প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৫৩ এএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৫৭ এএম
সিরিজ নিশ্চিত ছিল আগেই। শেষ টি-টোয়েন্টিটা তাই বাংলাদেশের জন্য ছিল হোয়াইটওয়াশের মঞ্চ। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় তা আর হলো কই! শুরুতে ব্যাট করে সব উইকেট খুইয়ে তুলল মোটে ১২৪। সাগরিকার পাটা উইকেটে ম্যাচটা তো শেষ তখনই! বোলিংয়ে হয়নি কোনো ‘মিরাকল’, পল স্টার্লিংয়ের ঝড়ে আইরিশরা পায় ৭ উইকেটের বিশাল জয়। ইংল্যান্ড সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়ের পর আয়ারল্যান্ড সিরিজে এবার বাংলাদেশকে সন্তুষ্ট থাকতে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়েই।
আরও পড়ুন : আইপিএলের শুরুটা জয়ে রাঙাল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট
আরও পড়ুন : টিভির পর্দায় ম্যানসিটি-লিভারপুল লড়াই
হার কী, চলতি বছর সেটা যেন ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। যে ফরম্যাটে পথচলাটাই কঠিন ছিল দলের, সেই টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে একটা-দুটো নয়, টানা তিন ম্যাচে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করা; এরপর আয়ারল্যান্ডকে প্রত্যাশিতভাবেই এক ম্যাচ হাতে সিরিজ হারানো। সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশকে তাতে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্যই ঠেকছিল।
উড়তে থাকা বাংলাদেশের মন্ত্র ছিল আগাগোড়া আক্রমণাত্মক ক্রিকেট। শেষ ম্যাচেও সে মন্ত্রটা বদলায়নি। বদলে গেল পরিকল্পনার ‘এক্সিকিউশন’টা। আগের দুই ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণে আইরিশ বোলিংকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার লিটন দাস আর রনি তালুকদার। চেয়েছিলেন গতকাল তৃতীয় ম্যাচেও। কিন্তু দুজনেই পড়ে গেলেন ল অব অ্যাভারেজের কাটায়।
দ্বিতীয় ওভারের শুরুতে মার্ক অ্যাডায়ার বলটা করেছিলেন অফস্টাম্পের অনেক বাইরে। আগের ম্যাচে একটা ছক্কা প্রায় একই লাইন থেকে মেরেছিলেন লিটন। চাইলেন কালকের ম্যাচেও, কিন্তু হলো না। ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ দিলেন জর্জ ডকরেলকে।
পরের ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তর ইনিংসের ইতিও ঘটল সেই ডিপেই, শুধু বদলে গেল জায়গাটা। হ্যারি টেকটরের বলে তিনি ক্যাচ তুললেন ডিপ মিড উইকেটে কার্টিস ক্যাম্ফারের হাতে। এরপর পালা এলো রনি তালুকদারের, তিনিও ক্যাচ তুললেন ডিপ মিড উইকেটেই।
সাকিবের ইনিংসের ইতিও ঘটল সেই ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলেই। মার্ক অ্যাডায়ারের বলে তিনি যখন বেন হোয়াইটকে ক্যাচ তুলে দিলেন, ছয় ওভার তখনও শেষ হয়নি। বাংলাদেশ ইনিংসের অর্ধেকের কাছাকাছি শেষ তখনই! ম্যাচটা বাঁচাতে হলে এরপর তাওহিদ হৃদয়, শামীম পাটোয়ারীদের অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হতো।
হৃদয় ফিরলেন দ্রুতই। পাওয়ার প্লের পরের ওভারেই বেন হোয়াইটকে সীমানাছাড়া করতে চেয়েছিলেন, বিদায় নিলেন সেই ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েই।
এদিন বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন এনেছিল একটি, মেহেদি হাসান মিরাজের বদলে অভিষেক হয়েছিল লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের। তাতে দলে স্বীকৃত ব্যাটারের সংখ্যা নেমে আসে কার্যত ৬-এ। অতি আক্রমণাত্মক এই সিদ্ধান্তে এক ব্যাটারের কমতি বাংলাদেশকে যেন ভুগিয়েছে বেশ। স্বীকৃতদের ৫ জনই যখন পাওয়ার প্লের একটু পরই সাজঘরমুখো হবেন, তখন তা হওয়ারই ছিল। শামীম লড়লেন বটে, কিন্তু ওপাশে দেখেছেন সঙ্গীর আসা-যাওয়া। তার প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি তাই বাংলাদেশের মানটাই বাঁচাতে পেরেছে, লড়াকু পুঁজি এনে দিতে পারেনি। ৪২ বলে ৫১ রান করে তিনি যখন ফিরছেন শেষ ব্যাটার হিসেবে, বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তখন জমা পড়েছে মোটে ১২৪ রান।
ওয়ানডে সিরিজে আইরিশদের দুবার একশর ঘরে অলআউট করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও বেঁধে রেখেছিল ১২৫ রানে। এই ম্যাচেও তেমন কিছুর আশা তাই অমূলক কিছু ছিল না। কিন্তু পল স্টার্লিং আর তা হতে দিলেন কই! ওপাশে তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামদের তোপে আইরিশরা উইকেট খুইয়েছে বটে, কিন্তু স্টার্লিং ছিলেন বলে সফরকারীরা পথটা খোয়ায়নি। ৪১ বলে ৭৭ করা আইরিশ অধিনায়ককে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক উইকেটের খাতাটা যখন খুললেন রিশাদ হোসেন, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। আইরিশরা শেষমেশ ৭ উইকেটের বিশাল জয় নিয়েই শেষ করেছে ম্যাচটা। ১৫ বছর, দুটো আলাদা সফর আর ৯ ম্যাচ পর বাংলাদেশের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে পায় প্রথম জয়টা। বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশটা রয়ে যায় অধরা।
যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে এতদিন উড়েছে বাংলাদেশ, সে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই হলো এবার ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের কারণ।