পার্থ রায়
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১০:২১ এএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম
সম্ভাবনা জাগিয়ে আবির্ভাব বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়মিত রীতি। ধূমকেতুর মতো হুট করে হারানোটাও নিয়মিতই চোখে পড়ে। হাসান মাহমুদের পথটাও সেটা ছিল। পারফরম্যান্স নয়, অজানা এক ইনজুরি তাকে ক্রিকেট থেকে একঘরে করে রাখে। এর আগে সম্ভাবনার ফুলঝুরি ফুটিয়ে তিনিও এসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ইনজুরি বিরতির পর জাতীয় দলের দরজা খুললে পুরোনো রূপে দেখা মেলে হাসান মাহমুদের। যার ঝলক কিছুটা দেখেছেন গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা। তৃতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে একাই ধসিয়ে দেন। ৩২ রানে তার শিকার ৫ উইকেট। এটা তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারও।
আরও পড়ুন : পেস-উৎসবের এক ম্যাচ
হাসানের অভিষেকের পর সাবেক বোলিং কোচ ওটিস গিবসন তার মধ্যে খুঁজে পান সম্ভাবনার ঝলক। এমনকি সবচেয়ে ‘সম্ভাবনাময়ী’ পেসার হিসেবেও উল্লেখ করেন। তবে ‘সুখের সময়’টা দীর্ঘ হয়নি হাসানের। ২০২১ সালে তিন ম্যাচ খেলে কোমরের নিচের ইনজুরি তাকে ছিটকে দেয়। একের পর এক চিকিৎসার পরও জানা যায়নি তার ইনজুরির কারণ। দীর্ঘ এক বছর পর ২০২২-এর শুরুতে জানা যায় স্পাইনাল কর্ডের চিড়। লন্ডনের চিকিৎসক তাকে সুখবরই দেন। চিড় সেরেছে, বোলিংয়ে ফিরতে পারবেন। মোহামেডানের জার্সিতে মাঠে ফিরে ৭ ম্যাচে ৪.৬৬ ইকোনমি আর ৪৫.৩৩ গড়ে তার শিকার ছিল ৬ উইকেট।
আরও পড়ুন : মেসির গোলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জয়
তবুও ‘সম্ভাবনাময়ী’ তকমায় ফের জাতীয় দলে ডাক মেলে। সেখান থেকে শুরু। ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ ছাড়া আর বাংলাদেশের কোনো সিরিজ মিস করেননি। তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমানদের দারুণ ছন্দে তার জায়গা পাওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে। সর্বশেষ বিপিএলের পারফরম্যান্সে তাকে আর উপেক্ষা করা যায়নি। রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে ১৪ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার। ইংলিশদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে একাদশে জায়গা না মিললেও টি-টোয়েন্টিতে খেলেন। দলের আস্থা ছিল ওয়ানডেতেও। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বৃষ্টি বাধায় বোলিং করতে না পারলেও তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে জ্বলে ওঠেন।
নিজেদের তৃতীয় ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের বল কিছুটা সুইং করলে স্টিফেন দোহেনির ব্যাটে লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে। আইরিশদের পরের দুই ব্যাটার পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টরকেও চোখের পলকে ফিরিয়ে দেন। একই ওভারে দুই ব্যাটারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। প্রথম স্পেলে ৬ ওভার বোলিং করে ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন। দ্বিতীয় স্পেলে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন হাসান। দ্বিতীয় স্পেলে করেছেন মাত্র ১৩ বল। মাত্র ৯ রান দিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে ওঠা কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফিরিয়ে দেন। শেষ জুটিতে ক্রিজে থাকা গ্রাহাম হিউমকে আউট করে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। শুধু ফাইফার নয়, ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারের দেখাও পান। হাসানের নেওয়া পাঁচ উইকেটের তিনটিই ছিল লেগ বিফোরের মাধ্যমে। এমনকি তিনবারের দুইবারই রিভিউ আবেদন নিয়ে উইকেট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। বাকি লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার সরাসরি আঙুল তুলে দিলেও সন্দেহ ছিল আইরিশদের মনে। রিভিউতে অবশ্য মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকল। ঠিক লেন্থে একের পর এক বল করে যাওয়ায় বারবারই হাসানের বলে খেই হারান আইরিশরা। তার পাঁচ উইকেটের তিনটিই এসেছে লেগ বিফোরের মাধ্যমে। হাসানের করা ৪৯ বলের মধ্যে মাত্র ১৪ বল থেকে রান তুলতে পেরেছেন আইরিশ ব্যাটাররা।
গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫টি ডট বল দেন হাসান। কোটার পুরো ১০ ওভার বোলিং শেষে তাসকিন দেন সর্বোচ্চ ৪৫ ডট। আইরিশদের খেলা ২৮ ওভারের মধ্যে ২৪টি ওভারই করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। শুধু তাই নয়, আইরিশদের সবগুলো উইকেটই শিকার করেছেন পেসাররা। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি পেসাররা এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের সবগুলো উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব দেখালেন।
হাসানের দারুণ বোলিংয়ের পর তার পুরোনো কথাটাই ভেসে ওঠে, ‘৫০০ উইকেট অবশ্যই।’ সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজের কাজ করে যাওয়ার প্রতিজ্ঞাটা। সেটা করতে পেরেছেন বলেই বোধহয় সাফল্যটা সহজে পেয়েছেন। তার বলে আইরিশরা বাউন্ডারি হাঁকালেও চাপ নেননি। উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে উল্টো চাপে ফেলেছেন। এমন মানসিকতাই হয়তো হাসানের সাফল্যের গোপন রহস্য।