নেয়ামত উল্লাহ
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৬ এএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৪ এএম
শেষ একটা বছর ব্যাট হাতে দারুণ সময়ই কাটিয়েছেন লিটন দাস। তবে চলতি বছরের শুরুতেই যেন তার ব্যাটে লেগেছিল রাহুর গ্রহণ। ইংল্যান্ড সিরিজে বড় রান পাননি শুরুর পাঁচ ম্যাচে। পেলেন শেষ ম্যাচে এসে। ইংলিশদের বিপক্ষে যে ছন্দের দেখাটা পেয়েছিলেন লিটন, সেটা নিয়েই আয়ারল্যান্ড সিরিজে এসে ধারণ করলেন আরও ভয়ংকর রূপ, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই যে সিরিজ জিতে গেছে বাংলাদেশ, সেটা তো তার ব্যাটে ভর করেই!
সোমবার সিরিজের শুরুর ম্যাচে বাংলাদেশ গড়েছিল একগাদা রেকর্ড। তারই একটা টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি রান। প্রথম ওয়ানডেতে ওপেনিং সঙ্গী রনি তালুকদারকে নিয়ে তিনি দারুণ এক জুটিই গড়েছিলেন। পাওয়ার প্লেতেই চলে এসেছিল ৮১ রান। ২৩ বলে ৪৭ রান করে লিটন তাতে রেখেছিলেন বিশাল ভূমিকাই। তবে ৩৮ বলে ৬৭ রান করা রনি তালুকদারই কেড়ে নিয়েছিলেন আলোর পুরোটা। তাতে অবশ্য লাভ হয়েছিল বাংলাদেশেরই। ১৯.২ ওভারে তুলে ফেলেছিল ২০৭ রান। বৃষ্টির বাগড়ার পরও বাংলাদেশকে ২২ রানের বড় ব্যবধানে জেতাতে ভূমিকা রেখেছিল যা।
আরও পড়ুন : লিটন-সাকিবের রেকর্ডে সিরিজ জয়ের হাসি
প্রথম ম্যাচটা লিটন যেখানে শেষ করেছিলেন, দ্বিতীয় ম্যাচে যেন একই জায়গা থেকে শুরু করলেন! বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ আর পাওয়ার প্লের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে এসেছিল, না হয় পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটা এক দিন পরই ভেঙে বসত বাংলাদেশ।
রেকর্ড ভাঙা না হলেও লিটন নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন এদিন। আগের ম্যাচের স্কোর তো বটেই, নিজের ব্যক্তিগত সেরা রানটাও টপকে গেলেন। পথে করলেন বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির কীর্তি, মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৬ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে! এই ফিফটির আগে ডট খেলেননি একটা বলও। যে কারণেই মূলত বাংলাদেশের রানের চাকা থমকে যায়নি কখনোই।
সেঞ্চুরিটা শেষমেশ হয়নি, লিটন থেমে গেছেন ৮৩ রানে। তাতে খানিকটা আফসোস যে আছে লিটনের, তা আর বলতে! তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে তিন অঙ্ক ছোঁয়া, তামিমকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটাও যে ছিল তার সামনে! লিটনের আফসোসটা খুব বেশি নয়। সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ভালো লাগছে, তবে সেঞ্চুরি পেলে আরও ভালো লাগত।’
তবে সেঞ্চুরি না পেলেও তার এই ইনিংস বাংলাদেশের বড় রানের ভিতটা ঠিকই গড়ে দিয়েছিল। বৃষ্টির বাগড়ায় ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচেও বাংলাদেশ করেছে ২০২ রান। লিটন যখন ঝড়ো শুরুটা এনে দিয়েছিলেন দলকে, তখনই অবশ্য ২০০ ছাড়ানো ইনিংসটা নিয়তি হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। লিটন হাসলেই যে হাসে বাংলাদেশ! দল টি-টোয়েন্টিতে যে পাঁচবার ২০০ ছুঁয়েছে, তার প্রতিবারই যে লিটন নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ যে ২১৪ রান তাড়া করে জিতেছিল, ১৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংসে তার শুরুটা তো তিনিই করে দিয়েছিলেন! এরপর ২০১৮ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে ২১১ রান করা ম্যাচে ৩৪ বলে ৬০, ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০ ছোঁয়া ম্যাচে ৩৯ বলে ৫৯ কিংবা সবশেষ ম্যাচে ২৩ বলে ৪৭, সবকটিতেই যে লিটনের উপস্থিতি ছিল সরব।
বাংলাদেশ যে টি-টোয়েন্টিতে বদলে গেছে রীতিমতো, তাতে বড় অবদান তারও আছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন, এখন চান সেটার ধারাবাহিকতাটাই। কারণ তার ব্যাট হাসলেই যে হাসে বাংলাদেশ!