প্রবা প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম
ফি বছর একটা করে বিশ্বকাপ। তাও দুটোর মাঝে দূরত্বটা ১২ মাসের হলেও হতো। দুটো ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপের মাঝে ফাঁকা সময়টা কেবলই ৮ মাসের। নিবিড়ভাবে একটা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার বিলাসিতার সুযোগ তাই নেই কোনো দলের সামনেই। যেটা অবধারিত, সে বাস্তবতাটা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আর সবার মতো বাংলাদেশও যেমন মেনে নিচ্ছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ যখন ৭ মাসের দূরত্বে, তখনই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দিতে হচ্ছে ১৫ মাস পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুর ঘোষণা।
২০২২ বিশ্বকাপে নিজেদের সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলেছিল সাকিব আল হাসানের দল। এরপর থেকে ওয়ানডে খেলেছে ৬টা, টেস্টও খেলেছে দুটো। তবে টি-টোয়েন্টির ঘরটা পড়ে ছিল শূন্যতেই। আজকের ম্যাচ দিয়ে ইতি ঘটছে সে শূন্যতার।
পরের বিশ্বকাপের যাত্রার শুরুটা হচ্ছে কোচ হাথুরুসিংহের হাত ধরে। টি-টোয়েন্টিতে এমনিতে উন্নতির জায়গা কম নয় দলের। তবে নতুন শুরুর আগে কোচ হাথুরুসিংহে বললেন প্রথম প্রেস কনফারেন্সের কথাটাই। জানালেন, আপাতত পর্যবেক্ষণই তার কাজ।
তার কথা, ‘২০২৪ বিশ্বকাপের পথে যাত্রার শুরু হলো আজ। এখন কাজটা হচ্ছে আমাদের কী আছে তা দেখার। এরপর কোথায় উন্নতি করা প্রয়োজন, কেমন গেমপ্ল্যান নিয়ে খেললে নিজেদের শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারটা করা যাবে সেটা ঠিক করতে হবে। তো এখন মাত্র শুরু।’
২০২৪ বিশ্বকাপের যাত্রার শুরুতে এর চেয়ে ভালো প্রতিপক্ষ পেতে পারত না বাংলাদেশ। ইংলিশরা যে এই ফরম্যাটেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য কখনোই দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলেনি বাংলাদেশ, এর বাইরেও দুই দল খেলেছে মোটে ১টি টি-টোয়েন্টিতে। টি-টোয়েন্টিতে দলটার ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’, সঙ্গে তাদের বিপক্ষে খুব বেশি না খেলার অভিজ্ঞতার মিশেলে দলের কাজটা কঠিনই বৈকি!
তাদের বিপক্ষেও অবশ্য পর্যবেক্ষণের মন্ত্রটা বদলে যাচ্ছে না বাংলাদেশ কোচের। লঙ্কান এই কোচের কথা, ‘আমাদের নিজেদের শক্তির ওপর ভর করেই খেলতে হবে। তারপর দেখব বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর আমাদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়।’
দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে শেষ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ বেশ কঠিন এক প্রতিপক্ষ, এমনকি সেটা প্রতিপক্ষ ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ ইংল্যান্ডের কাছেও। সে বিষয়টা টি-টোয়েন্টিতে একই রকম থাকে কি না, সেটাও হাথুরুর ‘পর্যবেক্ষণের’ বিষয়। তার কথা, ‘নিজেদের কন্ডিশনে আমরা তাদের চেয়ে ভালো কি না, তা দেখতে চাই। আমাদের সামনে খুব ভালো সুযোগ এটা দেখার যে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের স্কিল কেমন।’
তবে তাই বলে সিরিজটা খুইয়ে শিক্ষা নিতে চায় বাংলাদেশ, বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। কোচ বললেন, ‘সিরিজ জেতাটাই লক্ষ্য। আমি জাদুকর বা এমন কেউ নই যে ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারব। আমরা জেতার চেষ্টাটাই করব।’
প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড সাদা বলের দুই ফরম্যাটেরই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তবে তাই বলে দুটো ফরম্যাটে তাদের শক্তি-সামর্থ্য একই রকম মানতে নারাজ কোচ হাথুরু। তার চোখে ইংলিশরাও ২০২৪ বিশ্বকাপের জন্য দল গড়ছে, পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলবে না। তার অভিমত, বিশ্বকাপের দল গড়ার জন্য ইংলিশদের প্রক্রিয়াতেও নজর রাখছেন তিনি।
তবে সে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাংলাদেশের সামনে সম্ভাবনার দুয়ারটা আরও প্রশস্ত করে দিচ্ছে বৈকি! বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করে ইংলিশদের ‘ট্রায়াল অ্যান্ড ইরোর’প্রক্রিয়ায় হাঁটার মানে ‘ইরোরের’ সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া, আর ইংল্যান্ডের ‘ইরোর’ মানে যে বাংলাদেশের সুযোগটাও এক লাফে বেড়ে যাওয়া!
সঙ্গে যোগ করুন সাগরিকার উইকেটকেও। ওয়ানডে সিরিজে সবশেষ ম্যাচে খেলা হয়েছে যে উইকেটে, সেখানেই আজ মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটা। সেদিন ধীরগতির আর নিচু বাউন্সের উইকেটটায় ইংলিশদের বেশ ভুগিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
তবে মিরপুর আর সাগরিকার ধীরগতির উইকেটে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের পারফরম্যান্সেই বেশি সন্তুষ্ট মনে হলো কোচকে। হাথুরুসিংহে যেমন বললেন, ‘ফাস্ট বোলারদের পারফরম্যান্সে আমি মুগ্ধ। কন্ডিশন খুব বেশি সহায়তা করেনি, তবু তারা বেশ ভালো করেছে। তাদের নিয়মানুবর্তিতা, তাদের খেলাটা বোঝার ক্ষমতা... তাসকিন, এবাদতদের পারফরম্যান্স বেশি চোখে পড়েছে।’
হাথুরুর মনে ধরেছে ফিল্ডিংও, এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দলও করতে চাইলেন দলকে। সঙ্গে দলে নতুন ডাক পাওয়া তৌহিদ হৃদয়, ৮ বছর পর ফেরা রনি তালুকদারদেরও দিলেন হারানোর ভয়ে না ভড়কে গিয়ে প্রাণ খুলে খেলার লাইসেন্স। তাতে মিলল দীর্ঘমেয়াদে একটা প্রক্রিয়া দাঁড় করানোর আভাস, ২০২৪ বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স ছাপিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। তার শুরুটায় জয় মিললে সঙ্গে যোগ হবে বাড়তি আত্মবিশ্বাসও। কোচ হাথুরু নিশ্চয়ই সেটাই চাইবেন!