শান্ত রিমন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩ ২০:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৯ পিএম
২০১৪ সাল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সদ্য পা রাখা এক তরুণ মাঠে নেমেই জানান দিলেন মুখ বুজে অন্যায় সহ্য করতে তিনি আসেননি। এসেছেন সারা বিশ্বে মুসলিমদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। আইসিসি ও ইংল্যান্ড বোর্ডের কঠিন রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার শুরু। ওভাল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে পঞ্চম ম্যাচে মাঠে নামলেন হাতে বিশেষ এক রিস্টব্যান্ড পরে। যাতে লেখা ‘সেভ গাজা’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’। মুহূর্তেই হইচই পড়ে গেল গোটা বিশ্বে। সমালোচনায় ইংলিশ মিডিয়াসহ সাধারণ মানুষ। সেই সমালোচনায় বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই তার। বরং বিশ্বনেতাদের কাছে প্যালেস্টাইনের মানুষদের কথা তুলে ধরাতেই তৃপ্ত তিনি। তবে আজও আক্ষেপ, প্যালেস্টাইন মুক্ত না হওয়া। বলছিলাম ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলির কথা। আধুনিক ক্রিকেটে মুসলিমদের প্রতিবাদী এক কণ্ঠস্বর তিনি।
ইংল্যান্ডে সহজে কিছুই মেলে না মুসলিমদের। সেটা তিনি বুঝেছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সেই। দ্য গার্ডিয়ানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সে সব কথায় জানিয়েছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মঈন। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় একবার হুট করে একজন এসে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। আমি খুব ফর্সা ছিলাম। তবুও কেন সে এমন করল সে উত্তর আমি আজও পায়নি।’
আরও পড়ুন : ছন্দে থাকা মরক্কোর সামনে তারুণ্যনির্ভর ব্রাজিল
মুসলিমদের নিয়ে ইংলিশ মিডিয়া ও দেশটির সাধারণ মানুষের ধারণা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মঈন বলেন, ‘ইসলামকে নিয়ে মিডিয়াতে নেতিবাচকতা রয়েছে। আমি আশা করছি যখন লোকেরা আমার ও অন্য মুসলমানদের দিকে তাকাবে এবং ভাববে, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তারা খুব একটা খারাপ নয়। আমি অনলাইন মন্তব্যগুলোর নিয়মিত পাঠক নই। লোকেরা এখনও প্রশ্ন করে যে আমি ইংরেজ কি না। আমি এটাকে খুব বোকা মনে করি। আমার এখনও অনেক কাজ করা বাকি আছে।’
ওয়েস্টমিনস্টার, ম্যানচেস্টার এবং ফিনসবারি পার্ক মসজিদের বাইরে হামলার বিষয় নিয়ে মঈনের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যখন এটি একটি মুসলিম করে তখন সে হয় ‘সন্ত্রাসী’। কিন্তু সে যদি মুসলিম না হয় তখন ওই লোক হয়ে যায় একজন মানসিকভাবে অসুস্থ। সে একাকী নেকড়ে।’ কাজেই তারা যত বেশি চেষ্টা করবে এবং আমাদের ছিটকে দেবে ততই আমরা মুসলিম হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হব। মুসলমান হিসেবে আমরা আরেকটু খোলাসা করব নিজেদের।’ইসলামকে নিয়ে মিডিয়াতে নেতিবাচকতা রয়েছে। আমি আশা করছি যখন লোকেরা আমার ও অন্য মুসলমানদের দিকে তাকাবে এবং ভাববে, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তারা খুব একটা খারাপ নয়। আমি অনলাইন মন্তব্যগুলোর নিয়মিত পাঠক নই। লোকেরা এখনও প্রশ্ন করে যে আমি ইংরেজ কি না। আমি এটাকে খুব বোকা মনে করি। আমার এখনও অনেক কাজ করা বাকি আছে।
ইসলামকে নিয়ে মিডিয়াতে নেতিবাচকতা রয়েছে। আমি আশা করছি যখন লোকেরা আমার ও অন্য মুসলমানদের দিকে তাকাবে এবং ভাববে, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তারা খুব একটা খারাপ নয়। আমি অনলাইন মন্তব্যগুলোর নিয়মিত পাঠক নই। লোকেরা এখনও প্রশ্ন করে যে আমি ইংরেজ কি না। আমি এটাকে খুব বোকা মনে করি। আমার এখনও অনেক কাজ করা বাকি আছে।
ফিনসবারি পার্কের ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদের সংযম নিয়ে মঈন বলেন, ‘যে আক্রমণ করতে এসেছিল, সবাই ওই লোকটিকে মারতে চেয়েছিল। কিন্তু ইমাম তাদের সহিংসতা থেকে বিরত রেখেছেন। ঠিক এটাই ইসলাম। এটি থেকে ইতিবাচক কিছু বেরিয়ে এসেছে এটি দুর্দান্ত ছিল।’
ভারতের বিপক্ষে টেস্টে বিশেষ সেই রিস্টব্যান্ড বিতর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল মানবিক। আমি এটার জন্য সত্যিই আনন্দিত যে এটি ঘটাতে পেরেছিলাম। আমি ম্যাচ চলাকালীন সময় সেগুলো লাগিয়েছিলাম। ওই ঘটনার পর মানুষ শান্ত হয়েছে কিন্তু গাজায় এখনও দুর্ভোগ চলছে। অনেক মুসলিম ও অমুসলিম দেশে দুর্ভোগ রয়েছে। আমরা মহাকাশে যেতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করি। কিন্তু মানুষের দেখাশোনা করতে পারি না। এটা মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার। আমরা আমাদের রঙ, বিশ্বাস বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে একে অপরকে অনেক সময় হতাশ করেছি। আমাদের উচিত রাজনৈতিক এজেন্ডা ছাড়াই মানুষকে সাহায্য করা। এটা করা উচিত সমবেদনা থেকে, দ্বিধা ছাড়াই।’
ব্যক্তিজীবনে ধর্মের কঠোর রীতি মেনে চলেন মঈন। নবি-রসুলদের জীবনের রোল মডেল মেনে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানে রোজা পালনের চেষ্টায় ত্রুটি করেন না তিনি। সময় পেলেই হজ পালন করেন। হজ নিয়ে তিনি বলেন, হজ মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার পাশাপাশি তার চরিত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। হজের সময় সবাই একইরকম শুভ্র পোশাকে আবৃত হয়, যেখানে ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ থাকে না।’
মঈন বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের সিলেটের মেয়ে ফিরোজা হোসাইনকে। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ক্রিকেটের বাইরে সুখের সংসার মঈনের।