× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তামিমের অধিনায়কত্ব টিকচিহ্ন পাচ্ছে

ইয়াসেফ ইমরোজ ইফাজ

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩ ১০:৩০ এএম

আপডেট : ১৮ মে ২০২৩ ১১:৩১ এএম

তামিমের অধিনায়কত্ব টিকচিহ্ন পাচ্ছে

অধিনায়ক ও অধিনায়কত্ব নিয়ে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের বিখ্যাত একটা উক্তি আছে ‘একজন অধিনায়ককে অবশ্যই প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তার সিদ্ধান্তের ফলে দলের ওপর প্রভাব কী হবে তা জানার আগেই এবং তাকে অবশ্যই নিজের সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে। তবে তার সিদ্ধান্ত সঠিক বা ভুল হবে কি না তার ওপর নির্ভর করে নয়, বরং তার সিদ্ধান্তের ফল দলের সফলতা আনতে পারবে কি নাসেই বিবেচনা তার কাছে প্রাধান্য পাবে।’

গ্রেট খেলোয়াড়রা দলের বাকি সদস্যদের চেয়ে খেলার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একটু আগেভাগে। খেলার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো অন্যদের চেয়ে একটু আগে বুঝতে ও পড়তে পারেন তারা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন গ্রেট খেলোয়াড় কি দলের অধিনায়ক হতে পারেন?

দলের একজন অধিনায়ক একজন নেতাও বটে; তাকে খুবই স্বল্প সময়ে মাঠে কঠিন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অধিনায়ককে হতে হবে নিঃস্বার্থ, হিসাবি, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, শান্ত ও ধীরস্থির, কিন্তু দৃঢ়চিত্তের এবং বেশিরভাগ সময় মাঠে খেলতে হবে উদাহরণযোগ্য ক্যাপ্টেনস নক উপহার দিয়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দলের জন্য মঙ্গলকর সবকিছু করতে হবে। সবাইকে দিতে হবে দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা। তবে সব ছাপিয়ে অবশ্যই তার নেতৃত্বে খেলায় ভালো ফল হবে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রত্যাশিত প্রাপ্তি।

আরও পড়ুন: 

ক্রিকেট মাঠে বিভিন্ন অধিনায়ক দল পরিচালনায় ভিন্ন ভিন্ন উপায় ও কৌশল অবলম্বন করেছেন, এখনও করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। উদাহরণ হিসেবে ইমরান খান, ক্লাইভ লয়েড ও স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্ব উল্লেখযোগ্য। তারা সবাই সফল অধিনায়ক ছিলেন। তবে তারা সবাই ছিলেন আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। দলের কঠিনতম পরিস্থিতি সামলে কীভাবে সবাইকে উজ্জীবিত করে এক সুতায় গেঁথে দলের জন্য সেরা সাফল্য আনা যায়সেই অর্জনে তারা ছিলেন এক ও অভিন্ন। তারা তা করে দেখিয়েছেনও বটে। তাই তারা ক্রিকেট খেলার ইতিহাসে অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে এখনও সম্মানিত, সমাদৃত। 

’৯৯ বিশ্বকাপের সময় স্টিভ ওয়াহর সেই উক্তি এখনও মনে আছে অনেকের নিশ্চয়ই‘তুমি শুধু ক্যাচ না বিশ্বকাপটাও হাত থেকে ছেড়ে দিলে’ (You just dropped the World Cup)। ক্রিকেট মাঠে একজন অধিনায়ক কতটা সাহসী, বুদ্ধিমান, আত্মবিশ্বাসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হলে এমন সাহসী মন্তব্য করতে পারেন! ক্রিকেট খেলাকে বলা হয় গেম অব মার্জিনস অ্যান্ড গ্রেটেস্ট অব লেভেলারস। যারা উচ্চপর্যায়ে খেলেন তারা সবাই জানেন তিনি বা তার দলের খেলায় উঁচু থেকে নিচে নামতে খুব সময় লাগে না। কারণ, অনিশ্চিত এ খেলায় যেকোনো সময় পরিস্থিতি পাল্টে উভয় দলকেই সমান্তরাল ভূমিতে নিয়ে আসতে পারে।

 অধিনায়ককে হতে হবে নিঃস্বার্থ, হিসাবি, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, শান্ত ও ধীরস্থির, কিন্তু দৃঢ়চিত্তের এবং বেশিরভাগ সময় মাঠে খেলতে হবে উদাহরণযোগ্য ক্যাপ্টেনস নক উপহার দিয়ে

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যখন পরিস্থিতি অনুকূলে নয়, দলের খেলোয়াড়দের মনোবল সবচেয়ে নিম্নে; ক্যারিশম্যাটিক অধিনায়ককে তখন নিশ্চিত করতে হয়— যাতে তার দলের সবাই এই প্রতিকূল অবস্থায়ও অধিনায়কের ওপর আস্থা রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে এবং তাদের ক্ষমতার সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করে ম্যাচের মোড় নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে আনতে পারে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে একজন আদর্শ অধিনায়কেরও একই বৈশিষ্ট্য থাকা কাম্য। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, বর্তমানে আমাদের অধিনায়ক তামিম ইকবাল আপাতদৃষ্টিতে সেই পরিচিত তামিম হিসেবে ব্যাট হাতে নিজেকে তুলে ধরতে পারছেন না এবং আমরা তার কাছ থেকে সেরাটা পাচ্ছি না। তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, তুলনামূলক বিশ্লেষণে অনেক সময়ই তিনি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন অনেকের বিশ্লেষণে, সমালোচনায়। তবে ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান অর্জনের জন্য মাশরাফি বিন মর্তুজা যে উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, তামিম সেটি কতটা দুর্দান্তভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তামিম এখনও ব্যাটিং গড়ে সবার ওপরে এবং অধিনায়ক হিসেবেও অত্যন্ত সফল। অনেকগুলো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয় ও সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বিশ্বকাপে সরাসরি যোগ্যতা অর্জনে তামিম ইকবালের অবদান অনস্বীকার্য। 

