এমন বিজয়ে তার চেয়ে বেশি খুশি আর কেইবা হতে পারেন!
কত রেকর্ড যে তার পায়ে চুম্বন খেয়েছে। তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে টেস্টে ৭০৮ উইকেটের এ মালিক কেবল মাঠের ক্রিকেটের জন্যই সংবাদের শিরোনাম হননি। মাঠের বাইরেও তিনি ছিলেন বেশ আলোচিত এক ব্যক্তিত্ব। ডোপ নিয়ে হয়েছিলেন নিষিদ্ধ। প্রেমের পাঠশালায়ও তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। ক্রিকেটের বর্ণিল এ চরিত্র যৌনজীবন নিয়েও ছিলেন বেশ খোলামেলা। অ্যালকোহলের বোতল ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। সাহসী বীরের বেশে হাসি-খুশিতে জীবনটা কাটিয়ে গেছেন। এমন হইহুল্লোড়প্রিয় মানুষটার পথচলা এত আগেই থেমে যাবে, কেইবা ভেবেছিলেন?
শেন ওয়ার্নের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু ১৯৯২ সালে। ভারতের বিপক্ষেই খেলেন অভিষেক টেস্ট। পরের বছর জায়গা করে নেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে। তারই পথ ধরে শুরু হয় তার স্পিনের জাদুর চিত্রনাট্য লেখা। কবজির মোচড়ে লেগস্টাম্পের বাইরের দিক দিয়েও প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের স্পিনবিষে নীল করে ছেড়েছেন কতশতবার। কখনও বল ব্যাটারদের পেছন দিক দিয়ে গিয়ে স্টাম্প ভেঙেছে। আবার ব্যাটারের সামনে দিয়ে ছোড়া তার দুরন্ত ডেলিভারি উড়িয়ে দিয়েছে অফস্টাম্প। তার সেই স্পিনজাদু আজও ক্রিকেটপাগল জনতাকে আগের মতোই সমানভাবে বিস্মিত করে! স্পিন গ্রেটের আবেদন কখনোই শেষ হওয়ার নয়!