বিশ্লেষণ
নাজমুল আবেদীন ফাহিম
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৩ ০৮:৪৫ এএম
আপডেট : ১৪ মে ২০২৩ ০৯:১০ এএম
অভিজ্ঞতা বলে যে কথাটি আছে সেটি আরেকবার প্রমাণ করে দেখিয়েছে মুশফিকুর রহিম। টেলএন্ডারদের সঙ্গী হিসেবে নিয়ে যে দুর্দান্তভাবে ম্যাচটা শেষ করল, তা এককথায় অসাধারণ! মাঠের চারদিকে শটস খেলার সক্ষমতাও এখন বিশেষ কিছু। প্রায়ই সে এটি করে আসছে। মন থেকে একটা কৃতজ্ঞতা তার জন্য- ধন্যবাদ মুশি!
আরও পড়ুন : সব সমালোচনাকে ‘শান্ত-মেজাজে’ জয়!
দুই তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের ১৩১ রানের পার্টনারশিপকে আলাদা করে বলতে হয়। তারা লড়াইয়ে যে ভয়ডরহীন মানসিকতা দেখিয়েছে তা অবিশ্বাস্য এবং অবশ্যই পরিতৃপ্তির। শান্ত আবারও দেখিয়েছে যে সে ইনিংস পুনর্গঠন এবং দীর্ঘ সময় ব্যাট করার ক্ষমতা রাখে। এটি অন্যদের হাত খুলে খেলতে এবং প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে দারুণভাবে সহায়তা করে।
তাওহিদ একদম নিজের খেলাটাই খেলেছে। তামিম, সাকিব এবং লিটন- তিন টপ অর্ডার ব্যাটার যে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছে সেটি তার ব্যাটিংয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। ম্যাচের পুরো দৃশ্যপট পড়ে ফেলেছিল সে। এবং সেভাবেই পরিকল্পনামাফিক ব্যাটিং করেছে। রান করার তাড়া ছিল, তাওহিদের মাঝে ফুটে উঠেছিল আইরিশ বোলারদের প্রভাব বিস্তার করার ইচ্ছা। যেটা সিরিজের প্রথম ম্যাচে ছিল না। তাওহিদ ও শান্ত, দুজনেই ম্যাচে প্রভাবী ও প্রতাপী ইনিংস খেলেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শান্ত যদি আরেকটু বেশি সময় উইকেটে থাকত, তাহলে আইরিশদের কোনো রকমের সুযোগও তৈরি হতো না। আগামীতে শান্তর এটাই প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। ম্যাচ শেষ করে তবেই ফেরা। শান্ত-হৃদয়ের ১৩১ রানের পার্টনারশিপ অসাধারণ ছিল। হিসাবি ক্রিকেটের জন্য দুজনকেই অসংখ্য ধন্যবাদ।
মুশি, শান্ত ও হৃদয়কে ধন্যবাদ
মিরাজ এত দেরিতে কেন বোলিংয়ে?