তামিম তার একগুচ্ছ খেলোয়াড়কে একই বৃন্তে গাঁথায় সচেষ্ট ও সফল। এই দল ভালো কিছু করার সামর্থ্য রাখে এবং সেটা অর্জনে ড্রেসিংরুমের সুন্দর পরিবেশের জন্য অতিরিক্ত মনোনিবেশেও তিনি সচেষ্ট ও আন্তরিক। 

বাংলাদেশ এখন ফাস্ট বোলার দিয়ে দল গঠন ও আগ্রাসী আক্রমণে বিশ্বাসী। তারা দলের গঠন ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে মাঠে আক্রমণাত্মক মানসিকতায় বিশ্বাসী। আমরা সবকিছুর জন্য কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেট বোর্ডকে কৃতিত্ব দিতে পারি। তবে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে রাখতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে, মাঠে থাকা নেতৃত্বের সেই লোকটির ওপর যিনি সব প্রক্রিয়ার যত্ন নেওয়ার জন্য যথাযথ কৃতিত্ব পাওয়ার দাবিদার। ভালো নেতৃত্বের প্রভাব ছাড়া ক্রিকেট মাঠে সবকিছুই ম্যাজিকের মতো হয় এই ভাবনা বড়ই ভুল।

আমরা ২০২৩ বিশ্বকাপের কাছাকাছি চলে এসেছি। এই বিশ্বকাপের জন্য আমাদের দলও কিন্তু পেয়ে গেছি। কিছুটা ফাইন-টিউন প্রয়োজন আছে, সামনের সিরিজগুলোতে সেই সমাধানও মিলে যাবে। যারা তামিমের নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারাচ্ছিলেন তারা এখন মুখ লুকাবেন। আমি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলতে চাই, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নতুন অধিনায়কের প্রয়োজন নেই। তামিমের হাতেই থাকা উচিত অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড।

 অধিনায়কত্বের ভূমিকায় এমন একজন চৌকস ব্যক্তিত্বসম্পন্ন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন। মুখস্থ করা বিদ্যা নিয়ে মাঠে হাজির হওয়া অধিনায়ক কখনও আদর্শ হতে পারেন না।

বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে এখন বড় কোনো সংকটও নেই। যা প্রয়োজন তা হলো এই দলের ওপর সমর্থন রাখা। তাদের ওপর আস্থা রাখা। এরাই পারবে। এরাই জেতাবে।

অধিনায়কত্ব অবশ্যই কেতলিতে রাখা চা ঢেলে খেয়ে ফেলার মতো সহজ কিছু নয়। সবাই অধিনায়কত্বের উত্তাপ সইতেও পারে না। ব্রায়ান লারা ও শচীন টেন্ডুলকার এই যুগের সেরা খেলোয়াড়। মাঠের ক্রিকেটের প্রায় সবকিছুতেই সফল হয়েছেন তারা। কিন্তু অধিনায়ক হতে পারলেন কই? বিখ্যাত খেলোয়াড় অনেকেই হন, কিন্তু অসাধারণ অধিনায়ক হন খুবই হাতেগোনা কজন। মনে রাখতে হবে, একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় অবশ্যই সব সময় একজন ভালো অধিনায়ক হন না। প্রতি ম্যাচে অধিনায়কত্বের জন্য সব সময় সেঞ্চুরি বা পাঁচ উইকেটের প্রয়োজন হয় না সেটা আমাদের জানা। অধিনায়কত্বের ভূমিকায় এমন একজন চৌকস ব্যক্তিত্বসম্পন্ন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন, যিনি সব কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন সাবলীলভাবে। সব কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন দৃঢ়চিত্তে। আউট অব দ্য বক্স চিন্তা করা এবং সেটার প্রয়োগ করার সাহস দেখাতে হয় তাকে। মুখস্থ করা বিদ্যা নিয়ে মাঠে হাজির হওয়া অধিনায়ক কখনও আদর্শ হতে পারেন না।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে তামিমের হাফসেঞ্চুরির ইনিংস দেখে মনে হতেই পারে, তিনি সূর্যালোকের রশ্মি খুঁজে পেয়েছেন। ২৪ ম্যাচে ১৫ জয়, ৮ হার এবং একটি ম্যাচ পরিত্যক্তওয়ানডে সুপার লিগের এই পর্যালোচনা জানাচ্ছে তামিমের নেতৃত্ব দারুণভাবে সফল। তবে এই অর্জনের পরেও বলব হ্যাঁ, তামিমকে অবশ্যই আমরা ব্যাট হাতে পুরোনো সেই রূপে দুর্দান্তভাবে ফিরে পেতে চাই। ব্যাট হাতে তার ফর্মের যত ঊর্ধ্বগতি হবে এবং সেটা যতটা তাড়াতাড়ি হবে; ততই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বয়ে আনবে সুফল ও মঙ্গল।

বিদেশের মাটিতে আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশ ও তামিমকে অভিনন্দন!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা