প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১১:২১ এএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৮ পিএম
সিলেটে প্রথম ওয়ানডেটা তখনও মাঠে গড়ায়নি। তাসকিন আহমেদের ফেসবুক পাতায় প্রকাশ পেল একটা ছবি। কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে পাঁচ পেসার। বাঁ থেকে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন, কোচ ডোনাল্ড, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ আর এবাদত হোসেন দাঁড়িয়ে হাসিমুখে। সে ছবির ক্যাপশনে তাসকিন লিখলেন, ‘বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট’, সঙ্গে জুড়ে দিলেন একটা আগুনের ইমোজি। তাসকিন কি আসন্ন সিরিজে পেসারদের আধিপত্যের পূর্বাভাসটাই দিচ্ছিলেন সে ছবির ক্যাপশনে?
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও আলো ছড়িয়েছিলেন পেসাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির দৌরাত্ম্যে সুযোগটাই তো এলো না! তৃতীয় ওয়ানডেতে আলোর পুরোটাই কেড়ে নিলেন। বাংলাদেশ বোলিংয়ের ৮৫ শতাংশ ওভারেই আক্রমণে দেখা গিয়েছে পেসারদের। কেন? দশ উইকেটের দশটিই যে নিয়েছেন পেসাররা। অধিনায়ককে তাদের আক্রমণ থেকে সরানোর সুযোগটা দিলেন কোথায়?
আরও পড়ুন : হাসানের কাছেই হারল আয়ারল্যান্ড!
সিরিজের শুরুর ম্যাচটা সাইডবেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয় ম্যাচে দলে ফেরেন বটে, কিন্তু বৃষ্টি তাকে বলটা হাতে তুলে নিতে দিল কই? সে ঝালটাই যেন মেটালেন সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে। সিলেটে যে গতকাল পেস-উৎসব করল বাংলাদেশ, তার শুরুটা যে হয়েছিল তার হাত ধরেই!
উইকেটে গুড লেন্থের কাছে খানিকটা ঘাসের ছোঁয়া ছিল। হাসান কাজে লাগালেন সেটাকেই। অফ স্টাম্পের বাইরের ‘করিডোর অব আনসার্টেইন্টি’তে বল করে যাচ্ছিলেন, তারই একটাতে খোঁচা মেরে বসলেন স্টেফেন দোহেনি। সেই স্পেলেই পল স্টার্লিং আর হ্যারি টেক্টরকে ফেরালেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে।
শুরুর ধাক্কাটা দেওয়ার কাজটা সেরে দিয়েছিলেন হাসান। এরপর তার সঙ্গী হন তাসকিন আহমেদ। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে ফিরিয়ে যোগ দেন পেস-উৎসবে। এরপর একটা জুটি গড়ে উঠেছিল আয়ারল্যান্ডের। কিন্তু এবাদত হোসেনের তোপে টিকল না সেটা। ইনিংসের বয়স যখন ২০ ওভার ছুঁয়ে ফেলছিল, তখন উইকেট থেকে ল্যাটেরাল মুভমেন্টটা কমে যাচ্ছিল খানিকটা। তাই এবাদত শরণাপন্ন হন ‘টো-ক্রাশার’ ইয়র্কারের। তাতেই বিনাশ লরকান টাকারের। পরের বলে জর্জ ডকরেলেরও হলো একই দশা। অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রায়ান আর মার্ক অ্যাডায়ারকে এরপর ফেরানোর কাজটা সারেন তাসকিন আহমেদ।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গতকাল পেস-উৎসবের শুরুটা হয়েছিল হাসানের হাত ধরে। শেষটাও হলো তারই হাতে। প্রথমে কার্টিস ক্যাম্ফার, এরপর গ্রাহাম হিউমকে ফিরিয়ে আইরিশ ইনিংসের যবনিকা যখন টানছেন, বাংলাদেশের একটা রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে তখন। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের কোনোটিতেই কখনও ১০ উইকেটের সবকটি পেসাররা দখলে নিতে পারেননি, সে আক্ষেপটা গতকাল ঘোচান হাসান-তাসকিন-এবাদতরা। হাসানের ঝুলিতে জমা পড়েছে ৫ উইকেট, দেশের মাটিতে মাত্র অষ্টমবারের মতো কোনো পেসার পান ফাইফারের দেখা। বড় জয়ই যে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, সেটা তো নিশ্চিত হয়ে গেছে তখনই!
কোচ অ্যালান ডোনাল্ড আগের দিনই সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, পেস আক্রমণ ভালো করলেও কিছু জায়গায় কাজ করা এখনও বাকি। যেমন ধরুন, ডেথ ওভারের বোলিং, পুরোনো বলে রিভার্স সুইংয়ের কাজ প্রয়োজন আরও।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন দুই প্রান্ত থেকেই আসে নতুন বল, ফলে পুরোনো হতে সময় নেয় বেশ, রিভার্স সুইং পেতে পেতে ৪০ ওভারের মতো সময় লেগে যায়। কাল পেসাররা আইরিশদের শেষ করে দিয়েছেন তারও বহু আগে। অনুশীলনে শেখানো সব কৌশল মাঠে বাজিয়ে দেখার সুযোগটা হলো না, এ আফসোসের চেয়ে তৃপ্তিটাই বেশি হওয়ার কথা কোচ ডোনাল্ডের। সুযোগটা যে হারিয়ে গেছে, সেটা তো তার শিষ্যদের কীর্তিতেই!