‘বিশ্বকাপ’, ‘বিশ্বকাপ’, ‘বিশ্বকাপ’! বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এই শব্দ। অন্য সব মিশন আছে বহাল তবিয়তে, তবে ভিশনটা থাকছে ‘বিশ্বকাপ আর তার প্রস্তুতি’-তে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজেও সেটা বদলাল না। ‘পরীক্ষা’র মঞ্চে আয়ারল্যান্ড সিরিজটা বাংলাদেশ শুরু করেছে একগাদা রেকর্ড গড়ে। সিলেটে প্রথম ওয়ানডেতে আইরিশদের হারিয়েছে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। রান সঞ্চয় এবং ম্যাচ জয়ের ব্যবধান- দুটো জুড়েই নতুন রেকর্ড।
ব্যাটিং উইকেটে নিজেদের শক্তি যাচাইয়ের আক্ষেপটা শেষ অনেক দিন ধরেই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আক্ষেপ ঘুচল। এই মাঠে সবশেষ তিন ম্যাচেই যে ৩০০ রান ছুঁয়েছিল দল! কাল তাও ছাড়িয়ে গেল। গড়ল ৩৩৮ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগেরটা ছিল ৩৩৩, ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৯ বিশ্বকাপে।
আরও পড়ুন: সিলেট ওয়ানডেতে যত রেকর্ড
শুরুতে অবশ্য সিলেট স্টেডিয়ামের উইকেট কিছুটা বেয়াড়া আচরণ করছিল। হঠাৎই লাফিয়ে উঠছিল বল, কখনও ব্যাটে আসছিল নিচু হয়ে। শুরুতে তামিম ইকবাল, এরপর লিটন দাস, আর বিশ ওভারের আগেই নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায় নেন।
কোচ হাথুরুসিংহে অবশ্য আগেই বলে দিয়েছিলেন, উইকেটটা ব্যাট আর বলের দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চই বানিয়ে রেখেছে। সাকিব আল হাসান আর তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে ফুটে উঠল সেটাই। সাকিবের জায়গাটা পাঁচ কিংবা ছয়ে, কথাটা ইংল্যান্ড সিরিজের সংবাদ সম্মেলনে বলে গিয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম। তবে তার ঠিক পরের ম্যাচেই সাকিবকে দেখা যায় চারে। নাজমুল হোসেনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন তৌহিদ হৃদয়, ১৪০তম খেলোয়াড় হিসেবে কালই অভিষেক হয়েছে যার। ম্যাচের আগে গতকাল তাকে অভিষেকের ক্যাপটা তুলে দিয়েছিলেন যিনি, সেই মুশফিককে ঠেলে দেওয়া হয় তার ‘কমফোর্ট জোন’-এর বাইরে, ছয় নম্বর পজিশনে।
তবে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা দারুণ কাজেই দিয়েছে বাংলাদেশের জন্য। সবাই নিজ নিজ জায়গায় যেমন পারফর্ম করেছেন, তাতে কোচ হাথুরুর কাছ থেকে লেটার মার্কসই পাবেন। সাকিব-হৃদয়রা ইনিংস শেষ করেছেন আক্ষেপ নিয়ে, দারুণ খেলেও যে তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি!
সাকিব এদিন ছুঁয়েছেন সাত হাজার ওয়ানডে রানের মাইলফলক, হৃদয় গড়েছেন অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের কীর্তি। দুজন মিলে ১২৫ বলে গড়েছেন ১৩৫ রানের জুটি। বড় রানের ভিতটা গড়া ওতেই।
পরের কাজটা মুশফিককে নিয়ে সেরেছেন হৃদয়। সাকিবের বিদায়ের পর মুশফিকের সঙ্গে ৪৯ বলে ৮০ রানের জুটি গড়েন। বড় রানের ভিতে নিজেদের রেকর্ড পেরিয়ে যাওয়া রানের পথও দেখানো হয়ে যায় তাতে। সাকিব-হৃদয় তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি যেমন, মুশফিকও তেমনি পাননি ৫০-এর দেখা। তবে তাদের বিদায়ের পর তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ দুজনেরই ৭ বলে ১১, আর ইয়াসির আলীর ১০ বলে ১৭ রানে ৩৩৮ রানের পাহাড় দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
শুরুর অর্ধে ব্যাটাররা আলো ছড়িয়েছেন, দ্বিতীয়ার্ধে আলোটা কেড়ে নেন বোলাররা। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। দশ ওভার পেরিয়ে গেলেও মিলছিল না উইকেটের দেখা। এই সময়ে রানটা প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল আয়ারল্যান্ডের; তবে যে দলে ৯ জনের আছে নিয়মিত ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসানোর অভিজ্ঞতা, সে দলের বিপক্ষে শঙ্কাটা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না!
সেই মুহূর্তে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটের দেখা পাইয়ে দেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে দলকে দিশা দেওয়ার পর বল হাতেও একই ভূমিকায় নামেন তিনি। ওপেনার স্টিফেন ডোহেনিকে ফেরান উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়ে। একটু পর এবাদত হোসেনের শিকার হয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার পল স্টার্লিং।
এরপর আইরিশ শিবিরে নিয়মিতই আঘাত হেনেছেন এবাদত, তাসকিনরা। বিনা উইকেটে ৬০ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই সফরকারীদের স্কোরকার্ডটা দাঁড়ায় ৭৬/৫। মাঝে একটা জুটি গড়ে ওঠে কার্টিস ক্যাম্ফার আর জর্জ ডকরেলের হাত ধরে। তবে দলীয় ১০৯ রানে ক্যাম্ফারের বিদায়ে ভাঙে সে জুটি। এরপর নাসুম আহমেদ আর এবাদতের তোপে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খুইয়েছে আয়ারল্যান্ড। শেষ ব্যাটার হিসেবে ডকরেলকে আউট করতেই এসে ধরা দেয় ১৮৩ রানের বিশাল জয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ রানের জয়ও।
এই জয়ের আলোর নিচেও আঁধারের খেলা আছে খানিকটা। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটা যে ভালো হয়নি মোটেও! মিসফিল্ডিং হয়েছে দেদার, ক্যাচও পড়েছে হাত গলে। তবে ভুলচুক সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মঞ্চেই হয়ে গেলে ভালো। তাতে যে মূল পরীক্ষার মঞ্চে লেটার মার্কস পাওয়ার সম্ভাবনাটাও বেড়ে যায়!
রেকর্ডের কনফেত্তি উড়িয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের ১-০’র দাপুটে লিড।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.