তামিমের রানে ফেরাটা অতি জরুরি
বড় টুর্নামেন্টের অপেক্ষায় সম্ভবত সাকিব
মুস্তাফিজ ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে তা আমি জানি না
আরেকজনের কথা বলতে হয়- মিরাজ, বাংলাদেশ দলে সে এখন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অথচ তাকে ব্যাট করতে হয় সাত নম্বরে। নিচের দিকের চারজন টেলএন্ডার হয় তার সঙ্গী- এটা কিছুটা বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না। ফিল্ডিংয়ের সময় এটা ভাবতে ভালো লাগে যে আমাদের ছয়জন স্পেশালিস্ট বোলার আছে, কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় আসে ভিন্ন চিন্তা। মিরাজকে সাত নম্বরে স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে ব্যাটিংয়ে পাঠানো খুব একটা সুখকর কিছু মনে হচ্ছে না। ওখানের এক্সট্রা প্রেসার তার ব্যাটিংয়ে বাজে প্রভাব ফেলবে।
অধিনায়ক বা কোচের পক্ষে মাত্র পাঁচজন বোলার নিয়ে একাদশ দেওয়াও অনেক কঠিন। সম্ভবত সেই কারণে বোলারদের দিক বিবেচনা করেই দল দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যাটিংয়ে কিন্তু ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আমি চাই, সাত নম্বরে অল্পস্বল্প বোলিং পারে এমন একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার খেলুক। আট নম্বরে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে থাকবে মেহেদি মিরাজ। আমি বিশ্বাস করি, সেটা হলে মিরাজ নিজেকে আরও মেলে ধরতে পারবে।
আমাদের পেসাররা দুর্দান্ত করছে। কিন্তু তারা সবাই ভিন্ন পরিস্থিতি কিংবা কন্ডিশনে সব সময় কার্যকর না। হাসান মাহমুদ এবং এবাদত নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানে কিন্তু তরুণ শরিফুল এখনও সুদৃঢ় নয়। এই সময়টায় মুস্তাফিজ ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে তা আমি জানি না। বোলিংয়ে তাসকিন যোগ দিলে আরও শক্তিশালী হবে দল। তবে অবশ্যই আমাদের রিজার্ভ বোলারদের যত্ন নিতে হবে। সেক্ষেত্রে রোটেশননীতি বজায় রাখতে হবে যাতে সবাই প্রস্তুত এবং ফিট থাকে।
স্পিনারদের আরও বেশি সহায়তা করতে হবে পেসারদের, বিশেষ করে এমন কন্ডিশনে স্পিনারদের সাহায্য অনেক জরুরি। স্পিন কোচ অবশ্যই এটা নিয়ে পরিকল্পনা এবং কৌশল দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে আরও যোগ্য করে প্রস্তুত করেছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু স্পিনারদের এভারেজ টাইপের পারফরম্যান্স এবং বোলিং পরিবর্তন খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। ইনিংসের মাঝখানে না এনে কেন মিরাজকে একেবারে শেষের দিকের ওভারে বোলিংয়ে আনা হলো সেটা আমার কাছে রহস্যই থেকে গেল!
তামিমকে খুব দ্রুত ফর্মে ফিরতে হবে। এটা শুধু দলকে বড় স্কোর গড়তে নয়, অধিনায়ক হিসেবে তার প্রাণশক্তি আরও বাড়িয়ে দিতেও কার্যকর হবে। তার রানে ফেরা দলের জন্য অতি জরুরি।
সাকিব সম্ভবত বড় টুর্নামেন্টের অপেক্ষা করছে। তাকে ঠিকঠাক মনে হচ্ছে, কিন্তু ভালো শুরুর পরও সে সেই ভালোটা ছুড়ে দিয়ে আসছে। তার এটা মাথায় রাখতে হবে যে চার নম্বরে ব্যাটিং করার মানে তোমাকে পার্টনারশিপ করতে হবে। শান্তর পর ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি তার হতে পারত এবং তাতে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস সাকিব পেতে পারত। আমরা জানি, সে সব সময় সেরা হয়েই থাকতে চায়। খুশির খবর হচ্ছে ব্যাটিংয়ে ফর্মে ফিরেছে সাকিব। যেকোনো দিন সাকিবের ব্যাটে বড় ইনিংস দেখতে পাব।
বিদেশের মাটিতে এমন কন্ডিশনে ম্যাচ জেতাটা অবশ্যই ইতিবাচক কিছু। এমন জয়ের পর দলের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে থাকবে। খেলোয়াড়দের এটাই সঠিক সময় নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করার, ফর্মে ফেরার এবং আসন্ন টুর্নামেন্ট ও বিশ্বকাপের জন্য সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে নেওয়ার।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আজ আরও দারুণ কিছু দেখার অপেক্ষায়।
লেখক : ক্রিকেট উপদেষ্টা- বিকেএসপি, মেন্টর ও ক্রিকেট বিশ্লেষক।